1. admin@ichchashakti.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৭ অপরাহ্ন

ভালোবাসার সমীকরণ — জাকির আলম   

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৬ বার পঠিত

ভালোবাসার সমীকরণ পর্ব : ১৩

জাকির আলম   

 

দিন শেষে রাত আসে। আবার রাত শেষে দিন আসে। সময়ের চক্রে কতোকিছুই না পরিবর্তন হয়। আজ যা আছে কাল সেটা নাও থাকতে পারে। সময় এবং নদীর স্রোত কারো জন্যই অপেক্ষা করে না। সময় এবং নদীর স্রোত বয়ে চলে তার আপন বলয়ে। এমন অনেক আশা আছে যা অপূর্ণই থেকে যায়। অনেক ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে কতো না পরিশ্রমের মুখোমুখি হতে হয়। তবুও তো কতোকিছু আমাদের সাধ্যেই বাইরে চলে যায়। অনেক কিছুই মানুষ ধরে রাখতে পারেনা। পারেনা ভালোবাসার মানুষকেও ধরে রাখতে। তখন ভালোবাসা হারিয়ে যায় সময়ের অগোচরে। তেমনি ভাবেই মোনাকে শ্রাবণ জীবন থেকে চিরতরে হারাতে বসেছে। শ্রাবণ চেয়েছিলো মোনাকে ধরে রাখতে। কিন্তু মোনা অন্য মানুষে আকটে গেছে। সারা জীবন একসাথে থেকেও শ্রাবণকে মোনা বুঝতে পারেনি। খুব শীঘ্রই মোনা মাঈনুলের হতে চলেছে। কিন্তু শ্রাবণের জীবনে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে তাতে কোনো রেখাপাত নেই মোনার। খুব হাসি খুশি ভাবেই মাঈনুলকে মোনা মেনে নিয়েছে।

 

আম্মু : আচ্ছা বরপক্ষ তোকে দেখতে এসে হাতে রিং পরিয়ে গেলো অথচ শ্রাবণ এলো না কেন? আমি না তোকে বলেছিলাম শ্রাবণকে বাসায় আসতে। তুই ওকে বলিসনি নাকি ! শ্রাবণ এলো না যে…

মোনা : আম্মু শ্রাবণকে আমি বলেছিলাম। কিন্তু ওর মা খুব অসুস্থ থাকায় হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলো শ্রাবণ। তাই আসতে পারেনি।

আম্মু : কি বলছিস! ওর মা ঠিক আছে তো ?

মোনা : হ্যা আম্মু এখন পুরোপুরি সুস্থ আছে। বিপদ মুক্ত আছে। টেনশন করার কিছু নেই।

আম্মু : আল্লাহ ভরসা ! আচ্ছা যাই হোক ; এবার বলতো মাঈনুলকে তোর কেমন লেগেছে ?

মোনা : আমি কিছুই বলতে পারবো না। তোমাদের পছন্দ হয়েছে তাতেই হয়েছে।

আম্মু : তবে তুই যাই বলিস মাঈনুল ছেলেটা কিন্তু স্মার্ট। দেখতে অনেক সুন্দরও আছে। তোর সাথে ভালো মানাবে। তুই অনেক সুখী হবি মা দেখিস। তোর জন্য শুভ কামনা থাকলো। অনেক বেশি আদর যত্নে থাকবি তুই।

মোনা : সময় বলে দিবে সব। আচ্ছা আম্মু আমি একটু শ্রাবণদের বাসায় যাবো। শ্রাবণের মাকে দেখে আসি। ফিরতে একটু দেরি হতে পারে। টেনশন করো না আবার।

আম্মু : আচ্ছা যা। সন্ধ্যার আগেই বাসায় আসার চেষ্টা করিস। তোর আব্বু আবার রাগ করতে পারে আমার উপর।

মোনা : ঠিক আছে। আমি তাহলে যাই।

আম্মু : আচ্ছা। যা বলছি মাথায় থাকে যেন…

 

তারপর বাসা থেকে বের হয়ে মোনা চললো শ্রাবণদের বাসার উদ্দেশ্যে। প্রায় ত্রিশ মিনিট পর শ্রাবণদের বাসায় পৌঁছো গেলো মোনা। মোনাকে দেখেই অবাক হলো শ্রাবণের মা। প্রথমেই মোনা শ্রাবণের মাকে সালাম দিলো। শরীর স্বাস্থ্যের খবর নিলো। কিছু সময় পর বাজার সদাই নিয়ে শ্রাবণ বাসায় এলো। এমন সময় মোনাকে দেখে শ্রাবণও অবাক হলো। অবশ্য অবাক হবারই কথা। কোনোকিছু না জানিয়ে মোনা এসেছে শ্রাবণদের বাড়ি।

 

শ্রাবণ : একটা ফোন করে তো আসতে পারতে। তোমাকে আমি এগিয়ে নিয়ে আসতে পারতাম। কাজটা ঠিক করোনি।

মোনা : তাই বলে রাগ করতে হবে ! ধরেই নাও না এটা আমার সারপ্রাইজ ছিলো তোমার জন্য !

শ্রাবণ : তাই বলে এমন অদ্ভুত সারপ্রাইজ !

মোনা : হুমমম। আচ্ছা বাদ দাও ওসব। এবার বলো তোমার কি অবস্থা ?

শ্রাবণ : খুব সুখে আছি আমি। এতো সুখে আছি যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।

মোনা : এতো সুখে থাকার কারণটা কি ?

শ্রাবণ : সেটা তোমার অজানাই থেকে যাক।

মোনা : না বললে ! দোয়া করি সারা জীবন সুখে থাকো তুমি।

শ্রাবণ : সত্যিই তাহলে আমার জীবন থেকে তুমি হারিয়ে গেলে ?

মোনা : কি যে বলো না তুমি ! হারিয়ে যাবো কেন ? সারা জীবন আমি তোমার পাশেই আছি।

শ্রাবণ : আমি হেরে গেলাম তোমাকে ভালোবেসে। অথচ কতো স্বপ্ন ছিলো তোমাকে নিয়ে। তোমাকে ছাড়া আমি কেমনে থাকবো জানিনা। পুরো আকাশ যেন ভেঙে পড়েছে আমার উপর। তোমাকে ছাড়া কিছুতেই আমি থাকতে পারবো না। প্লিজ আমার জীবন তুমি ফিরে এসো।

মোনা : কবি সাহেব পাগলের মতো কথা বলো না তো। আমি কিন্তু আগেই বলেছি কখনো আমি তোমার জীবন সাথী হতে পারবো না৷ তোমাকে আমি অনেক বেশি সম্মান করি। আমার সবটা জুড়েই তুমি আছো। তুমি থাকবে। না পাওয়ার মাঝেও অনেক ভালোবাসা যায়। তুমি না হয় না পাওয়ার মাঝেই আমাকে ভালোবেসে ছিলে ! শুধু কাছে পাওয়ার নামই ভালোবাসা নয়। অনেক সময় বিসর্জনের মাঝেও ভালোবাসা বেঁচে থাকে।

শ্রাবণ : তোমাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি প্রিয়তমা !

মোনা : হুমমম আমি জানি। কিন্তু জেনেও আমি কিছু করতে পারছি না। বাবা-মা যে ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে তার সাথেই আমার বিয়ে হবে। তাছাড়া আমি কিছু করতে পারবো না। আমার হাত পা বাঁধা এখন।

শ্রাবণ : তুমি কি আমার মৃত্যু চাও ?

মোনা : কি সব বলছো তুমি ! আমি তোমার মৃত্যু চাবো কেন ? আমি চাই তুমি অনেক বছর বেঁচে থাকো। এমন কথা কখনো আর মুখে বলবে না তুমি। বললে অনেক রাগ করবো আমি।

শ্রাবণ : তুমি ছাড়া আমার নিঃশ্বাস নিতেও খুব কষ্ট হয়। আমার পৃথিবী তুমি। আমার সত্তা তুমি।

মোনা : আসলে তুমি এমন একটা মানুষ, যে ভীষণ ভালোবাসতে পারে। তুমি কবি মানুষ বলেই এটা পারো৷ তুমি অনেক ভালোবাসা প্রবণ একটা মানুষ। তোমার মনটাও অনেক ভালো। আমি চাই তোমার জীবনে এমন একটা মানুষ আসুক যে তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসবে৷ তোমাকে অনেক যত্ন করবে।

শ্রাবণ : না এমন কেউ আমার জীবনে না আসুক। আমার সব ভালোবাসা শুধু তোমার জন্য। অন্য কাউকে আমি ভালোবাসতে পারবো না। সুতরাং আমি চাইনা পুবর্বার কেউ আমার জীবনে আসুক।

মোনা : এমন করে বলো না প্লিজ। আমার নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হচ্ছে। তবুও আমার কিছু করার নেই। পাত্রপক্ষ থেকে হাতের আঙ্গুলে রিং পরিয়ে গেছে। শুধু কবুল বলাই বাদ আছে। বাকি সব ঠিক হয়ে আছে।

শ্রাবণ : সত্যি আমি হেরে গেলাম। আমার আর বেঁচে থাকার ইচ্ছে নেই। খুব মরে যেতে মন চাচ্ছে আমার।

মোনা : যাও তোমার সাথে আর কথা নেই।আমি বাসায় চলে গেলাম।

মা : সে কি মা তুমি কোথায় যাচ্ছো! না খেয়ে কোথাও যেতে পারবে না। কতো কষ্ট করে তোমার জন্য আমি রান্না করলাম। তুমি না খেয়ে যেতে পারবে না। এসো খাবার রেডি হয়েছে। খাবে এসো।

মোনা : না আন্টি আমার ক্ষিধে নেই আজ। অন্য একদিন এসে খাবো।

শ্রাবণ : মায়ের কথাটা রাখতে পারো না ! মা কতো কষ্ট করে তোমার জন্য রান্না করেছে! অথচ তুমি না খেয়েই বাসায় চলে যাচ্ছো ।

মোনা : আচ্ছা আন্টি খাচ্ছি। খাবার কমিয়ে দেন। এতো খেতে পারবো না।

মা : আচ্ছা তুমি কমাও তাহলে…এ এ এ কি করছো মা? একেবারেই তো কমালে…

মোনা : এর বেশি আমি খেতে পারবো না আন্টি…

মা : বুঝলাম না আজ কেন এমন করলে…আগে তো কখনো এমন করোনি…

শ্রাবণ : মা ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে।

মা : সে কি ! তুমি আমাকে বললে না কেন মা ?

মোনা : সরি আন্টি। আমি ভেবেছি শ্রাবণ আপনাকে আগে বলেছে। তাই বলা হয়নি।

মা : আচ্ছা ঠিক আছে মা। বিয়ের পর যেন আমাদের ভুলে যেওনা। মাঝেমাঝে এসে দেখা করে যেও। ভালো লাগবে আমার।

মোনা : আচ্ছা আন্টি। আন্টি একটা কথা বলি, শ্রাবণকে বিয়ে করান। ওর বিয়ের বয়স হয়েছে তো।

মা : আর বলো না মা !  কতো বলি আমার বয়স হয়েছে৷ কাজ-কাম করতে কষ্ট হয়। কখন যেন মরে যাই। এবার তুই বিয়ে কর। কিন্তু কিছুতেই রাজি করাতে পারছি না। তুমিতো ওর ভালো বন্ধু। তুমি বলে রাজি করিওতো মা। তোমার উপর দায়িত্ব দিলাম। আমার কথা ও শোনে না।

মোনা : আচ্ছা আন্টি আপনি কোনো টেনশন করবেন না৷ যা করার আমি করবোনি। আন্টি সন্ধ্যা হয়ে এলো। আমি তাহলে এবার চলি। পরে আসবোনি আবার। দেরি হলে মা-বাবা রাগ করবো।

মা : কিছুই খেলে না তুমি…

মোনা : আন্টি খেলাম তো…

মা : এই শ্রাবণ যা মাকে বাসায় এগিয়ে দিয়ে আয়।

শ্রাবণ : আচ্ছা মা যাচ্ছি…

মোনা : চলো তাহলে…

শ্রাবণ : চলো…

মোনা : আন্টি আমি চললাম। ভালো থাকবেন। নিজের যত্ন নিয়েন সবসময়।

মা : ঠিক আছে মা এসো তাহলে…পরের বার এলে তোমার মাকে সাথে করে নিয়ে এসো।

মোনা : ঠিক আছে আন্টি…

তারপর মোনাকে বাসায় এগিয়ে দিতে শ্রাবণ রাস্তা হাঁটতে লাগলো। গল্প করতে করতে দু’জনে রাস্তা চলছে।

শ্রাবণ : খুব তো মাকে বুদ্ধি দিচ্ছিলে আমার বিয়ের জন্য…

মোনা : দিবো না আবার ! তোমার বিয়ে দিয়েই ছাড়বো আমি।

শ্রাবণ : একমাত্র তোমাকে হলে বিয়ে করবো। তাছাড়া আমি জীবনেও বিয়ে করবো না। সারা জীবন এমনিই থাকবো যতোদিন বেঁচে আছি।

মোনা : সে দেখা যাবে…আচ্ছা বহুদিন তোমার কবিতা শুনি না। পথ চলতে চলতে একটা কবিতা শোনাও না…

শ্রাবণ : কবিতা নেই আর। কবিতা বলার মুড নেই এখন। অন্য সময় হবে।

মোনা : এই প্রথম তুমি এমন কথা বললে। কখনো কবিতা না শুনিয়ে থাকোনি। অথচ আজকে তার বিপরীত হলো।

শ্রাবণ : মানুষের জীবন সবসময় এক যায় না। প্রতি মুহূর্তে মানুষের জীবন পরিবর্তন হয়।

মোনা : হুমমম তা ঠিক। এই দেখো হাঁটতে হাঁটতে একদম বাসার কাছে চলে এলাম।

শ্রাবণ : এবার তাহলে যাও। আমি আমার বাসায় চলে যাই।

মোনা : বাসায় চলো মার সাথে দেখা করে এসোনি।

শ্রাবণ : আজ না। অন্যদিন। আমার একটা কাজ আছে। এখনি যেতে হবে আমাকে। তুমি তাহলে যাও…

মোনা : আচ্ছা ঠিক আছে। রাতে ফোনে কথা বলবোনি…

শ্রাবণ : হুমমম ঠিক আছে…বাই…

মোনা : বাই…

তারপর শ্রাবণ বাসায় চলে এলো কোনো একটা কাজের তাগিদে। ওদিকে মোনাও তাদের বাসায় চলে গেলো…

 

(চলবে…)

 

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park