1. admin@ichchashakti.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪১ অপরাহ্ন

ডাকুলা ভূতের বিয়ে  — আল আমিন সাজ্জাদ 

  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২৮২ বার পঠিত

ডাকুলা ভূতের বিয়ে 

আল আমিন সাজ্জাদ 

 

ডাকুলাদের জন্ম হয় আজব ভাবে।

জন্ম রহস্যটা একেবারেই কৌতুহলপূর্ণ।  এরা মায়ের পেটে জন্ম নেয় না। এদের জন্ম হয় বাবার পেটে। যখন একটা ডাকুলা প্রাপ্ত বয়ষ্ক হয়।  তখন তার বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। স্বামীকে কাঁঠাল গাছের উপর উঠিয়ে বউকে বলা হয়।  স্বামীকে কোলে করে নিচে নামিয়ে আনতে। বউ গাছে উঠে স্বামীকে নিচে নামিয়ে এনে জোরে সোরে আছাড় দেওয়ার রীতিটাও রয়েছে এদের মধ্যে । ডাকুলা মেয়েরা গায়ের সমস্ত জোর খাটিয়ে আছাড় মারে। আছাড়ের সময় পেটে বাচ্চাও ধারণ হয়। শুধু তাই নয়, কতগুলো বাচ্চা হবে সেটারো গননা বাছনা হয়ে যায়।  পেটে ধারণ করা বাচ্চাগুলো ভিতর থেকে কথা বলতে থাকে।  প্রতি বছর বৈশাখ মাসের ১ থেকে ৭ তারিখের মধ্যে একটা করে বাচ্চা মুখ দিয়ে বের হয়।

 

হরর ডাকুলার ছেলে করর ডাকুলার বিয়ের বয়স হয়েছে। ছেলেটা ভয়ে ডগমগ। করর ডাকুলা তার মামাতো ভাইয়ের বিয়েতে গিয়েছিল। বউয়ের আছাড় খেয়ে মামাতো ভাই আর দুনিয়ার আলো দেখতে পায় নি। সাথে সাথেই মারা গেছে। সবাই বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়, বিয়েটাও ঠিক করা হয়। করর ডাকুলা বিয়ের আগের দিন রাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। সকালে উঠে সবাই কররকে খুঁজতে লাগল।  নাহ্ কোথাও করর নেই।  করর সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড় হয়ে উন্ডা পর্বতের গুহায় গিয়ে লুকিয়ে থাকে ।

 

উন্ডা পর্বতে  বাস করে কিরল বোম্বারা।  তারা নাকি ভূতও না পেতও না। অন্য এক ধরনের জাত। কিরল বোম্বার ছোট নাতির জ্বর হয়েছে। পিকটম্যাও (তাদের কবিরাজ) ডাকা হল। পিকট নাতির গায়ে হাত দিয়ে বলে, এই জ্বর সহজে সারবে না। যদি ডাকুলার রক্ত দিয়ে গোসল করানো যায়। তাবেই হয়তো সারতে পারে। কিরল বোম্বা পড়ে গেল মহাবিপদে। এখন ডাকুলা কই পাই।বিভিন্ন জায়গায় খবর পাঠানো হলো। একটা ডাকুলা ধরে দিতে পারলে ৭০ টা গরু পুরক্ষার দেওয়া হবে।কোথাও ডাকুলা পাওয়া গেল না। অবশেষে নাতিটা মারাই গেল।

হঠাৎ করে আজকে কেমন যেন গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। পর্বতের চারিদিক খোঁজ করা হলো। অনেক খোঁজাখোঁজির পর পর্বতের গুহার ভিতরে করর ডাকুলাকে পাওয়া গেল। সর্দার তো দেখেই রাগে ফায়ার। দাঁত কিরমির করতে লাগল। শালা আমার নাতি মারা গেল তোদের রক্তের অভাবে। আর তুই এখন আসছস।

-ঐ কাঁচা মরিচ নিয়ে আয়।

-কেন সর্দার?

ওরে ভর্তা বানাইয়া খামু।

করর তো ভয়ে কালো হয়ে গেল । আজকে জীবন শেষ। জীবন বাঁচানোর জন্য পালিয়ে আসলাম।আর এখন ভর্তা হয়ে বোম্বাদের পেটে যেতে হচ্ছে,হায়রে কপাল। মরবো যখন বীরের মতো যুদ্ধ করেই মরবো।

 

পিছনে একটা বাচ্চা বোম্বা এসে বলতেছে।  মা আমি এটার কলিজা বাইট্টা খামু। মা বলে,না বাবা এটার মন্ডু অনেক মজা। চলো দুইজনে মন্ডু খাবো। কথাটা শুনার সাথে সাথেই করর ভয়ে প্রসাব করে অনেকটুকু জায়গা ভাসিয়ে ফেলল। একটা বোম্বা এসে লাল রঙ্গের পানি দেখে  খেতে শুরু করে। তার দেখাদেখি বাকিরাও খেতে লাগল। সবাইকে ব্যস্ত দেখে খানিকটা সুযোগ পেয়ে করর পালিয়ে গেল। পালিয়ে আর যাবে কোথায়। ডাকুলাদের হাতেই আবার ধরা পড়ে যায়। বাড়িতে নিয়ে এসে কররের বিয়ের আয়োজন করা হলো। করর না পারতেছে বলতে না পারতেছে পালাতে।  মনের দুঃখে গলা ফাটিয়ে কাঁদতে লাগল। তার মনে একটাই ভয় এই বিয়েটাই বুঝি তার জীবন নিয়ে যাবে।

 

কররকে গাছের মগ ডালে বসানো হলো। মামাতো ভাইয়ের কথা মনে হতেই জ্ঞান হারিয়ে যায়। নতুন বউ কররকে গাছ থেকে নামিয়ে শরীরের সমস্ত জোর খাটিয়ে আছাড় মারে। আছাড় খেয়ে কররের হুশ ফিরে আসে। চোখ খুলতেই শুনতে পায় তার ১০০ খানা বাচ্চা হবে। দুঃখের আর সীমা রইলো না। বাচ্চা জন্ম দিতে দিতেই জীবন শেষ। প্রথম বাচ্চা প্রসবের সময় হয়ে আসে। করর জ্বালা যন্ত্রণায় লাফালাফি করতে লাগল। তার অবস্থা দেখে কররের বাবা আর তার বউ বিটল গাছের সাথে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে। অনেক কষ্টের পর একটা বাচ্চা বের হয়। এমন মোটা বাচ্চা হলো যে, বাচ্চা বের হওয়ার সময় তার মুখের হা অনেক বড় হয়ে যায়।  মুখ চাপালেও ফাঁকা চাপে না।

 

একদিন করর ডাকুলা ভ্রমনে বেরিয়ে পড়ে। ভ্রমনের স্থান হিসেবে বেছে নেয় বাংলাদেশকে। সুন্দরবন সহ নানা বন ঘুরতে থাকে। ঘুরতে ঘুরতে কখন যে মধুপুরগড়, বাওয়ালগড় ছাড়িয়ে গেছে খেয়াল করেনি। হঠাৎ করেই অস্বস্তিবোধ করতে লাগল।  চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসতেছে। পিছনে তাকিয়ে দেখে মান্ডাকিউ আসতেছে। মান্ডাকিউ হচ্ছে সাপের মতো দেখতে হাত পাওয়ালা এক প্রকার প্রানী। কররকে দেখেই হা করে আসতে লাগল। ইতি মধ্যেই কররের ঘুমের হাক চলে আসে। হাক দিতেই মুখের ফাঁকাটা অনেক বড় হয়ে যায়।  মান্ডাকিউ কররকে কি খাবে!  কররের মুখ দেখেই অজ্ঞান হয়ে যায়। জ্ঞান ফেরার আগেই করর মান্ডাকিউকে মেরে ফেলে। তখন সে বুঝতে পারে কোথায় চলে এসেছে। তার পূর্বপুরুষদের কাছে শুনে ছিল মহেড়ায় নাকি মান্ডাকিউ থাকে। ডাকুলাদের প্রধান শত্রু এরা। তার বংশধরের অনেকেই  নাকি মান্ডাকিউদের পেটে চলে গেছে।

 

মরা মান্ডাকিউটার পায়ে রশি বেঁধে ডাকুলাদের দেশে নিয়ে আসে। সবাই তার বীরত্বের প্রশংসা করতে থাকে। সবাই খুশি হয়ে মাথায় তুলে নাচতে শুরু করে। সবাই মিলে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিল। কররকে বীরত্বের পুরষ্কার দিবে। পুরষ্কার হিসেবে কি দেওয়া হবে সেটার বিষয়ে মত বিনিময় চলতে লাগল। কেউ বলে দুটো গরু দাও। কেউ বলে একটা মহিষ দাও। কেউ বলে কিছু টাকা দাও। করো সাথে কারো মিল পাওয়া যাচ্ছে না। মিটিংয়ের মাঝখান থেকে এক মুরুব্বি বলে উঠে। ওরে গাছে ঝুলিয়ে এক পা টানা দাও। সকলে এটাতেই একমত হলেন। করর তো চমকে উঠল।এ কেমন পুরষ্কার বিধি, এই ছিল আমার কপালে। সবাই মিলে কররকে পুরষ্কার হিসেবে গাছের সাথে বেঁধে । এক পা টানা দিয়ে আরেক পায়ে পাথর বেঁধে দিল।  করর বুড়া ডাকুলাকে অভিশাপ দিতে লাগল। শালা তুই মরে ভূত হবি। তরে ঘুঘরায়(এক ধরনের পোকা) খাবো। তোর কপালে কাউয়ার হাগু আছে। ইচ্ছেমতো বকতে লাগল। বকতে বকতেই তার ঝুলন্ত পা ছিঁড়ে পড়ে গেল। তার পেট থেকে বাকি বাচ্চাগুলো বাহিরে বেরিয়ে আসতে লাগল। কররের শেষ আর রক্ষা হলো না। অবশেষে মরণ টিকেটটা  হাতে এসেই গেল। এতোগুলো বাচ্চা খাবে কি? পেট থেকে বেরিয়েই কান্না করতে লাগল। করর এতোটাও ধনী ছিল না যে তার বউ বাচ্চাগুলোকে ঠিক মতো খাওয়াতে পারবে। সবাই এবার তাদের সর্দারের কাছে আবদার জানিয়ে বসলো।  বাচ্চাগুলোর দায় ভার তাকেই নিতে হবে। সর্দার সকলের আবদার ফেলে দিতে পারলেন না। সমস্ত দায়ভার নিয়ে নিলেন।

 

কররের বাবা, মা চিল্লাইয়া কান্না করতে লাগল। বউ তো এক চিৎকারে বেহুশ হয়ে যায়।  বছর পাঁচেক পাড় হয়ে গেছে।  কররের বাচ্চাগুলো একটু বড় হয়ে গেছে। প্রতি বছর বাবাকে স্মরণ করতে কবরে ফুল দিয়ে আসে। ও এক বেলা পেট ভোজন করায়।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park