ভালোবাসার সমীকরণ (৫ম পর্ব)
জাকির আলম
চৌহালী, সিরাজগঞ্জ
বেশ কয়েক দিন ধরে মোনার সাথে শ্রাবণের কোনো দেখা নেই। ফোনে অবশ্য সবসময় ওদের কথা হয়। কিন্তু সরাসরি দেখা না হওয়াতে শ্রাবণ অস্থির হয়ে যায় তার প্রিয় মানুষ মোনাকে দেখার জন্য। কয়েক দিনের জন্য মোনা গাজীপুর বেড়াতে গেছে বড় বোনের বাসায়। তো এই কয়েক দিন মোনাকে শ্রাবণ দেখতে না পেয়ে করে বসে তুলকালাম কাণ্ড। সরাসরি শ্রাবণ উপস্থিত হয় গাজীপুর মোনার কাছে। কিন্তু মোনা যেন কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না। মোনার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হলো। অবশ্য এটাই মনে হওয়ার কথা। কোনো প্রকার ঠিকানা ছাড়া শ্রাবণ কেমন করে মোনার কাছে গেলো তা অনেক বিস্ময়ের ব্যাপার। অবশ্য মোনাকে অবাক করার জন্যই শ্রাবণের এই কঠিন অভিযান। তারপর মোনার বোনও রীতিমতো অবাক শ্রাবণকে দেখে। মোনার বোন অবশ্য শ্রাবণকে অনেক আগে থেকেই চেনে। ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করে মোনার বড় বোন শ্রাবণকে। মোনার কাছে শ্রাবণ যাওয়ার একটা বড় কারণ আছে। কিন্তু মোনা কিছুতেই আন্দাজ করতে পারেনি। মোনা ভুলেই গেছে ৮/৩ ওর শুভ জন্মদিন। মোনা শ্রাবণের একমাত্র প্রিয় মানুষ হওয়ায় ভুলে যায়নি জন্মদিনের কথা। মোনার সবকিছু শ্রাবণের একেবারে আত্মস্থ। সবকিছু অক্ষরে অক্ষরে মনে রাখে। তাই ভুলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মোনার জন্মদিন উপলক্ষে স্পেশাল কেক, ফুলের মুকুট এবং বিভিন্ন প্রকার উপহার সামগ্রী নিয়ে সরাসরি মোনার কাছে উপস্থিত। তারপর সবাই অনেক আনন্দের মধ্যে মোনার জন্মদিন পালন করে কেট কাটার মধ্য দিয়ে। জন্মদিনের আয়োজন বেশ আড়ম্বরপূর্ণ ছিলো। অনেকটা সাজানো গোজানে। মোনা খুব খুশি হয়েছে শ্রাবণের এই কাণ্ড দেখে। এজন্যই মোনা শ্রাবণকে এতো বেশি পছন্দ করে প্রিয় বন্ধু হিসেবে। যদিও জন্মদিন নিয়ে মোনার তেমন আগ্রহ নেই, কিন্তু প্রিয় বন্ধুর ভালোবাসার কাছে মুগ্ধ না হয়ে পারেনি। পরের দিন গাজীপুর শহরে বিশেষ কোনো জায়গায় দু’জন মিলে বেড়াতে যায়। গল্প কথায় কাটতে থাকে সুন্দর সময়। জন্মদিনের পোশাকে মোনাকে একদম পরীর মতো সুন্দর লাগছিলো। শ্রাবণ সেটা অবাক বিস্ময়ে অবলোকন করছিলো।
মোনা : আচ্ছা শ্রাবণ বলোতো আজ আমাকে কেমন লাগছে ?
শ্রাবণ : সাক্ষাৎ ডানা কাটা নীল পরী। মানুষ এতো সুন্দর হয় কোনোদিন ভাবতে পারিনি।
মোনা : ( শ্রাবণের কথায় মোনা খুব লজ্জা পেলো। কিছু সময় ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছিলো।) তুমি যতোটা ভাবছো ততোটা নয় কিন্তু। থাক আমাকে খুশি করার জন্য বলতে হবে না।
শ্রাবণ : কি বলো প্রিয়তমা ! সত্যি বলছি আমি। ভীষণ সুন্দর লাগছে তোমাকে…মো
না : হুমমম বুঝলাম। তো কি খাবে বলো…
শ্রাবণ : আজ আমি তোমাকে খাওয়াবো। তুমি বলো কি খাবে তুমি…
মোনা : ওকে ঠিক আছে। তাই হবে। চলো ফুচকা খাবো বেশি ঝাল দিয়ে।
শ্রাবণ : ওকে চলো।
দু’জনে ফুচকা খেলো অনেক আনন্দ করে। একে অপরকে ফুশকা খাইয়ে দিতেও ফুল করেনি তারা। নানা প্রকার খুনসুটিতে মেতে ছিলো। শ্রাবণ এবং মোনা যখন একত্র হয় স্বর্গ যেন ওদের আশেপাশে খেলা করে। আনন্দ মুখর সময় হয়ে উঠে রীতিমতো ভালোগালার আচ্ছন্নতায়। ওদের আনন্দ যেন ধরে না। এমন যুগল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে না জানি কতো আরো আনন্দ মুখর হতো দাম্পত্য জীবন। নানা খুনসুটিতে বিভোর হয়ে আনন্দ মনে তারা কাটিয়ে দিলো আরো একটি দিন। সারাদিন দু’জনে একত্র হয়ে আনন্দ ঘন সময় কাটিয়ে ফিরে গেলো বাসায়। মোনার বোনের বাসায় দু’দিন কাটিয়ে শ্রাবণ তার নিজ বাসায় চলে এলো। কিন্তু মোনা আরো কিছুদিনের জন্য তার বোনের বাসায় রয়ে গেলো। যদিও মোনাকে শ্রাবণ সাথে নিয়ে আসার জন্য বারংবার অনুরোধ করছিলো। কিন্তু মোনার কিছু কাজ থাকায় শ্রাবণের সাথে আসতে পারেনি। তাই শ্রাবণ একাই চলে এলো এক প্রকার অভিমান নিয়ে। মোনাকে ছাড়া শ্রাবণ যেন একেবারে নিঃসঙ্গ। জোড়াতালির একটা মানুষ। মোনাও সেটা খুব ভালো করে জানে। জানে বলেই শ্রাবণকে এতো আগলে রাখে। কখনো চোখের আড়াল হতে দেয় না। বন্ধুত্বের ভালোবাসায় সারাক্ষণ কাছাকাছি রাখে শ্রাবণকে। মোনাও যেন শ্রাবণকে ছাড়া দিশেহারা। সবসময় শ্রাবণের ডাকে সাড়া দিতে তৎপর। যেকোনো প্রয়োজনে সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে থাকে। বলা যায় দু’জন দু’জনের জন্য জীবন দিতেও কোনো দ্বিধা নেই। এতো বেশি ভালোবাসা দু’জনের প্রতি। যদিও দু’জনের ভালোবাসায় অনেক তফাৎ রয়েছে। প্রিয় পাঠক সে তফাৎ আপনারাও জানেন। শ্রাবণ চায় মোনা তার জীবন সাথী হোক। অপর দিকে মোনা চায় শ্রাবণ তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু হয়ে আজীবন পাশে থাক। এই দুইয়ের সমন্বয়ে এগিয়ে চলেছে গল্পের প্লট। ভাগ্য তাদের কোথায় নিয়ে যাবে সেটা সময় বলে দিবে।
মোনা : (এমন সময় মোনার ফোন এলো শ্রাবণের ফোনে।) শ্রাবণ তুমি এখন কই ?
শ্রাবণ : মাত্র বাসায় এলাম…
মোনা : বাসায় যেতে রাস্তায় কোনো সমস্যা হয়নি তো ?
শ্রাবণ : না। আল্লাহর রহমতে ভালো ভাবেই এসেছি।
মোনা : আলহামদুলিল্লাহ। রেস্ট নাও তাহলে…
শ্রাবণ : হুমমম। এই শোনো না…
মোনা : হুমমম বলো…
শ্রাবণ : তোমাকে খুব মিস করতেছি…
মোনা : তাই…
শ্রাবণ : হুমমম। বিশ্বাস হয় না তোমার…
মোনা : হুমমম অবশ্যই।
শ্রাবণ : বাসায় কবে আসবে ?
মোনা : সামনে শনিবার।
শ্রাবণ : এ কয়েক দিন খুব কষ্ট হবে তোমাকে না দেখে কাটাতে। খুব মিস করবো প্রিয়তমা…
মোনা : এতো অধৈর্য হলে হয় বলো ! মাত্র তো কয়েকটা দিন।
শ্রাবণ : তবুও। তোমাকে না দেখে প্রতিটি মুহূর্তে আমার কষ্ট হয়। কিচ্ছু ভালো লাগে না…
মোনা : আচ্ছা ঠিক আছে। খুব শীঘ্রই আসতেছি বন্ধু…এখন তাহলে রাখি। পরে কথা হবে। গোসল করে নামাজ পড়বো। মসজিদে যোহরের আজান হচ্ছে। ভালো থাকো। বাই…
শ্রাবণ : ওকে বাই। মিস ইউ বেবি…
মোনা : হুমমম…
এখানেই তাদের গল্পের শেষ নয়। তাদের গল্পের শেষ হতে বাকি আছে আরো অনেকটা পথ। পাড়ি দিতে হবে আস্ত এক সমুদ্র। গন্তব্য অনেকটা পথ। সে পর্যন্ত সাথেই থাকুন প্রিয় পাঠক।
(চলবে…)