শীত পেরিয়ে প্রকৃতিতে এখন বসন্তের সমাগম। গাছে গাছে নতুন পাতা। কোকিলের মিষ্টি সুরের গানে মুখর চারপাশ। শিমূল বন ছেয়ে আছে রক্তিম ফুলের আবহে। দখিনা শীতল বাতাসে মৌ মৌ ফুলের ঘ্রাণ। পুরোদস্তুর ফাল্গুনী উৎসবে মেতে উঠেছে ধরণী। প্রতি বছর বসন্ত এলেই পৃথিবী নতুন রূপে সাজে। এজন্যই বুঝি বলা হয় ঋতুরাজ বসন্ত। ফাগুন দিনে প্রকৃতি অন্য রকম ভাবধারায় সৌন্দর্যের লালিমায় ছেয়ে যায়। প্রতি বছর চৌদ্দ ফেব্রুয়ারি এলেই কপোত-কপোতীরা ভিন্ন ভাবে মেতে উঠে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে। যথারীতি মোনার জীবনেও অসংখ্য বসন্ত এসেছে। তবে আগের কোনো বসন্ত মোনাকে ছুঁতে পারেনি। এই প্রথম মোনার জীবনে অন্য রকম বসন্ত এসেছে। প্রিয় মানুষের সাথে এবারের বসন্ত কাটাবে সেই খুশিতে মোনা ভীষণ ভাবে তৎপর। মোনার জীবনে মাঈনুল আসার পর থেকে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। মাঈনুলের প্রতি মোনা ভীষণ দুর্বল। মনে-প্রাণে মাঈনুলকে মোনা প্রিয় মানুষ হিসেবে মেনে নিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় মাঈনুলের কোনো কথা মোনা অগ্রাহ্য করতে পারে না। মাঈনুলের ইচ্ছা এবারের বসন্ত মোনার সাথে ভীষণ আনন্দের সাথে কাটাবে।
সেজন্য মাঈনুল আগে থেকেই মোনাকে বলে রেখেছে। মোনাও সেই মোতাবেক রাজি হয়েছে। মোনার জীবনে মাঈনুল আসার পর থেকে শ্রাবণের প্রতি মোনার মায়া এবং আগ্রহ অনেকটা কমে গেছে। স্বাভাবিক ভাবেই এটা হয়েছে। একজন মানুষ কখনো দু’জন মানুষের মন রক্ষা করতে পারে না। মোনার পক্ষেও সেটা সম্ভব হয়নি। মাঈনুলকে যেমন মোনা ভীষণ ভালোবাসে তেমনি রাগ বা অভিমানও করে মাঈনুলের সাথে। তবে সেই রাগ বা অভিমান কখনো দীর্ঘ রূপ নেয় না। একসময় সব শেষ হয়ে যায়। মাঈনুলের সাথে মোনা অভিমান বা রাগ করে বেশি সময় থাকতে পারে না। তবে স্বামীর কাছে রাগ বা অভিমান দেখানো স্ত্রীর অধিকার। সেই অভিমান বা রাগ স্বামী ভাঙিয়ে দিবে এটাই স্বাভাবিক। মোনা এবং মাঈনুলের মাঝেও তার ব্যতিক্রম হয় না। ফোনে আগেই বলেছিলো মোনাকে মাঈনুল সারপ্রাইজ দিবে। অবশেষে সেই সারপ্রাইজ মোনাকে দেওয়ার পালা। এসে গেলো সেই চৌদ্দ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। মোনা আপাদমস্তক সেজে-গুঁজে বাসন্তী সমাগমে মেতে উঠেছে।
খোঁপায় গুঁজেছে লাল গোলাপ ফুল। পুরো মাথা ফুলে ফুলে ভরপুর। তাক্ষ্ণ নাকে ছোট্র একটা নাকফুল পরেছে। দূর থেকে যেটা বোঝা যায় না। রেশমি কাচের চুড়িতে দু’হাত সাজানো মেহেদি রঙে। সর্বোপরি স্বর্গীয় পরীর মতো লাগছে মোনাকে। আগে থেকেই মোনাকে মাঈনুল বলেছিলো কোথায় তারা ঘুরতে বের হবে। অবশেষে সেই মোতাবক মোনা মাঈনুলের নিকট হাজির হলো। বাসা থেকে যাওয়ার সময় মোনা তার আম্মুকে সবকিছু জানিয়ে বের হলো। মাঈনুলের সাথে ঘুরে বেড়াতে বাসা থেকে কারো কোনো অভিযোগ নেই। সবাই মেনে নিয়েছে মাঈনুল মোনার হবু স্বামী। সেজন্য কারো কাছে কোনো কৈফিয়ত দিতে হয় না মোনাকে। পরীর মতো সাজে মাঈনুলের সামনে মোনা যেতেই রীতিমতো টাস্কি খেয়ে গেলো মাঈনুল। মোনার সৌন্দর্যে মাঈনুল দিশেহারা। কি বলে মোনাকে মাঈনুল বিশেষিত করবে বুঝতে পারছে না৷
মাঈনুল : এ আমি কাকে দেখছি ! বাপরে !
মোনা : থাক থাক এতো ঢং দেখাতে হবে না। কোথায় নিয়ে যাবে চলো। তোমার সাথে সারাদিন মুক্ত পাখির মতো ঘুরে বেড়াবো আজ।
মাঈনুল : আচ্ছা ঠিক আছে আমার প্রিয়তমা। এই রিক্সেওয়ালা মামা এ দিকে আসো। চলো রিক্সায় উঠি। আমি আগে উঠছি। তোমার হাতটা দাও। বসছো?
মোনা : হুমমমম।
মাঈনুল : ঠিক আছে। এই মামা চলো…
মোনা : সত্যি করে বলোতো আজ আমাকে কেমন লাগছে?
মাঈনুল : বিশ্বাস করো তোমাকে আজ ভীষণ সুন্দর লাগছে। এমনিতেই তুমি অনেক সুন্দর। আজ আরো বেশি সুন্দর লাগছে তোমাকে।
মোনা : থাক আর প্রশংসা করতে হবে না। তোমাকেও আজ খুব সুন্দর লাগছে। বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবিতে তোমাকে অনেক মানিয়েছে।
মাঈনুল : তাই !
মোনা : হুমমম…
মাঈনুল : তোমার হাতটা দাও…
মোনা : হুমমম এই নাও…
মাঈনুল : খুব সুন্দর তোমার হাত। সরু আঙুলগুলোও অনেক সুন্দর। মোমের মতো নরম তোমার হাত। রিংটা তোমার হাতে খুব মানিয়েছে। এই রিংটা আমার পছন্দ মতো কিনেছিলাম তোমার হাতে পরানোর জন্য।
মোনা : তোমার পছন্দের তারিফ করতে হয়।
মাঈনুল : থাক কিছু বলতে হবে না।
মোনা : তুমি একটা প্রেমিক মানুষ। তোমার মাঝে অনেক প্রেম। তোমার এই প্রেমে আমি প্রেমাবতী। আমাকে ভীষণ দুর্বল করেছে তোমার এই প্রেম। সারা জীবন এমনি ভালোবাসায় আমাকে আগলে রেখো। কখনো একা করে দিওনা। অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে।
মাঈনুল : আমিও ভীষণ ভালোবাসি তোমাকে প্রাণের প্রিয়তমা। এই মামা দাড়াও। এখানেই নামবো। নামো, এসে গেছি আমরা।
মোনা : তুমি আমাকে এটা কোথায় নিয়ে এলে গো ?
মাঈনুল : এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। সামনেই অমর একুশে বইমেলা। সেখানে গেলে তোমার অনেক ভালো লাগবে। অনেক বড় বড় কবি-সাহিত্যিকদের সেখানে তুমি দেখতে পাবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস নতুন মলাটের বই দেখে তোমার আরো বেশি ভালো লাগবে।
মোনা : ছোটবেলা থেকেই আমার একুশে বইমেলা দেখার খুব ইচ্ছে ছিলো। আজ এভাবে সেই ইচ্ছা পূরণ হতে চলেছে ভাবতেই আমার খুব ভালো লাগছে। চলো তাহলে সামনে।
মাঈনুল : ওকে চলো। তোমার সব ভালো লাগাকেই আমি খুব প্রাধান্য দিবো। বিয়ের পর যখন তোমার যা করতে মন চাইবে তাই বলবে। তোমার সব ইচ্ছে আমি ধারাবাহিকভাবে পূরণ করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
মোনা : সত্যি বলতে তোমার মতো স্বামী পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমি অনেক সৌভাগ্যবান তোমার মতো এতো ভালো একটা জামাই পেতে চলেছি।
মাঈনুল : আমিও অনেক সৌভাগ্যবান তোমার মতো এতো ভালোবাসাময় বউ পেতে যাচ্ছি। যার পুরো শরীর জুড়ে প্রেমের আবর্তন।
মোনা : হয়েছে হয়েছে। আর গভীরে যেতে হবে না।
মাঈনুল : হা হা হা…ঠিক আছে। এইতো এসে পড়েছি অমর একুশে বইমেলায়।
মোনা : ওয়াও এতো মানুষ এখানে। বইমেলা এতো বিশাল এলাকা জুড়ে হয় আমার জানা ছিলো না। চারদিকে দেখি শত শত নতুন বইয়ের প্রকাশনীর স্টল।
মাঈনুল : পুরো বইমেলা তোমাকে ঘুরিয়ে দেখাবো। তোমার পছন্দের সব লেখকের বই কিনে উপর দিবো তোমাকে।
মোনা : ওকে ঠিক আছে। কতো শত মেয়ে মানুষের উপস্থিতি এখানে। সবাই কতো সুন্দর করে সেজে-গুঁজে এসেছে। আমার কাছে এই ভালোলাগার কোনো শেষ নেই।
মাঈনুল : আচ্ছা আচ্ছা। খুব ক্ষিধে পেয়েছে, চলো আমরা আগে কিছু খেয়ে নেই। তুমি কি খাবে বলো?
মোনা : বিশেষ কোনো পছন্দ নেই। তুমি যা খাওয়াবে তাই।
মাঈনুল : ঠিক আছে। তাহলে চলো হালিম খাই। এটা আমার খুব পছন্দের খাবার।
মোনা : ঠিক আছে।
মাঈনুল : খাওয়া তো হলো। এবার তাহলে পুরো বইমেলা ঘুরে ঘুরে তোমাকে নতুন বই দেখবো আর পছন্দের কিছু লেখকের বই কিনবো। হুমায়ুন আহমেদ এবং আনিসুল হকের কিছু বই কিনবো। যে বইগুলো আমার সংগ্রহে নেই।
মোনা : আমার প্রিয় বন্ধু শ্রাবণের বই খুঁজতে হবে। এবারের বইমেলায় ওর নাকি নতুন একটা কাব্যগ্রন্থ আসবে। যে কাব্যগ্রন্থের নাম ‘সীমার মাঝে অসীম তুমি’। যে কাব্যগ্রন্থের নামটা আমিই পছন্দ করে দিয়েছিলাম। তবে কবিতাগুলো কখনো আমার পড়া হয়নি। বইটি সংগ্রহ করতে হবে।
মাঈনুল : তুমি কি সেই প্রকাশনীর স্টল নং জানো ? জানলে বইটি খুঁজে পেতে সুবিধা হবে।
মোনা : দাড়াও আমি ফোন দিয়ে জেনে নেই। ওহহহ ফোন তো বন্ধ দেখি। এবার তাহলে কি হবে।
মাঈনুল : আচ্ছা সমস্যা নেই। চলো সবগুলো স্টলে খুঁজতে থাকি পেয়ে যাবো।
মোনা : তাই করতে হবে। তাছাড়া কোনো উপায় নেই যে। ওর লেখা কবিতা/গল্প আমাকে খুব টানে। খুব ভালো লাগে আমার শ্রাবণের কোনো লেখা পড়তে।
মাঈনুল : টেনশন করো না। এক সময় খুজে পাবোনি। এই যে পেয়ে গেছি তোমার সেই কাঙ্খিত বই।
মোনা : দেখি দেখি। ওয়াও প্রচ্ছদ অনেক সুন্দর হয়েছে তো। প্রকাশনীর মানও অনেক ভালো। ঝকঝকে লেখার ছাপ।
মাঈনুল : হুমমম বইটা এখন তোমার। আমি মূল্য পরিশোধ করে দিচ্ছি। শ্রাবণ সাহেব এখানে থাকলে তার অটোগ্রাফ নিতে পারতে। প্রিয় কোনো লেখকের অটোগ্রাফ নিতে আমার অনেক ভালো লাগে।
মোনা : সে আমারো। তবে সমস্যা নেই। এক সময় নিয়ে নিবো ওর অটোগ্রাফ। সে তো আমার কাছের মানুষ। এটা নিয়ে তোমাকে এতো ভাবতে হবে না।
মাঈনুল : হুমমম বুঝতে পারছি। এবার চলো আমার প্রিয় লেখকের বই সংগ্রহের পালা।
মোনা : আচ্ছা তাই চলো…
মাঈনুল এবং মোনা অমর একুশে বইমেলায় খুব মেতে আছে। অনেক ভালো সময় কাটাচ্ছে তারা। হতে পারে মোনা আজকে তার স্বপ্নের মতোই সময় কাটাচ্ছে প্রিয় মানুষের সাথে। মোনা এবং মাঈনুল বইমেলা থাকা অবস্থায় একটা আননোন নাম্বার থেকে মোনার ফোনে কল এলো। সাথে সাথে মোনা ফোন রিসিভ করলো।
মোনা : হ্যালো কে বলছেন ?
-আপনি কি এই ফোন নাম্বারের মালিককে চেনেন ?
মোনা : হ্যা চিনি তো। ওর নাম শ্রাবণ।
– ঘণ্টা খানেক আগে সে গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে। হসপিটালে এসে মৃত্যু বরণ করেছে। এখন তার লাশ ঢাকা মেডিকেল হসপিটালের মর্গে রাখা আছে। এখন পর্যন্ত তার পরিচিত কেউ আসেনি। আপনি প্লিজ তার আত্মীয় স্বজনদের বিষয়টা জানিয়ে দিবেন। ফোন রাখছি আমি।
শ্রাবণের মৃত্যুর কথা মোনা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না। দুঃসংবাদটা পেয়ে সাথে সাথে মোনা এবং মাঈনুল হসপিটালের দিকে রওনা হলো। অমর একুশে বইমেলার কাছেই ঢাকা মেডিকেল হসপিটাল। ফলে আসতে বেশি সময় লাগেনি। মোনা এবং মাঈনুল এসেই দেখে শ্রাবণের রক্তাক্ত লাশটা সাদা কাপড়ে ঢাকা রয়েছে। হসপিটালের লোকজন শ্রাবণের লাশটা চিনিয়ে দিয়েছে। মোনা শ্রাবণের মুখ থেকে কাপড় সরাতেই কলিজায় আঘাত পেলো। প্রিয় মানুষটা লাশ হয়ে মর্গে শুয়ে আছে নীরব হয়ে। মোনার দু’চোখ জলে ভিজে গেছে। শ্রাবণের পুরো শরীর রক্তে ভিজে আছে। মাথায় আঘাত পেয়েছে। শ্রাবণের এই অসময় চলে যাওয়াটা মোনা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছে না। ভিতর থেকে কান্না চলে আসছে মোনার। মোনার কান্না দেখে মাঈনুলও খুব অসহায় হয়ে পড়ছে।
কিছুতেই মাঈনুল মোনাকে স্বাভাবিক করতে পারছে না। প্রায় ঘণ্টা খানেক পর শ্রাবণের বাসা থেকে লোক চলে এলো। সবাই শ্রাবণের লাশ দেখে হতবাক হলো। পুরো হসপিটাল জুড়ে কান্নার রোল পড়ে গেলে। সংবাদ কর্মীরাও চলে এসেছে কবি শ্রাবণের মৃত্যুর খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করার জন্য। অল্প সময়েই শ্রাবণ তার চমৎকার লিখনির মাধ্যমে পাঠক মনে জায়গা করে নিয়েছিলো। মুহূর্তেই সেটা থেমে গেলে৷ নতুন কোনো লেখা আর বের হবে না। শ্রাবণকে হারিয়ে মোনা জীবনের সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছে। এই কষ্টের কথা মোনার সারা জীবন মনে থাকবে। এতো কাছের মানুষটাকে মোনা হারিয়ে ফেলেছে। মোনার অন্তর জুড়ে শ্রাবণ থাকলেও মন থেকে কখনো প্রেমিক হিসেবে মানতে পারেনি। তবুও শ্রাবণের মৃত্যুতে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে। নিজের সবকিছু ভুলে গেছে মোনা। এমনকি মাঈনুলের সাথেও মোনা স্বাভাবিক ব্যবহার করতে পারছে না। পাঠকের ভালোবাসায় স্থানীয় কবর স্থানে শ্রাবণকে দাফন করা হয়েছে। শ্রাবণের মৃত্যুতে তার মা খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। সন্তান হারানোর শোক কতোটা কষ্টের মা ছাড়া কেউ জানে না। নিয়তি খুব কঠিন ভাবে শ্রাবণকে কেড়ে নিয়েছে।
মোনার বিয়ে ঠিক হওয়ার পরে মানসিক ভাবে শ্রাবণ ভেঙে পড়েছিলো। প্রিয় মানুষকে অন্য কারো হতে দেখবে এটা শ্রাবণ কিছুতেই সহ্য করতে পারবে না। তার চেয়ে এমন করুণ মৃত্যু হওয়ায় বেঁচে গেছে শ্রাবণ। সুখে থাক সবাই। ‘সীমার মাঝে অসীম তুমি’ বইটি শ্রাবণ মোনাকে উৎসর্গ করেছে। সবগুলো কবিতা বিরহ বেদনায় ভরপুর। মোনাকে হারানোর বিরহে সবগুলো কবিতা লিখেছিলো শ্রাবণ। বইটি পড়ে মোনা বুঝতে পেরেছে সবগুলো কবিতা তাকে নিয়েই লেখা। প্রতিদিন মাঝরাতে মোনা শ্রাবণের বই বুকে জড়িয়ে গভীর ক্রন্দনে কান্না করে। শ্রাবণের সব স্মৃতি মোনাকে ভীষণ ভাবে আঘাত করে। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে মোনা। থেমে গেছে স্বাভাবিক জীবন প্রবাহ। সবকিছু বদলে গেছে মোনার জীবনে শ্রাবণকে হারিয়ে। বিপরীতে শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে শ্রাবণ সাদা কাপনে মোড়া মাটির বিছানায়। এই শান্তি এবং ঘুম অনন্তকালের। শ্রাবণের মৃত্যুর পর মোনা বুঝেছে শ্রাবণ তার কতোটা জায়গা জুড়ে ছিলো। শ্রাবণের ভালোবাসা বুঝতেও মোনা অনেক দেরি করে ফেলেছে।
যখন বুঝেও কোনো কাজ নেই। শ্রাবণের কোনো অস্তিত্ব আর পৃথিবী জুড়ে নেই। শ্রাবণকে হারিয়ে মোনা শূন্যতার জগতে ডুবে গেছে। সেখান থেকে মোনাকে উদ্ধার করতে পারবে এমন কেউ নেই। ভালোবাসার সমীকরণ মোনার জীবনে অন্য রকম ভাবে ধরা দিয়েছে। যার কোনো সীমা পরিসীমা নেই। যথারীতি থেমে গেছে মোনার জীবন। শ্রাবণের মৃত্যু মোনাকেও মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে গেছে। যেখান থেকে ফিরে আসার মতো কোনো সুযোগ নেই। মিয়তি খুব শক্ত ভাবে মোনাকে গ্রাস করেছে। থামিয়ে দিয়েছে মোনার জীবন প্রবাহ। এখন শুধু মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা। হাসি-খুশি মোনার জীবন মুহূর্তেই বিষাদে ডুবে গেছে শ্রাবণের মৃত্যুতে। যেটা অনেক কষ্টের, অনেক বেদনার, অনেক বেশি শোকাবহ !
(সমাপ্ত…)