1. admin@ichchashakti.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৩ অপরাহ্ন

ভালোবাসার সমীকরণ — জাকির আলম  

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২৫ বার পঠিত

ভালোবাসার সমীকরণ (নবম পর্ব)

জাকির আলম  

 

মোনা : আম্মু আমি তাহলে চলি।

আম্মু : সে কি খাবার শেষ করে যা…

মোনা : সময় একদম কম। এখন আর খাওয়ার সময় নেই আম্মু। আর হ্যা আম্মু আমার বাসায় ফিরতে একটু দেরি হতে পারে। ক্যাম্পাসে কাজ আছে। তুমি আবার টেনশন করো না কিন্তু।

আম্মু : ঠিক আছে। কাজ শেষ করেই বাসায় চলে আসিস। দেরি করিস না।

মোনা : ওকে আম্মু। বাই…

আম্মু : আচ্ছা দেখে যাস…

মোনা : হুমমম।

মোনা রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে। রিক্সা পেতে একটু দেরি হচ্ছে। সব রিক্সা আজ যাত্রী ভর্তি। খালি কোনো রিক্সা পাচ্ছে না মোনা। খানিক অপেক্ষা করার পর একটা খালি রিক্সা পেলো মোনা।

মোনা : এই মামা এদিকে আসেন। সামনের মোড়ে চলেন।

তারপর মোনা রিক্সা যোগে গন্তব্য স্থলে পোঁছালে রিক্সাওয়ালাকে রিক্সা থামাতে বলে। মামা রাখেন। ত্রিশ টাকা ভাড়ার জায়গায় পঞ্চাশ টাকা দিতে হলো। মোনার কাছে খুচরা টাকা না থাকায়। রিক্সাওয়ালা মামার কাছেও ভাংতি টাকা না থাকায় পঞ্চাশ টাকা ধরেই দিতে হলো। এর জন্য অবশ্য মোনা কোনো মন খারাপ করলো না। হাসি মুখেই রিক্সাওয়ালাকে বললো- মামা ঠিক আছে আপনি তাহলে যান। বাকি টাকা দিতে হবে না।

এমতাবস্থায় মোনার ফোনে শ্রাবণের কল আসে।

মোনা : হ্যা বলো…

শ্রাবণ : এখন তুমি কোথায় ?

মোনা : আমি ক্যাম্পাসে যাচ্ছি। দুই ঘণ্টা পর বের হবো ক্যাম্পাস থেকে। তুমি কফি-শপে আমার জন্য ওয়েট করো। ক্লাস শেষ করেই আমি তোমার ওখানে যাবো। এখন রাখি বাই…

শ্রাবণ :  ওকে ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি এসো।

এই বলে শ্রাবণও ফোন কেটে  দিলো। শ্রাবণের কাজ শেষে দুই ঘণ্টার আগেই শহরের কফি-শপে গিয়ে মোনার জন্য ওয়েট করছে। দুই ঘণ্টা অতিবাহিত হয়ে গেলেও মোনার কোনো খবর নেই। এই অবস্থায় শ্রাবণ খুব বোরিং ফিল করছে। মোনাকে শ্রাবণ ফোন দিলো।

মোনা : হুমমম বলো…

শ্রাবণ : এই কো তুমি ?  এতো দেরি হচ্ছে কেন ?

মোনা : আর বলো না গো। রাস্তায় খুব জ্যাম। এই আর পাঁচ মিনিট লাগবে।

শ্রাবণ : তাড়াতাড়ি এসো। একা একা ভালো লাগছে না।

মোনা : হুমমম আসতেছি। একটু ওয়েট করো।

শ্রাবণ : রাগের মাথায় বোরিং হয়ে বললো-আচ্ছা এসো…

অতঃপর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই মোনা শ্রাবণের নিকট হাজির এলো।

মোনা : এই কি খবর তোমার ?

শ্রাবণ : কথা নাই তোমার সাথে। সেই কখন থেকে তোমার জন্য ওয়েট করছি। তোমার কোনো খবর নেই। একা খুব বোরিং লাগছিলো।

মোনা : সরি গো। রাস্তায় খুব জ্যামে পড়ছিলাম…

শ্রাবণ : আচ্ছা ওসব বাদ দাও।

মোনা : কি খাবে বলো ?

শ্রাবণ : তুমি যেটা খাবে সেটাই…

মোনা : ওকে।

এমতাবস্থায় খাবারের মেন্যু চলে এলো।

ওয়েটারকে ডেকে মোনা চাইনিস বার্গার আর কোক ওয়ার্ডার করলো। সাথে সাথে খাবার চলে এলো। দু’জনে খেতে আরম্ভ করলো কাটা চামিচ দিয়ে। কয়েক বার মোনাকে শ্রাবণ চামিচ দিয়ে খাইয়ে দিলো। মোনা একটু লাজুক মুখেই খেলো। শ্রাবণকে খাইয়ে দিতে মোনার ভীষণ লজ্জা তাই খাইয়ে দিতে পারেনি। কিন্তু মোনাকে শ্রাবণ খাইয়ে দিয়েই ছেড়েছে। খাওয়া শেষ হতেই শ্রাবণ টাকা বের করলো খাবারের বিল পরিশোধ  করার জন্য। কিন্তু মোনা শ্রাবণকে টাকা দিতে নিষেধ করলো। বললো টাকা আমি দিবো কবি সাহেব। তোমার দিতে হবে না। টাকা মানি ব্যাগে রেখে দাও। কোনো মতেই শ্রাবণকে মোনা টাকা দিতে দিলো না। শ্রাবণ মোনার জোরাজোরিতে টাকা মানি ব্যাগে রেখে দিলো। মোনাই বিল পরিশোধ করলো।

মোনা : চলো এখান থেকে…

শ্রাবণ : হুমমম চলো। কই যাবো এখন ?

মোনা : শপিং এ চলো। কিছু কেনাকাটা করতে হবে।

শ্রাবণ : আচ্ছা চলো তাহলে…

রাস্তায় দু’জনে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে। খানিক পরেই রিক্সায় চড়ে তারা শপিং এর দিকে যাচ্ছে। রিক্সাওয়ালাকে মোনা ডেকে বললো-মামা সামনের শপিংএর সামনে চলেন। ওখানে নামিয়ে দিবেন। শ্রাবণ এবং মোনা রিক্সায় পাশাপাশি বসে গল্প কথায় চলেছে শহরের রাস্তায়। নানা খুনসুটিতে খুব চমৎকার মুহূর্ত অতিবাহিত করছে তারা। রিক্সায় যেতে যেতে শ্রাবণের কবিতা শোনার নেশা জেগে উঠলো মোনার মাথায়। এতে করে শ্রাবণ মনে মনে কিছুটা বিব্রত বোধ করলেও মোনার অনুরোধ রক্ষা করলো। মোনা চোখে চশমা পরেছে। সুন্দর ড্রেস-আপে অন্য রকম লাগছিলো মোনাকে। এর মধ্যে শ্রাবণ একটি কবিতা বানিয়ে ফেললো মনে মনে।

মোনা :  হুমমম এবার তাহলে কবিতা শোনাও…

শ্রাবণ : তুমি আমার প্রেমে না পড়ে আমার কবিতার প্রেমে পড়লে কেন ? আমার প্রেমে পড়লে তো হাজার হাজার কবিতা লিখে ফেলতাম তোমাকে নিয়ে।

মোনা : তাই কম কিসের!  আমাকে নিয়ে তো কতোই কবিতা লিখছো তুমি !

শ্রাবণ : আমার সব কবিতা শুধু তুমি কেন্দ্রিক। তোমাকে ছাড়া লিখতে পারিনা গো…

মোনা : আর কথা না বাড়িয়ে কবিতা শোনাও। পরে কথাবলি।

শ্রাবণ : হা হা হা… ঠিক আছে…

 

পথ চলেছি এই শহরে গন্তব্য নেই জানা

তোমার সাথে হারিয়ে যেতে আজকে নেই মানা।

ইট-পাথরের দালান কোঠা লোকের সমাগম

পিচ ঢালা পথের দিশায় তোমার আলিঙ্গন।

 

বাঁকা ঠোঁটে মায়ার হাসি আলতো রোদের ছাপ

চলতি পথে খুঁজে চলি তোমার পায়ের ধাপ।

চশমা পরা কাজল চোখে চক্রবালের খোঁজ

তোমার মাঝে হারিয়ে যাই মনের সুখে রোজ।

 

গল্প কথায় কফি-শপে সুখের প্রহর কাটে

ভালোবাসার মায়াজালে জড়াই তোমার শাটে।

চন্দ্রতলে দিঘির জলে দশ আঙুলের প্রেম

চমকদার আলোর খাদে ঝরে রাতের হেম।

 

নগরমুখী লোকের ভিড়ে কোলাহলের ধ্বনি

চাকচিক্যের সুরের মোহে তোমার বাদ্য শুনি।

নেই পিছুটান এই শহরে দ্বন্দ্ব পথে চলা

তোমার কাছে হয়নি কভুও ভালোবাসি বলা।

 

মোনা : এই কবিতাটি আমার কাছে বেস্ট লাগছে।  তুমি পারো বটে। একদম এই পরিস্থিতির সাথে মিল আছে কবিতাটির। কি অদ্ভুত গো তুমি !

শ্রাবণ : এতো সুন্দর করে তুমি বলো – ভীষণ ভালো লাগে তোমার কথা শুনতে। তুমি আমার জীবনে না এলে এতো কবিতা লিখতে পারতাম না জানি।

মোনা : হা হা হা এর জন্য আমাকে ধন্যবাদ দাও।

শ্রাবণ : কেন ?

মোনা : এইযে আমার জন্য লেখক হতে পেরেছো। আসলে আমি মজা করছিলাম – লেখালেখি ব্যাপারটা খোদা প্রদত্ত। যা সবাই লিখতে পারেনা। অনেকেই লিখতে চায় কিন্তু পারেনা। যেমন আমি নিজেই চেষ্টা করি তোমার মতো লিখতে, কিন্তু পারিনা। সত্যি তুমি অনেক ভালো লিখো। তোমার লেখায় আমি অভিভূত।

শ্রাবণ : থাক থাক আর পাম দিওনা। আমি ফুলে যাচ্ছি।

মোনা : কি বলো – পাম দিবো কেন ?  আমিতো সত্যিই বলছি।

শ্রাবণ : এই দেখো চলে এসেছি শপিং এর সামনে।

মোনা রিক্সাওয়ালাকে বামে রাখতে বললো। রিক্সার ভাড়াও শ্রাবণকে মোনা দিতে দিলো না। মোনাই দিয়ে দিলো রিক্সার ভাড়া।

মোনা : চলো শপিং এর ভিতরে যাই…

শ্রাবণ : হুমমম চলো…

দু’জনে সারা শপিং মল ঘুরেঘুরে দেখছে পছন্দের জিনিস কেনার জন্য। ঘুরতে ঘুরতে প্রথমেই মোনার জন্য একটা থ্রি পিছ আর ওড়না ক্রয় করলো। কেনার পর সেগুলো শ্রাবণের হাতে রাখতে দিলো। এবার শ্রাবণকে কিনে দেওয়ার পালা। দু’জনের পছন্দ মতো একটা জিন্সের প্যান্ট আর ব্রান্ডের দামি শার্ট ক্রয় করলো। শ্রাবণ জানেনা তাকে দিতেই মোনা এগুলো ক্রয় করেছে। মোনাও শ্রাবণকে কিছু বলেনি। তবে শার্ট এবং প্যান্ট শ্রাবণের পছন্দ মতোই কেনা। কেনাকাটা শেষে এবার বাসায় ফেরার পালা। তারপর দু’জনে রিক্সা যোগে বাসার পথ ধরেছে। নানা গল্প কথায় শহরের পথ চলছে তারা। আনন্দের কোনো সীমাপরিসীমা নেই। বাসার খুব কাছাকাছি এসে মোনা শার্ট এবং প্যান্ট শ্রাবণের হাতে দিয়ে বললো – এগুলো তোমার। তোমার জন্যই কিনেছি নাও। শ্রাবণ যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না এগুলো মোনা তার জন্য কিনেছে। শ্রাবণ কিছুটা ঘোরের মধ্যে থেকে হাসি মুখে সেগুলো নিলো। এই উপহারের জন্য মোনাকে শ্রাবণ ধন্যবাদ না দিয়ে পারলো না।

অতঃপর দু’জনে হাসি আনন্দ ভাগাভাগি করে চলে গেলো যার যার বাসায়। আনন্দময় আরো একটি দিন কেটে গেলো তাদের।

 

(চলবে…)

 

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park