বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই দেশের জন্ম হয়। অনেক ত্যাগের মহিমায় এদেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু এদেশের স্বাধীনতা ঘিরে যুগে যুগে অনেক জটিলতা দেখা দিয়েছে। দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন। বিশেষত যেই সরকার ক্ষমতায় বসে দেশ পরিচালনা করেছে, সেই দেশের উন্নয়নের থেকে নিজের পেট ভরিয়েছে বেশি। ফলে এদেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাতে পারেনি কেউ। বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের রাজনীতি সবচেয়ে লাভজনক পেশা। অনেকে এটাকে খুব দ্রুত গতিতে বড়লোক হওয়ার ব্যবসাও বলে থাকে। কিন্তু রাজনীতি কোনো পেশা বা ব্যবসা হতে পারে না। বরং রাজনীতি মানে মানুষ এবং দেশের জন্য কলয়াণকর কিছু করা।
যেকোনো ক্ষমতায় থাকা সরকারের কোনোরকম পাতি নেতা হতে পারলেই অর্থবিত্তের পাহাড় গড়তে কোনো সমস্যা হয় না। এটাই এদেশের সাধারণ মানুষের আক্ষেপের বিষয়। অনেক স্বপ্ন এবং আশা নিয়ে এদেশের মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে ১৯৭১ সালে মরণপণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এদেশ স্বাধীন করেছিলো। যেখানে দেশ স্বাধীন হলেও সাধারণ মানুষের স্বপ্ন এবং আশা কোনোটাই পূরণ হয়নি৷ তাই অভিমানী মুখে বলতেই হয় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়ে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কি এমন পরিবর্তন হলো ? এমন প্রশ্ন হরহামেশাই এসে যায় মনের অগোচরে। জনগণের ভোটে যাঁরাই নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেছে, তাঁরাই নিজের মতো দেশ পরিচালনা করেছে। কিন্তু যাদের ভোটে তাঁরা সরকার হয় তাদের কথা আর মাথায় থাকে না। ভুলে যায় তাদের অবদান। ক্ষমতায় বসেই তাঁরা ভোগের রাজ্য কায়েম করে। চুরি, ডাকাতি এবং চাঁদাবাজি করে ফতুর করে দেশের সম্পদ এবং সাধারণ মানুষকে। কোনো শাসনতান্ত্রিক নিয়ম না মেনেই তাঁরা সরকার পরিচালনা করে। এদিকে সাধারণ মানুষগুলো না খেয়ে মরে গেলেও তাঁদের চক্ষুগোচর হয় না। নিত্য পণ্যের দাম রাতারাতি বাড়িয়ে দেওয়া প্রত্যেক সরকারের একটা বদ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যেই সরকার দেশ পরিচালনা করতে আসে তাঁরা ভাবে তাঁরাই দেশের যোগ্য শাসক। তাই দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার জন্য তাঁরা মরিয়া হয়ে ওঠে।
আগের সরকারের কোনো উন্নয়ন তাঁদের চোখে পড়ে না। চোখে পড়লেও তাঁরা সেটা মানতে নারাজ। এসব কিছু ক্ষমতায় যাওয়ার ফন্দি। ১৯৭১সালে এদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে প্রত্যেক সরকারের কিছু না কিছু উন্নয়নের অবদান আছে। এটা সাধারণ মানুষও বিশ্বাস করে। যদিও তাঁরা তাঁদের পকেট ঠিকই আগে ভরে নিয়েছে কিন্তু একই সাথে দেশের কিছু উন্নয়নও করেছে। দেশের সম্পত্তি একেবারে গিলে খেতে পারেনি কেউ। সাধারণ মানুষকে বুঝিয়েই তাঁরা দেশের সম্পত্তি ভোগ করেছে এখন পর্যন্ত কোনো সরকার এদেশের মানুষের পুরোপুরি আস্থা অর্জন করতে পারেনি। সুস্থ্য ভোট হলে প্রতি পাঁচ বছর পর পর এদেশের সরকার পরিবর্তন হবে এটা সাধারণ মানুষের শতভাগ বিশ্বাস। কিন্তু যাঁরা ক্ষমতায় বসে থাকে তাঁরা খুব সহজে ক্ষমতা ছাড়তে পারে না। ক্ষমতার লোভ তাঁদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে।। যেকোনো ভাবে তাঁরা সরকার গঠন করবে সেই ফন্দি আঁকে তাঁরা। বাংলাদেশের রাজনীতি ঘিরে প্রতিহিংসার প্রভাব সবচেয়ে বেশি। যার প্রভাব এসে পড়ে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের উপর। যেই ক্ষমতায় আসে সেই বিগত সরকারের সব উন্নয়ন প্রতিহিংসার চোখে দেখে। কেউ সেটার যত্নআত্তি নেয় না। ফলে চরম অবহেলায় পড়ে সেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা। এর মূল কারণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। যেই সরকার আসুক সেই চায় দেশ এবং দেশের মানুষের কিছু উন্নয়ন ঘটাতে।
কিন্তু সেই উন্নয়নের তরান্বিত করতে মনমানসিকতা কোনোটাই নেই ক্ষমতায় থাকা সরকারের। তার মানে বলতে হয় সবাই ক্ষমতার লোভে রাজনীতি করতে আসে। রাজনীতি হওয়া চাই দেশ এবং দেশের সর্বস্তরের মানুষের স্বার্থে।কিন্তু এটা চোখে পড়েনি কোনো কালে। বাংলাদেশ পরিচালনায় যোগ্য শাসকের চরম অভাব। জনগণের আস্থা অর্জনের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তির খুব অভাব এই দেশে। ক্ষমতায় চিরদিন থাকা যায় না। একটা সময় সবকিছুর অবসান হয়। কেউ ভালো কাজ করলেও মানুষ মনে রাখে আর খারাপ কাজ করলেও মনে রাখে। ইতিহাস মনে রাখতে বাধ্য করে। তাই প্রত্যেক সরকারের মনে রাখা উচিত যতোদিন ক্ষমতায় বসে থাকবে সবসময় দেশের স্বার্থে কাজ করে যাওয়া। অন্যায়কে পাত্তা না দিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সরকার পরিবর্তন হলেও বিগত সরকারের অসম্পূর্ণ পড়ে থাকা কাজগুলো যথাযথ ভাবে পরিচালনা করে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা। এতে করে দেশ এবং দশের উপকার হবে। তখন দেশ এগিয়ে যাবে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। কিন্তু এটা না করে বিগত সরকারের অসম্পূর্ণ পড়ে থাকা কাজগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে করে দেশের টাকাও নষ্ট হলো, কাজটাও অসম্পূর্ণ হয়ে পড়ে থাকলো। কিন্তু এটাকে কোনো সুস্থ্যধারার রাজনীতি বলে না। বরং এটাকে বলে প্রতিহিংসার রাজনীতি। যে নীতি রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় অভিশাপ এই প্রতিহিংসার রাজনীতি।
যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রতিনিয়ত বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে। এগিয়ে যেতে পারছে না তার যথাযোগ্য লক্ষ্যের দিকে। দেশের স্বার্থে রাজনীতি করতে চাওয়া নেতার খুব প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বাংলার মাটিতে। এই শূন্যস্থান পূরণ হলে বাংলাদেশ পুরোপুরি এগিয়ে যেতে পারবে। নচেৎ বাংলাদেশ তার যোগ্য আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারবে না কোনো কালে। বিশেষত পাতি নেতারা বেশি অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়। তাদের দমন করতে হবে কঠোর হস্তে। সব মানুষের কাজের গতিতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ এটাই সবার কাম্য। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের কোনো মূল্য দেওয়া হয় না উপর মহল থেকে। যতো অন্যায় আইন তাদের ক্ষেত্রে বলবৎ হয়। এটাও বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের সব রাজনীতিবিদ যে খারাপ বিষয়টা এমনও নয়। যুগে যুগে এমন কিছু রাজনীতিবিদ বেরিয়ে এসেছেন যাঁরা সতত চেষ্টা করছেন দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার। কিন্তু তাঁরা খুব বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারেননি। নিষ্ঠুর হায়েনার দল তাঁদের মাঝপথেই থামিয়ে দিয়েছে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য। এটাও করা হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে। যেটা দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। ধারাবাহিক ভাবে দেশ এগিয়ে যাওয়ার পথে সমূহ অন্তরায়।
বাংলাদেশের আলো বাতাস যেমন নান্দনিক তেমনি এদেশের মানুষ অত্যধিক আবেগ প্রবণ। এই আবেগকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতা লোভী শাসকদল পায়তারা করে ক্ষমতার আসন পাওয়ার জন্য। নীতি নৈতিকতার কোনো ধারধারে না তাঁরা। ক্ষমতার আসন পাওয়া মাত্রই তাঁরা ভোগ দখল করে। দেশে-বিদেশে অর্থবিত্তের পাহাড় গড়ে তোলে। যার অভিপ্রায়ে দেশ যায় রসাতলে। তাতে অবশ্য ক্ষমতালোভী শাসকের কিচ্ছু যায় আসে না। কেননা তাঁদের একটাই মূল হচ্ছে নিজের পকেট ভারী করা। নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যার চেষ্টা করা হয় বারংবার। কখনো কখনো তারা হত্যা করতে সফলও হয়। আর এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির প্রথা। যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এই রীতি। যেটা কিনা গণতন্ত্র বিরোধী। দেশের নাগরিক হয়ে সব মানুষের কথা বলার অধিকার থাকে। থাকে বাক স্বাধীনতার সমস্ত পথ খোলা। কিন্তু ক্ষমতায় থাকতে শাসলদল সব অধিকার কেড়ে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। গণমাধ্যমকেও বন্দী করে রাখে হাতের নাগালে। যাকে বলে অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা। কিন্তু এব্যবস্থার মাধ্যমে কোনো সরকার দেশ পরিচালনায় স্থায়ী হতে পারেনি। পারেনি নিজের অপশাসন ব্যবস্থাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে। যেই অপশাসন কায়েম করতেম অপচেষ্টা চালিয়েছে তাকেই ধৃত করেছে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ। তাই জোর করে কেউ ক্ষমতায় বসে থাকতে পারেনি বাংলার মাটিতে। কিন্তু তাতে করে দেশের ক্ষতি হয়েছে বৈকি ! এখান থেকেই বলা যায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন প্রতিহিংসা শিকার।
যেখান থেকে বেরিয়ে আসার পথে বারংবার বাংলাদেশ বাঁধাগ্রস্থ হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কেন্দ্রবিন্দু থেকে। এটাকে সমূলে মূলোৎপাটন করতে না পারলে বাংলাদেশের মুক্তি নেই। মুক্তি নেই এদেশের আপামর জনগণের। তাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সুস্থ্যধারায় ফিরিয়ে আনতে সব নাগরিককে একতাবদ্ধ হতে হবে। তবেই স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে শতভাগ সম্ভবপর হবে।