আজকাল শ্রাবণ অনেকটা চুপসে গেছে। কারো সাথেই তেমন কথা বলে না। গল্প/কবিতা লেখাও ছেড়ে দিয়েছে। তাই ইদানীং কোনো পত্র-পত্রিকায় শ্রাবণের কোনো লেখাও দেখা যায় না। কারণ যাকে নিয়ে শ্রাবণ গল্প/কবিতা লিখতো সে আজ অন্যের হয়ে গেছে। যে মোনাকে শ্রাবণ অনেক বেশি ভালোবাসতো সে মোনার অন্য ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে। মোনাকে হারিয়ে শ্রাবণ ভীষণ কষ্ট পেয়েছে। যা ভাষায় বর্ণনা করা দুরূহ কাজ। শ্রাবণের প্রতিটি স্মৃতির মাঝে মোনা মিশে আছে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে শ্রাবণ মোনাকে ভালোবেসে ছিলো। স্বপ্ন ছিলো মোনাকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে শ্রাবণ বসবাস করবে। কিন্তু সে স্বপ্নে আজ গুড়েবালি । মোনাকে হারিয়ে শ্রাবণ গভীর কষ্টে দিনাতিপাত করছে। সেজন্য মোনার সাথে শ্রাবণ সব প্রকার যোগাযোগ ছেড়ে দিয়েছে। ওদিকে মোনা কয়েক দিন অসুস্থ থাকায় শ্রাবণের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। শ্রাবণ ভেবেছে নতুন মানুষকে পেয়ে মোনা তাকে ভুলে গেছে। আসলে সেটা সত্যি নয়। শ্রাবণকে মোনা ভালো না বাসলেও অনেক সম্মান করে। ভালোবাসা হচ্ছে মনের ব্যাপার। মন সায় না দিলে কখনো ভালোবাসা যায় না। জোর করে কখনো কাউকে ভালোবাসা যায় না। ভালোবাসা হচ্ছে মনের মিল। যা সবার সাথে মিলে যায় না। তেমনি মোনাও কখনো প্রেমিক হিসেবে শ্রাবণকে ভাবতে পারেনি। কিন্তু শ্রাবণের ভালোবাসার প্রতি মোনার অনেক শ্রদ্ধাবোধ আছে। সেজন্য সবসময় মোনা শ্রাবণের কাছাকাছি থাকতো। একমাত্র মোনাকে ছাড়া শ্রাবণ কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারেনি। কাউকে ভালোও লাগেনি কখনো।
শ্রাবণের মনে যতো ভালোবাসা সব মোনা কেন্দ্রিক ছিলো। মোনা সেটা বুঝলেও কখনো সাড়া দিতে পারেনি। শ্রাবণকে সবসময় বন্ধু হিসেবেই দেখেছে মোনা। কিন্তু শ্রাবণ ভেবেছিলো একদিন মোনা তার ভালোবাসায় সাড়া দিবে। সেটাও আর হবার নেই। কারণ মাঈনুলের সাথে মোনার বিয়ে ঠিক হয়েছে। কাগজে-কলমে মোনা মাঈনুলের জীবন সঙ্গিনী হতে চলেছে। মোনার দিক থেকে মোনা অনেক সুখী। মোনা তার স্বপ্নের মানুষকে খুঁজে পেয়েছে। কষ্ট শুধু শ্রাবণের। মোনাকে সে জীবন সাথী করে কাছে পেলো না। রাত তখন এগারোটা বেজে তেইশ মিনিট। শ্রাবণ শুয়ে শুয়ে মোনার কথা ভাবছে। কিছুতেই ঘুমাতে পারছে না। ভীষণ মিস করছে মোনাকে। অভিমান করে কথা বলাও ছেড়ে দিয়েছে। নিজ থেকে মোনাকে ফোন দেওয়া বা কোনো প্রকার যোগাযোগ করা সব ছেড়ে দিয়েছে। কয়েক দিন হতে চললো মোনার সাথে শ্রাবণের দেখা সাক্ষাৎ হয় না। মোনা যে অসুস্থ হয়ে কিছুদিন হসপিটালে ছিলো শ্রাবণ তার কিছুই জানেনা। জানলে হয়তো অভিমান ভেঙে মোনাকে এক নজর দেখতে আসতো। এখনো মোনাকে শ্রাবণ ভীষণ ভালোবাসে৷ মোনার কিছু হলে শ্রাবণ অনেক কষ্ট পায়। নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি মোনাকে শ্রাবণ ভালোবাসে। প্রিয় মানুষ হসপিটালের বেডে শুয়ে দিনাতিপাত করেছে অথচ শ্রাবণ তার কিছুই জানেনা। তাড়াহুড়ো করে মোনাও জানাতে পারেনি। এমন সময় মোনার ফোন এলো। শ্রাবণ সাথে সাথে ফোন রিসিভ করলো। শ্রাবণ হ্যালো বলতেই মোনা কান্না করে দিলো। শ্রাবণ বুঝতে পারছে না কেন মোনা কান্না করছে।
শ্রাবণ : কথা না বলে কান্না করছো কেন ?
মোনা : কথার ভাষা আজ হারিয়ে ফেলেছি।
শ্রাবণ : কিন্তু কেন ?
মোনা : তুমি আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ। অথচ আমাকে তুমি ভুলে গেছো। আমার সাথে তুমি যোগাযোগ করা ছেড়ে দিছো। এই কষ্ট আমাকে খুব কাঁদাচ্ছে। আমি ভাবতে পারছি না তুমি এমন করতে পারো। সত্যি ভাবতে পারছি না।
শ্রাবণ : আসলে তুমি যা ভাবছো তা নয়।
মোনা : তাহলে যোগাযোগ করা ছেড়ে দিছো কেন ?
শ্রাবণ : না তেমন কোনো কারণ নেই। আর তোমার তো এখন প্রিয় মানুষ আছে। যার সাথে তুমি সবসময় কথা বলতে পারছো। শুধু শুধু বিরক্ত করা ছেড়ে দিয়েছি। প্রিয় মানুষের সাথে তুমি ভালো থাকো এটাই চাই।
মোনা : বেশি কথা বলছো তুমি। কাছে থাকলে না গালে কষে একটা চড় বসিয়ে দিতাম বুঝলে !
শ্রাবণ : বারে আমার শক্তি নাই বুঝি !
মোনা : না নেই…
শ্রাবণ : এবার বলো তুমি কেমন আছো ?
মোনা : অসুস্থ হয়ে হসপিটালে ছিলাম কিছুদিন। তাই তোমার সাথে কথা বলতে পারিনি।
শ্রাবণ : কি বলো তুমি ? অথচ আমি তার কিছুই জানিনা। সত্যি খুব কষ্ট পেলাম। একবার আমাকে জানাতে পারতে। কাজটা তুমি ঠিক করোনি।
মোনা : আসলে অসুস্থ হয়ে অনেক কষ্টে ছিলাম। কারো সাথে কথা বলতে পারিনি। যাক বাদ দাও সে কথা।
শ্রাবণ : এখন তোমার কি অবস্থা ?
মোনা : এখন আমি অনেকটাই সুস্থ আছি। চিন্তার কোনো কারণ নেই।
শ্রাবণ : তোমাকে খুব দেখতে মন চাচ্ছে গো। মনে হচ্ছে এখনি ছুটে যাই তোমার কাছে।
মোনা : না এখন আসতে হবে না। রাত অনেক হয়েছে। কাল এসো তাহলে। এখন তাহলে ঘুমিয়ে যাও।
শ্রাবণ : আমার চোখে ঘুম নেই। সব ঘুম তুমি কেড়ে নিয়েছো।
মোনা : আমি আবার কি করলাম ?
শ্রাবণ : আমাকে তুমি নিঃস্ব করে দিয়েছো ?
মোনা : কি বলো ! কিন্তু কিভাবে ?
শ্রাবণ : আমার জীবন থেকে তুমি হারিয়ে গেছো।
মোনা : কই হারিয়ে গেলাম ? আমিতো তোমার সাথেই এখন কথা বলছি। তাহলে দূরে গেলাম কিভাবে ?
শ্রাবণ : প্রিয় মানুষ অন্যের হয়ে গেলে তখন কাছে থাকলেও দূরে মনে হয়। তুমি আজ অন্য কারো। তোমাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি প্রিয়তমা।
মোনা : এসব চিন্তা মাথা থেকে নামিয়ে ফেলো। সারা জীবন আমি তোমার সাথেই আছি। তোমাকে ছাড়া আমিও থাকতে পারবো না৷ কাগজে কলমে আমি অন্যের হয়ে গেলেও কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবো না। সেই বিশ্বাসটুকু তুমি রাখতে পারো আমার উপর। অনেক দিন তোমার কোনো কবিতা শুনি না। কবিতা লেখা কি সত্যিই ছেড়ে দিছো ?
শ্রাবণ : যার জন্য কবিতা লিখতাম সে তো আজ অন্যের হয়ে গেছে৷ আমি আর কার জন্য কবিতা লিখবো? কবিতা লেখার মানুষটাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি। তাই কবিতাও হারিয়ে গেছে আমার জীবন থেকে।
মোনা : এটা ঠিক না। আমিতো জানি কবি মানুষ প্রেমে ব্যর্থ হলে আরো বেশি প্রেমের কবিতা লেখে। আর তুমি বলছো উল্টো কথা !
শ্রাবণ : তা ঠিক আছে। তোমাকে হারানোর পর থেকে আমিও লিখেছি অনেক কষ্টের কবিতা। কিন্তু সেগুলো তোমাকে শোনাবো না। কষ্টের কবিতাগুলো একান্তই আমার। সেগুলো তোমাকে শুনিয়ে তোমার অনুভূতির মাঝে কষ্টের ভাব জাগাতে চাই না।
মোনা : তুমি এতো বেশি বোঝ কেন ? তোমার সব কবিতা আমি ভীষণ ভালোবাসি। তোমার থেকেও তোমার কবিতা বেশি পছন্দ করি আমি। সেটা তুমিও জানো। তাহলে এমন করে কথা বলছো কেন ?
শ্রাবণ : আমার কিছু ভালো লাগছে না। তোমাকে খুব মিস করতেছি।
মোনা : মিস করলেও কিছু করার নেই। এখন আর তোমাকে আসতে হবে না। আমি ফোন রাখছি তুমি তাহলে ঘুমিয়ে পড়। কাল আমাকে দেখতে এসো। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো।
শ্রাবণ : কিন্তু ফোনে কথা বলতে অনেক ভালে লাগছে।
মোনা : তাহলে ফোন দাও না কেন ?
শ্রাবণ : অভিমানে…
মোনা : কিসের অভিমান ?
শ্রাবণ : না কিছু না। থাক সে কথা।
মোনা : তুমি না খুব অদ্ভুদ প্রকৃতির একটা মানুষ। যা খুব সহজে বোঝা যায় না।
শ্রাবণ : সত্যিই কি তাই ?
মোনা : হুমমম ১০০%।
শ্রাবণ : তাহলে আর কি। হয়তো তুমিই ঠিক বলছো। আমি কিছু জানিনা।
মোনা : এতো জানতে হবে না। আমি এখন ফোন রাখছি। তুমি তাহলে ঘুমিয়ে পড়ো। কাল কথা হবে। বাসায় এসো তাহলে। ভালো থেকো বাই।
শ্রাবণ : ওকে তুমিও ভালো থাকো।
এই বলেই দু’জন ফোন রেখে দিলো। এখনো শ্রাবণ বুঝতে পারছে না মোনাকে হারিয়ে ফেলছে কিনা। কেননা মোনা সেই আগের মতোই স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছে শ্রাবণের সাথে। শ্রাবণ কোনোদিন মোনাকে ভুলতে পারবে না। যেকোনো ভাবেই মোনার জীবনে শ্রাবণ থাকতে চায়। সময় বলে দিবে মোনাকে শ্রাবণ কি হিসেবে কাছে পায়। কারণ সময়ের পরিবর্তনে অনেক কিছুই বদলে যায়। সময়ের সাথে সাথে হয়তো তাদের সম্পর্কও বদলে যেতে পারে। সেজন্য এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।
( চলবে…)