যাবেন নাকি? কোথায়? চলুন না একটু ঘুরে আসি! কোথায় যাবেন? আপনি যেখানে নিয়ে যাবেন সেখানেই যাব। তবে, দেখবেন জায়গাটা যেন কোলাহল মুক্ত হয়। ঠিক আছে! মহারাণী’র আদেশ শিরোধার্য। এই আমাকে মহারাণী বললেন কেন? আমি আবার কবে আপনার মহারাণী হলাম? ভুল বুঝে থাকলে আমি দুঃখিত। কথা’র কথার উত্তর দিতে গিয়ে থমকালো আকাশ। কথা তার হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরেছিল যে! অনেক দূর এগিয়ে গেছে ঘটনা কিন্তু পাত্র পাত্রীর পরিচয় এখনো বলা হয়নি। কথা মহারাণী’র মত যার মেজাজ সে কিন্তু মোটেও মহারাণী বা সে ধরণের কিছু নয়। দরিদ্র মৎস্য ব্যবসায়ী পিতা ও পুরোদস্তুর গৃহিণী মাতার অতি আদরের দুলালী এই মহারাণী রুপী কথা। বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন সকলেই তাকে এই নামে ডাকতেই পছন্দ করে। কথা’রও বেশ ভালোই লাগে! বেশ ভালোই চলছিল তাদের সংসার। সুখের ঘরে দু:খের আগুন হয়ে এল তার বাবার অকাল প্রয়াণ।
কিশোরী কথা পরিবারের জৈষ্ঠ্য সন্তান হওয়ায় তার উপরেই নেমে এল খড়গ। ও হ্যাঁ! বলাই হয়নি! কথার পরেও কিছু বছরের ব্যবধানে তাদের পরিবারে আরও একজন ভাই ও দুই জন ছোট বোনের শুভাগমন ঘটে। নিজের লেখাপড়ার আশা বন্ধ করে তাকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হল কর্মযজ্ঞে। তবুও, উচ্চ মাধ্যমিকটা ঠিকই উৎরে গিয়েছিল সে। ছোট তিন ভাই-বোনের পড়াশোনা ও সংসারের নিত্য খরচাপাতি মেটাতে সে নেমে পড়ল অর্থ উপার্জনের জন্য। ফলাফল স্বরুপ তার এই স্বল্প বেতনে চাকুরিতে যোগদান করা যদিও তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে আজ একটা মোটামুটি সম্মানজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। ওদিকে খুব ধনাঢ্য না হলেও উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান আকাশ। তিন ভাই ও এক বোনের সংসারে আকাশ সবার ছোট। বোন সবার বড় ধনী ব্যবসায়ী পরিবারের গৃহিণী। ভাই দুজনই ব্যবসায়ী। এর মধ্যে একজন আবার বেশ কয়েক বছর সিঙ্গাপুরে ছিলেন। মেজ ভাইয়ের শহরে টেইলরিং শপ ও গ্রামে মৎস্য ব্যবসা আছে।
আর আকাশ বি,কম পাশ করার পর চাকুরী নেয় এই কথা’দের অফিসে। মূল নিবন্ধে ফেরা যাক। মুখ থেকে কথা’র হাতটি সরিয়ে আকাশ বলল: চলুন মহারাণী তবে যাওয়া যাক। আবার…! অনুরাগের স্বরে বলল কথা। আমার ঘাট হয়েছে, এই কান ধরছি।
না কান ধরতে হবে না, চলুন। আজ বৃহস্পতিবার! অফিস অর্ধ দিবস। সুতরাং, বিকাল বেলাতে একটু মনের হরষে উড়লে ক্ষতি কি! বেরিয়ে পড়ল তারা। প্রথমে পৌর পার্ক। তার পর লোক সমাগম বেশি হওয়ায় তারা ওখান থেকে বেরিয়ে রিক্সাযোগে সোজা বুকভরা বাঁওড়। আকাশের পছন্দেই ওখানে যাওয়া। আকাশের খুব পছন্দের জায়গা এটা। ছাত্র জীবনে অনেক বারই বন্ধুদের সাথে এখানে এসেছে সে। কথা’র অবশ্য এই প্রথম যাওয়া সেখানে। প্রায় মিনিট বিশেকের রিক্সা যাত্রার পর তারা পৌঁছাল সেখানে। বাঁওড়ের মাঝে ঘোরাঘুরির জন্য ইঞ্জিন বোটের ব্যবস্থা আছে। কাল বিলম্ব না করে তারা একটি প্রমোদতরী ভাড়া করে শুরু করল তাদের জলযাত্রা। অনেক ক্ষণ তারা ঘুরল সেখানে। এরই মধ্যে উপভোগ করছিল তারা প্রকৃতির নয়নাভিরাম অপার সৌন্দর্য। একটা কথা বলার ছিল মহারাণী দু:খিত কথারাণী। আপনি আমাকে মহারাণী বলেই ডাকুন।
আমার কোন আপত্তি নেই তাতে। তবে, যে…! রাগ করি, তাইতো? ওটা রাগ নয় অনুরাগ। আর হ্যাঁ, আপনি আমাকে তুমি করেই বলবেন। কিন্তু, অফিসে? অফিসেও বলবেন। আমিতো আপনার জুনিয়র, কেউ কিছুই মনে করবে না। যথা আজ্ঞা মহারাণী! এবার কথা’র ঠোঁটে স্বলাজ হাসি। আকাশও ভুল করার পাত্র নয়। মোবাইল ফোনেই তুলে নিল কথা’র হাস্যোজ্জ্বল মুখের ছবি। পূর্বের সব সময়ের ন্যায় আজ আর কোন বাঁধা দিল না কথা। আকাশও দীর্ঘদিন বুকের গহীনে লালিত আকাঙ্ক্ষা বলে ফেলল কথাকে সুযোগ বুঝে। কথা! ও কথা! ও আমার মহারাণী! জ্বী, বলুন! শুনছি। আমার দিকে তাকাও। আমি জানি আপনি কি বলবেন। সত্যিই জানো? হ্যাঁ,জানি। কিন্তু, তোমার মধ্যে তো কোন ক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়াই দেখিনা। তাই যদি হবে তবে আমি বা আমরা চিরায়ত বাঙালী ললনা হলাম কেন! তাহলে এখন? এখন কি? বলুন! এই যে বললে তুমি সব জানো, বুঝতে পার। তারপরও আপনি বলুন আমি শুনব। কথা! ও কথা! আরে বলুন ভীতুর ডিম। এবার একটু সাহসের সঞ্চার হলো আকাশের বুকে। বলল: আমি তোমাকে ভালবাসি কথা! আমি তোমাকে খুব ভালবাসি আমার মহারাণী! ও এই কথা! তো এই কথাটুকু বলতে বা শুনতে শহর ছেড়ে আমাদের এখানে আসা? ঠিক তা নয়! তবে, সারা সপ্তাহের কর্মব্যস্ততার অবসাদের অবসানে আমরা একটু তো আমুদে হতেই পারি। এরই মধ্যে সূয্যিমামা তার কর্তব্যের পাট চুকিয়ে বিদায় নিতে যখন ব্যস্ত, তখনই কথা তার আঙ্গুল দিয়ে সূর্যের আভা দেখিয়ে বলল: দেখুন না আজ সূর্য কি দারুণ রঙে রেঙেছে! কি দারুণ গোধূলি বেলার রবির কিরণ! ঠিক তাই! আজ পৃথিবীকে অন্য রকম মনে হচ্ছে।
মহারাজের নয়নে পিরিতের ঘোর, তাই এমন মনে হচ্ছে। আমি মহারাজ? আমি মহারাণী হলে তুমি তো তাই! আনন্দের আতিশয্যে যেই না আকাশ কথা’কে জড়িয়ে ধরে তার রক্ত জবা রঙে আঁকা রাঙা ঠোঁট যুগলে আলতো চুম্বন করল,তখনই সে তার মেহেদী রাঙা হাত দুটিতে মুখ লুকালো।
লজ্জা পেলে? এতদিন বলো নি কেন আমায় ভালোবাসো? বাঙালি নারী আমি। আর লজ্জা’ই নারীর ভূষণ। আশাকরি দুটি প্রশ্নের উত্তরই আপনি পেয়ে গেছেন আমার মহারাজ!
তবে তো, আজ আর হবে না ঘরে ফেরা!
আজ হবে আকাশ-বাতাস, দিবা-নিশি, তুমি -আমি’র মিলন মেলা। স্বাক্ষী থাক ধরা, ভালবেসেছিল তারা।
Copyright: সর্বস্বত্ত সংরক্ষিত।
ভালবেসেছিল তারা।
রকিবুল ইসলাম।