1. admin@ichchashakti.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৭ অপরাহ্ন

নিলয়ের প্রেয়সী — মোঃ আসিফুর রহমান 

  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৫১ বার পঠিত

“দুটি দেহ একটি প্রান, যেনো রয়েছে দন্ডায়মান।” এরকম কাটতে ছিলো নিলয় ও তানিশার জীবন। একে অপরকে ছাড়া কিছু বুঝে না। কত মধুর ভালোবাসা। আবার দুইজনের লক্ষ একই। ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। তাদের বড় স্বপ্ন তারা বিসিএস কেডার হবে। আর এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। রুটিন মাফিক পড়াশোনা করা, আবার দুইজন একই সময়ে অনলাইনে আসা থেকে শুরু করে সব মেনে চলতো। আবার তারা পড়াশোনা কোথাও না বুঝলে এক অপরের সাথে আলোচনা করে সমাধান করে নিতো। তারা সেম ভার্সিটির, সেম ডিপার্ট্মেন্টের একই ইয়ারের স্টুডেন্ট। একাডেমিক সিলেবাস তাদের মতো করে শেষ করে। নিলয় ও তানিশা আলোচনার মাধ্যমে পড়ার টপিক ঠিক করে নেয়। প্রতিদিন রাতে ঐ টপিকের ওপর পরিক্ষা হয়। নিলয় প্রশ্ন করে তানিশাকে দেয়,তানিশা প্রশ্ন করে নিলয়কে দেয়। এভাবে দুইজন পরিক্ষা দেয়। তাদের প্রতিদিন এভাবে পরিক্ষা চলতো। এক এক করে সব একাডেমিক বইগুলোর পড়া শেষ করে। রাতে তারা পরিক্ষা শেষ করে অনেক রাত জেগে কথা বলতো। প্রেম – ভালোবাসায় তাদের মন শিক্ত হয়ে যেত। একে অপরকে কত নামে ডাকতো, কত শত স্বপ্ন বুনে তারা। একদিন হঠাৎ তানিশা নিলয়কে বলে, তুমি আমার কাছে বা পরিবারের কাছে যাও চাও যা চাও তোমাকে তা দিবো। এই কথায় নিলয় কান দেয় না তবুও তানিশা বলে আমি সিরিয়াসলি বলছি তোমার কী লাগবে বলো বা তুমি কী পছন্দ করো! তখন নিলয় উত্তর দেয় আমি শুধু তোমাকেই চাই, তোমাকে সারাজীবন আমার করে পেতে চাই।

 

আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমাকে ছাড়া আমার আর কিছু লাগবে না। তোমার কাছে বা তোমার পরিবারের কাছে চাওয়ার আর কিছু নাই, তুমি আমার কাছে অমূল্য সম্পদ। তো সাথে কারো তুলনা হবে না, তুমি অতুলনীয়, এই পৃথিবীর সব নারীর রূপ বিধাতা জানি তোমাকে দান করছে। তুমি অনন্যা, এই পৃথিবীর কোটি কোটি নারীর ভীরে আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। এতে  তানিশার মন খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। নিলয় এবং তানিশা  দুইজন দুইজনকে প্রতিশ্রতি দেয়, সারাজীবন একসাথে থাকবে। একজন অন্যজনকে ওয়াদা দেয় মৃত্যু ছাড়া আমাদেরকে কেউ আলাদা করতে পারবে না। নিলয় ও তানিশা ভেবে ভেবে রূপকথার রাজ্য সাজায়, কত-শত কল্পনা আঁকে। তাদের রাজ্যে জন্ম নিবে দুটি ফুটফুটে বাচ্চা। তানিশা নিলয়কে বলে ছেলেসন্তান হলে আমার নামের সাথে মিলিয়ে নাম রাখবো আর মেয়ে সন্তান হলে তোমার নামের সাথে নাম মিলিয়ে রাখবো। তারা আর ও পরিকল্পনা করে, আমাদের সন্তানকে এমন করে প্রতিষ্ঠিত করবো যাতে দেশের সবাই একনামে চিনে, সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করবো যাতে নৈতিক জ্ঞানের অবক্ষয় না হয়। ধর্মীয় শিক্ষায় দিক্ষিত করবো। এতে একজন আর্দশবান সন্তান হয়ে উঠবে। তাদের সন্তানদের নিয়ে কেটে যাবে মধুর সংসার।

 

তানিশার মনে ছিলো তিব্র আকাঙ্খা নিলয়কে বলতো আমরা দুইজন প্রতিষ্ঠিত হয়ে দুইজন মিলে শহরে একটা বাড়ি করবো, নিজেদের মতো করে সংসার সাজাবো। বলার মতো কেউ থাকবে না। তারা কেউ কাউকে ছাড়া পাঁচ মিনিট ও থাকতে পারতো না। আবার তাদের পড়ার চাপ ও ছিলো।  তাই তারা পড়ার মাঝে মাঝে কথা বলতো। এমনকি অনেকদিন কলে থাকা অবস্থায় দুইজন ফোনের দুইপ্রান্ত থেকে পড়াশোনা করে।

কল কাটে না আবার কথা ও বলে।  কেউ যদি কোনো পড়া না বুঝলে একে অপরের কাছ থেকে জিজ্ঞেসা করে নিতো। নেট সমস্যা কারনে কখনো তাদের কথা না হলে দুইজনের মনে বিষন্নতার ঝর উঠতো। দুইজনেই অনেক কষ্ট পেত।  একে অপরের সাথে কথা বলার জন্য মন আনচান আনচান করতো। হঠাৎ নিলয় এবং তানিশার মাঝে ঝগড়া হয়, এতে নিলয় তানিশাকে তুই করে করে সমন্ধোন করে ফেলে, এতে তানিশা খুব কষ্ট পায়। নিলয়ের ফোন রিসিভ করে দীর্ঘ সময় কথা বলে না। নিলয় অনেকবার সরি বলার পর তানিশা কথা বলে। তারপর তানিশা নিলয়কে বলে, আমাদের ঝগড়ার মাঝে কখনো তুই করে সমন্ধোন করবে না,এমনি সময় যত খুশি ততবার তুই বলে সমন্ধোন করবে। কতই না ভালোবাসা তাদের। নিলয় এবং তানিশার ঝগড়া হলে, নিলয় তানিশাকে বলে তোমায় ছাড়া দুই মিনিট ও থাকতে পারি না!  তখন তানিশা উত্তর দেয়, আমাদের বিয়ের পড়ে তখন কী করবে? তোমার তো অফিস থাকবে। এতে নিলয় তানিশাকে বলে, আমি অফিস থেকে আধা ঘণ্টা পর পর ভিডিও কল দিবো, তখন তানিশা উত্তর দেয়, এত কল দিতে হবে না, তোমার অফিসে তোমার কাছে আমাকে বসিয়ে রাখলেই দেখতে পারবে সারাক্ষণ। তানিশা নিলয়কে বলে বিয়ের পর আমাদের এক বালিশ, এক প্লেট, একটা গ্লাস থাকবে। আমরা একই প্লেটে খাবার খাবো এভাবে ভরে উঠবে নিলয় তানিশার প্রেমময় জীবন।

 

তাদের প্রেমময় জীবনের সূচনা হয়েছিল খুব মধুর ভাবে। কোনো এক শহর থেকে তাদের এই জীবনের শুরু। তাদের দেখা হয় চোখে চোখ রাখে এভাবে কিছু দিন চলে যায়। এসবের  মাঝে তাদের মন বিনিময় হয়ে যায়।  হঠাৎ তাদের কথা হয় কতশত সংলাপে কেটে যায় প্রহর। এরপর সামাজিক মাধ্যমে একে অপরের বন্ধু হয়, এরপর এই থেকে ম্যাসেজে কথা। একদিন কথার মাঝে নিলয় তানিশাকে সরাসরি ভালোবাসার কথা জানায়। নিলয় বুঝতে পেরেছিলো তানিশাও নিলয়কে ভালোবাসে। কারণ তাদের মন দেওয়া নেওয়া হয়েছিল প্রথম সাক্ষাৎে। এভাবে কেটে যায় একের পর এক দিন। তাদের পরিক্ষা আসলে অনন্য সময়ের তুলনায় কম কথা বলতো। তারা যখন ইন্টারমিডিয়েট পরিক্ষা দেয় তখন তারা কম কথা বলতে কারণ তাদের ভালো ফলাফল অর্জন করতে হবে। একপর্যায়ে তাদের ইন্টারমিডিয়েট পরিক্ষা শেষ হয় এবার এডমিশন টেস্টের পালা। তাদের এডমিশন টেস্ট আসলে তারা গোছালো ভাবে পড়াশোনা শুরু করে। তারা দুইজন ভিন্ন ভার্সিটির দুটি আলাদা আলাদা ডিপার্টমেন্টে চান্স হয়। তারা সেম ভার্সিটিতে একই ডিপার্টমেন্টে পড়বে বলে অন্য একটা ভার্সিটিতে এডমিট হয়। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর ও তাদের ভালোবাসায় কমতি ছিলো না।  তাদের মাঝে সন্দেহ থাকবে বলে অন্য কারো সাথে তারা তেমন কথা বলতো না।

 

নিলয় তানিশাকে বিয়ের কথা বললে তানিশা জানায়, আমাদের এখন ও পড়াশোনা শেষ হয়নি, আর তুমি ও স্টুডেন্ট প্রতিষ্ঠিত হও নি! আমরা বিয়ে করলে সংসার চলবে কেমনে? আর আমাদের পড়াশোনা ও কেমনে শেষ হবে?  তবুও নিলয় সবার অজান্তে তানিশাকে বিয়ে করে রাখতে চায়। বলে চাকরি পেলে সবাইকে জানাবো, কিন্তু তানিশা রাজি হয় না। তখন তানিশা উত্তর দেয়, চাকরি পেয়ে, তোমার বাবা মাকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসবে তখন আমাদের বিয়ের কথা হবে।  তাই বাধ্য হয়ে নিলয় তানিশার এই দাবি মেনে নেয়। কিন্তু নিলয়ের মনে জাগতে থাকে তানিশাকে হারানোর ভয়। জীবনে ভালো কিছু করতে না পারলে যে তানিশাকে হারাতে হবে জীবন থেকে। তখন তানিশা আশ্বাস দেয়, এত চিন্তা করো না, কেউ তো সারাজীবন বেকার থাকে না, কিছু না কি করে। আমার অল্পতেই হয়ে যাবে। আমি পড়াশোনা করতেছি কিছু না কিছু করবো। দুইজন মিলে সংসার সাজাবো।

 

এর কিছুদিন পর নেমে আসে নিলয়ের জীবনে বিপর্যয়। কারন তার প্রেয়সী তানিশা বদলে যেতে শুরু করছে। এই সেই কথা নিয়ে তাদের মাঝে ঝগড়া হতে থাকে। নিলয় সব ঝগড়া গুলো ঠান্ডা মাথায় হ্যান্ডেল করে। তবুও বিপর্যয় জানি কিছুতেই পিছুপা হয় না। তানিশাকে দেখতে আসে বিসিএস কেডার ছেলের মা বাবা। তাদের স্বনামধন্য পরিবার। তানিশাকে ঐ ছেলেসহ তার পরিবার পছন্দ করে ফেলে। তানিশার পরিবার ও ভালো ছেলে পেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে যায়।  এরপর তাদের বিয়ে হয়ে যায়। এগুলো তানিশা নিলয়কে জানায় না। এসবের মাঝে ও তানিশা নিলয়ের সাথে স্বাভাবিক কথা বলে। হঠাৎ নিলয় এসব জেনে ফেল। তখন তানিশা এবং নিলয়ের মাঝে দুরত্ব মেইনটেইন করতে থাকে। তখন তানিশাকে হারিয়ে নিলয় পাগল প্রায়। ভালোবাসা না পাওয়ার যন্ত্রণায় নিলয় দিশেহারা হয়ে পড়ে। এভাবেই তানিশা নিলয় অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হয়। এই শহরে হেরে যায় নিলয়ের মতো হাজার ও ভালোবাসা।

 

নিলয়ের প্রেয়সী

মোঃ আসিফুর রহমান 

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park