জীবনটা পাপে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। এমনটা কখনো লাগেনি আমার। এতোটা তাপ অনুতাপ কিছুই অনুভব করিনি কখনো। কেনো যেনো আজকে মনটা নিজের উপর অনেক রাগ, অভিমান, ক্ষোভ নিয়ে দরখাস্ত লিখেছে। আমি গেরান্টি দিয়ে বলতে পারি। যে কোন মেয়ে একবার কথা বললে, আমাকে ভূলাটা তার কঠিন হয়ে পড়বে। আর কিছু থাক বা না থাক মুখ ভর্তি মিষ্টি কথা আছে। সহজেই মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে সক্ষম। প্রথম কথাতেই নিজের মানুষ ভেবে পটানোটা আমার অভ্যাস।
জুইয়ের সুইসাইড নোটটা আমাকে ভীষণ রকমের ভাবাচ্ছে। কখনো ভাবতেই পারিনি মেয়েটা আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। ওপাড়ে রোজ তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। তোমাকে তো বলেছিলাম তুমি শুরু তুমি শেষ। জীবনে যেনো আর কারো ছোঁয়া না আসে , সেজন্যই অজানায় পাড়ি দিলাম। হৃদয়ের জায়গাটা তোমার ছিলো তোমারই থাকবে। তোমার কাছে শেষ আবদার। যদি কখনো মনে পড়ে। আমার কবরে ফুল দিয়ো।
শেষ এই বাক্যগুলো আমার চোঁখের ঘুম কেড়ে নিছে।
জুইয়ের সাথে প্রথম কথা হয় মেসেজার গ্রুপে। প্রথমেই আমার কথার মায়ায় পড়ে যায়। প্রথম আট দশ দিন নিজের গুনগুলো ওর সামনে তুলে ধরি নানা কৌশলে । ওর স্বপ্ন সম্পর্কে জানতে শুরু করি। তারপর সেগুলোর বাস্তব উদাহরণ দিয়ে নিজের প্রতি আসক্ত করি।কথার ছলে আম্মুর ছোট ছেলের বউয়ের রুপ দেই। আমার কথাগুলোর মায়ায় পড়ে যখন বিশ্বাস ও আস্থা রাখতে শুরু করে। তার কিছুদিন যেতে না যেতেই প্রপোজ করে বসি। কথা দিয়ে এতোটাই ইমোশনাল ব্লাকমেল করি যে আমাকে আর ফিরিয়ে দিতে পারে না। এবার আমার দেখানো স্বপ্নগুলো কল্পনায় বাস্তবিক রুপ দিতে থাকে।
জুই নিজেকে আমাদের পরিবারের একজন ভাবতে শুরু করে। আমি একজন আদর্শ স্বামীর মতই ব্যবহার করতে থাকি। সব সময় ওর খুশিগুলোকে প্রাধান্য দিতে থাকি। মাঝে মাঝে জুইকে অনেক জোর করে বসি। চলো কোর্ট ম্যারিজ করে ফেলি। এভাবে আর তোমাকে ছাড়া ভালো লাগে না। যদি বিয়েটা করতেই হয়। তাহলে লেট করে তোমাকে দূরে রাখার কোনো প্রশ্নই আসে না।
এমনটা শোনার পর ভিজে একদম ক্ষীর হয়ে যায়। সময় পেলেই আমার দুজনে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যে কার্যকলাপগুলো হয়ে থাকে। সেগুলোই করতে থাকি।
বেশ অনেকদিন কেটে গেলো। ইন্টার পাশ করতেই ওর বাসা থেকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগলো। এখন জুই আমাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে লাগলো। কিন্তু কথা হচ্ছে আমি কি বিয়ে করবো?
মুখে মধু অন্তরে বিশ, পোলা আমি ওয়ান পিচ। এটাই আমার বৈশিষ্ট্য। প্রায় শতাধিক প্রেম করা হয়েছে আমার। চরম ভাবে স্বপ্ন দেখিয়ে নির্মমভাবে ছেড়ে দেওয়াটাই আমার অভ্যাস। আমি জুইকে নানা ভাবে ইগনোর করতে থাকি। প্রথমে ওর প্রতি আকর্ষণটা বেশি থাকলেও এখন আর কাজ করে না। ওর যখন বিয়ে ঠিক হয়েছিল। তখন ও আমার পায়ে ধরে অনেক কেঁদে ছিল। অনেক বার বলেছিল ও আমাকে ছাড়া বাঁচবে না। সেদিন ওর মনের কথাগুলো বুঝিনি।
জুইয়ের মৃত্যুটা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে। আমার জীবনে জুইকে কতটা প্রয়োজন ছিল। এখন মাঝ রাতে চোখ থেকে অঝোরে বৃষ্টি নামতে থাকে। মাঝে মাঝে মেঘগুলো পাশে এসে এমন কালো রুপ ধারণ করে। তখন আর পৃথিবীটা ভালো লাগে না। মনে হয় জুই আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। একটা কষ্টই আমার ভিতরটা তিলে তিলে পোড়াচ্ছে। দিনে দিনে শেষটার দিকেই এগুতো লাগলাম। বাঁচাটা ভীষণ দায় হয়ে পড়ছে। সময় পেলেই জুইয়ের পছন্দ করা ফুল নিয়ে কবরের পাশেই বসে থাকি। জুইকে ডেকে বাবর বার বলি। আমি এখনোই তোমার আছি। বেশি দিন বাকি নেই। আমিও আসতেছি তোমার কাছে।
মাকে একদিন জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম। মা আমার মৃত্যু হলে। জুইয়ের কবরের পাশেই করব দিয়ো। আমি ওর পাশ থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে ওর ঘুমিয়ে থাকাটা দেখবো। আর ওর জেগে উঠার অপেক্ষায় থাকবো। মা আমার কথাগুলো শুনে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। বোবার মতো জল ফেলতে লাগে।
কিছু দিন যেতেই রুমন তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। দীর্ঘ আট বছর কবরের পাশেই ঘুমিয়ে থেকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। জুইয়ের পাশেই রুমনকে সমাহিত করা হয়।