পলিথিন মাটির সঙ্গে মিশতে আনুমানিক দেড় হাজার বছর সময় লাগে। পরিবেশদূষণ, ছাড়াও হরমন বাধাগ্রস্ত হয় পলথিন ব্যাগ ব্যবহারে। দেখা দিতে পারে বন্ধ্যাত্ব, নষ্ট হতে পারে গর্ভবতী মায়ের ভ্রুণ, বিকল হতে পারে লিভার ও কিডনি। এছাড়াও জীববৈচিত্র্য, অর্থনীতি ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি পলিথিন।
বিভিন্ন ক্ষতির কথা চিন্তা করে এরই মাঝে দেশব্যাপী পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তবে এর পরেই উঠেছে প্রশ্ন, বহুল প্রচলিত এই ব্যাগটি নিষিদ্ধ হলে এর বিকল্প কী হতে পারে। জরীপে উঠে এসেছে, শুধু ঢাকাতেই ৬৪ শতাংশ মানুষ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে।রাজধানীতে প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি পলিথিন ব্যাগ জমা হচ্ছে। আর বিশ্বে প্রতি বছর ৫ লাখ কোটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। পলিথিন পচে মাটির সাথে মিশে না তাই মাটির উর্বরতা কমে যায়, মাটির গুণাগুণ নষ্ট করে সাথে বিপন্ন করে তুলে প্রকৃতি ও পরিবেশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাছ-মাংস পলিথিনে প্যাকিং করলে ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হয় এতে রেডিয়েশন তৈরি হয়ে খাবার বিষাক্ত হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, পলিথিন ব্যাগ অবাধ ব্যবহারের ফলে চর্মরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্নায়ুজনিত রোগ ও ক্যানসারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের সংক্রমণ হতে পারে।
তবে এবারই যে প্রথম পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তা কিন্তু না, বাংলাদেশে প্রথম এই ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ হয় ২০০২ সালে। ২০১০ সালে দ্বিতীয় বারের মতো পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে সরকার। আর এবার কাচাবাজার, সুপারশপ থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে এই ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করলো সরকার। এখন পলিথিনের প্রথম বিকল্প হতে পারে, সোনালি ব্যাগ যা পাট থেকে তৈরি এক ধরনের পলিথিন ব্যাগ। এই প্রক্রিয়াটি আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মোবারক আহমদ খান।
পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ সহজেই মাটির সাথে মিশে যায় এবং মাটিতে উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই ব্যাগ ছাড়াও কাগজের ব্যাগ হতে পারে সেরা বিকল্প। মলগুলোতে শপিং ব্যাগ হিসেবে অনেকেই কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করেন। কাগজের ব্যাগ পরিবেশবান্ধব। কারণ সহজেই মাটির সঙ্গে মিশে যায় এটি।
তারপর বিকল্প হিসেবে উঠে আসে সিনথেটিক ফেব্রিক দিয়ে বানানো ক্যানভাস ব্যাগ। রিসাইকেল করা যাবে। সুতি ও ক্যানভাসের সংমিশ্রণে বানানো। কাগজের ব্যাগের তুলনায় এই ব্যাগ বেশি স্থায়ী। ধুয়ে পরিষ্কার করে অনেকবার ব্যবহার করা যায়। আবার বারবার কাগজের ব্যাগের মতো কেনারও প্রয়োজন হয় না। ক্যানভাস ব্যাগগুলো একাধারে সুবিধাজনক, ফ্যাশনেবল ও ট্রেন্ডি।
চাইলে ব্যবহার করা যাবে কাপড়ের ব্যাগ। যেটা পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী। হাতের কাছে থাকা যেকোনো কাপড় কেটে নিজেই ঘরে বসে তৈরি করে নেওয়া যায় এমন ব্যাগ। আবার বাজারে সহজে কিনতেও পাওয়া যায় কাপড়ের ব্যাগ। ব্যাগগুলো টাকাও বাঁচায় আবার পৃথিবীতে প্লাস্টিকও কমায়।
এছাড়াও আমাদের দেশে যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে চটের ব্যাগ বা সহজ ভাষায় বস্তা। যুগযুগ ধরে চটের ব্যাগ ও বস্তা বাজারে প্রচলিত রয়েছে এদেশে। কাঁচাবাজার বা মুদী বাজার এই ধরণের ব্যাগের ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে।
পরিবেশবিজ্ঞানীদের আশা এবার সরকার কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে পলিথিনের ব্যবহার। উৎসাহ দেবে বিকল্প পদ্ধতিতে।