1. admin@ichchashakti.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৩ অপরাহ্ন

ভালোবাসার সমীকরণ — জাকির আলম

  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২৩ বার পঠিত

তখন মাঝ রাত। ঘড়ির কাটায় ঠিক রাত বারোটা বেজে কুড়ি মিনিট। এমন সময় মোনা বিড়ালের সাথে খুনসুটি করতে ব্যস্ত। বিড়াল পোষা মোনার খুব প্রিয়। যে বিড়ালটির সাথে মোনা সময় পার করছে তার নাম টুসি।  টুসি নামটা মোনাই রেখেছে। মোনা সবসময় টুসি নামেই ডাকে। টুসি বলে ডাকলে বিড়ালটি সাথে সাথে সাড়া দেয়। হেমন্তের রাত। বাহিরে হালকা শিশির বিন্দু টুপটাপ ঝরে পড়ছে টিনের চালে। হালকা শীতের রাতে একটা কাঁথা গায়ে দিয়ে টুসিকে নিয়ে মোনা বিছানায় শুতেই শ্রাবণের ফোন এলো। সাথে সাথে মোনা শ্রাবণের ফোন কল পিক-আপ করলো।

মোনা : হ্যালো কবি সাহেব কি অবস্থা তোমার ?

শ্রাবণ : ভালো না। খুব মন খারাপ আমার !

মোনা : হঠাৎ মন খারাপের কারণ কি ?

শ্রাবণ : থাকে না কতো কারণ ?

মোনা : কেন তোমার মন খারাপ আমার মন জানতে চায়।

শ্রাবণ : তোমাকে খুব দেখতে মন চাচ্ছে গো…

মোনা : তুমি কিন্তু আমার কথা এড়িয়ে গেলে…

শ্রাবণ : বাদ দেই ওসব…

মোনা : কি করতেছিলে এতো রাতে ?

শ্রাবণ : বিছানায় শুয়ে আছি। বাট চোখে ঘুম আসছে না। তোমার কথা খুব মনে পড়ছে…

মোনা : তাহলে বাসায় চলে আসো…

শ্রাবণ : নাহহহ এখন যাবো না।

মোনা : তাহলে ভদ্র ছেলের মতো ঘুমিয়ে যাও।

শ্রাবণ : ঘুম যে আসছে না…

মোনা : কিছু সময় সবকিছু ভাবনা থেকে বাদ দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকো এমনিতেই চোখে ঘুম চলে আসবে।

শ্রাবণ : তুমি কি করো ?

মোনা : টুসিকে নিয়ে শুয়ে আছি। একটু পরে ঘুমাবো।

শ্রাবণ : টুসির খুব ভাগ্য ভালো। বিড়াল হয়েও সে তোমার কাছাকাছি যেতে পেরেছে। যেটা আমি মানুষ হয়েও যেতে পারলাম না। আফসোস !

মোনা : কোথায় টুসি আর কোথায় তুমি ! তুমি আমার সবটা জুড়ে আছো। তোমার অবস্থান  অনেক গভীরে।

শ্রাবণ : গভীরে না ছাই…

মোনা : আমার কথা তোমার বিশ্বাস হয় না ?

শ্রাবণ : তোমার কোনো কথাই আমি অবিশ্বাস করি না।

মোনা : তাহলে আবার কি !

শ্রাবণ : আমার মাথা। হা হা হা…

মোনা : এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে ।

শ্রাবণ : কোনটা ?

মোনা : কাছে থাকলে বোঝাতাম !

শ্রাবণ : কাছে নিলেই তো হয় ।

মোনা : ফালতু কথা রেখে ঘুমিয়ে পড়। রাত অনেক হলো। আমারো খুব ঘুম পাচ্ছে। ঘুমাবো এবার। ফোন রাখি।

শ্রাবণ : না ফোন কাটবে না। আমার অনেক মন খারাপ। সারা রাত তোমার সাথে গল্প করবো ফোনে।

মোনা : এটা কোনো কথা !

শ্রাবণ : হুমমম এটাই কথা…

মোনা : আচ্ছা বলো তোমার গল্প…

শ্রাবণ : শুনলাম তোমার নাকি বিয়ে হতে চলেছে ?

মোনা : কে বললো তোমাকে ?

শ্রাবণ : বাতাসে কান পেতে শুনেছি।

মোনা : তাহলে ভুল শুনেছো। ওসব কিছুই ঠিক না।

শ্রাবণ : আমার কাছে মিথ্যা না বললেও পারতে।

মোনা : তোমার কাছে আমি কোনোদিন কিছু মিথ্যা বলেছি ?

শ্রাবণ : তা বলোনি…

মোনা : তাহলে আমাকে কেন কষ্ট দাও অবিশ্বাস করে !

শ্রাবণ : কষ্ট দিলাম কখন ?

মোনা : মাত্রই তো দিলে…

শ্রাবণ : সত্যিই কি বিয়ে তোমার ?

মোনা : আরে ওসব কিছুই হয়নি এখনো। এক জায়গা থেকে আমাকে দেখতে আসার কথা। ব্যস এটাই। আর তুমি বিয়ের পর্যায়ে নিয়ে গেছো। কি অদ্ভুত !

শ্রাবণ : ওই হলো। যেই সুন্দরী তুমি ! পাত্রপক্ষ তোমাকে দেখা মাত্রই পছন্দ করে ফেলবে। তুমি কি এখনি বিয়েতে রাজি হবে ?

মোনা : মা-বাবা বিয়ের জন্য ভীষণ চাপ দিচ্ছে। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না আমি। এখনি বিয়ে করতে ইচ্ছে নেই আমার। মা-বাবার জোরাজোরিতে কিছু করতে পারছি না।

শ্রাবণ : বিয়েটা করো না প্লিজ !  তোমাকে না পেলে সত্যি মরে যাবো আমি। আমার প্রতিটি নিঃশ্বাস চলে তোমার নামে। তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। আমার জান তুমি !  আমার কলিজা তুমি !

মোনা : তুমি কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করে ফেলছো। এটা ঠিক হচ্ছে না। মাথা থেকে এসব কথা ঝেড়ে ফেলে দাও।

শ্রাবণ : কাল আমাদের বাড়িতে এসো৷ আগামীকাল পাত্রপক্ষ আমাকে দেখতে আসবে। তুমি এসো। দাওয়াত রইলো তোমার। তুমি না এলে কিন্তু আমি রাগ করবো। মিস করো না যেন আসতে।

শ্রাবণ : তোমার বিয়ের কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। তোমাকে হারালে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বো আমি।

মোনা : আমার বিয়ে হলেও সারা জীবন তোমার পাশে থাকবো আমি। কখনোই তোমাকে একা হতে দিবো না। আর সুন্দরী একটা মেয়ে দেখে তোমাকেও বিয়ে করিয়ে দিবো। টেনশন করো না।

শ্রাবণ : আমার জন্য তোমার কোনো কষ্ট হয় না ?

মোনা : কিসের কষ্ট ?

শ্রাবণ : না কিছু না। এবার আমি বুঝে গেছি দিন শেষে সবাই একা। সবাই পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে বুকে ঝড় তুলে একটা সময় পর চলেই যায় সবকিছু ফেলে।

মোনা : তুমি কিন্তু আমার মন খারাপ করে দিচ্ছ এসব কথা বলে ! এসব কথা বলো না প্লিজ !  তুমি আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ। তোমার মুখে এমন কথা শুনলে ভীষণ কষ্ট হয় আমার।

শ্রাবণ : আমার বুকে এখন কষ্টের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তোমাকে দেখাতে পারছি না। সত্যি আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে গো…

মোনা : নিজে নিজে কষ্ট পেলে হয় ! শক্ত হও তুমি।

শ্রাবণ : আচ্ছা আমাকে বিয়ে না করার কারণ কি তোমার ?

মোনা : সে কথা আগেই অনেকবার বলছি তোমাকে। নতুন করে আর বলতে চাই না। এক কথা বারংবার বলতেও খারাপ শোনায়। তাই এসব কথা আর কখনো বলো না। যেটা সম্ভব না সেটা কখনো বলো না। তোমার সবকিছুতে আমি রাজি, শুধু এই কথাটি বাদে।

শ্রাবণ : তোমার বিয়ের আগেই যেন আমার মরণ হয় ! বাঁচতে চাই না আমি এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে !

মোনা : অবশেষে পাগল হয়ে গেলে নাকি ! কি সব বলছো আবোল-তাবোল ?

শ্রাবণ : হুমমম আমি ঠিকই বলছি…

মোনা : না, তুমি একদম ঠিক বলোনি। কালকে আমার বাড়িতে আসো। আম্মুও তোমাকে আসতে বলেছে। তোমার অপেক্ষাকায় থাকবো আমি৷ না এলে খুব কষ্ট পাবো।

শ্রাবণ : তোমার পৃথিবী এখন মহাসুখে ভরপুর । তোমার তো কষ্ট পাবার কথা নয় !

মোনা : হ আর কিছু !

শ্রাবণ : আমাকে এক পেয়ালা বিষ পান করিয়ে মেরে ফেলো। তবুও চোখের সামনে তোমাকে হারাতে চাই না। তোমাকে না পাওয়ার থেকে মরে যাওয়া সেই ভালো। তোমাকে মুক্ত করে দিবো আমি। প্লিজ আমাকে তুমি মেরে ফেলো !

মোনা : এবার তুমি সত্যিই তুমি পাগল হয়ে গেছো। পাপল না হলে এসব অপলাপ করতে না।

শ্রাবণ : তোমাকে হারালে এর থেকে বড় কিছু হওয়ার সম্ভাবনা আছে আমার মনে রেখো।

মোনা : ফোনে কথা বলতে বলতে ভোর হয়ে গেলো। মসজিদে ফজরের আজান হচ্ছে। এবার তাহলে রাখি। নামাজ পড়বো। তুমিও মসজিদে নামাজ পড়তে যাও…

শ্রাবণ : আমাকে তুমি এড়িয়ে যাচ্ছো ?

মোনা : এড়িয়ে গেলে সারা রাত তোমার সাথে ফোনে কথা বলতাম না ঘুম বাদ দিয়ে ? সত্যি আমাকে তুমি বুঝলে না। একদিন ঠিকই বুঝবে তুমি। সেদিন বুঝেও কোনো কাজ হবে না।

শ্রাবণ : তুমিই তো আমাকে বুঝলে না৷ এতো ভালোবাসার পরেও আমাকে অগ্রাহ্য করে তুমি অন্যের হতে চলেছো। এটা কি কষ্টের না আমার জন্য ?

মোনা : আচ্ছা পরে কথা হবে। নামাজের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে… ফোন রাখছি। যা বলছি তাই করো। মনে থাকে যেন।

শ্রাবণ : সে দেখা যাবে।

তারপর তারা ফোন রেখে ফ্রেশ হয়ে উভয়ে নামাজে গেলো। আজকে মোনাকে দেখতে আসার কথা। শ্রাবণ যাবে কিনা ঠিক করতে পারছে না। না গেলেও যে মোনা খুব মন খারাপ করবে। ওর আম্মুতো আরো বেশি মন খারাপ করবে। শ্রাবণকে যে পরিমাণ স্নেহ মোনার আম্মু করে, না গেলেও খারাপ দেখাবে। তাই শ্রাবণ সবকিছু মেনে নিয়েই যাবার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। দেখা যাক পরবর্তী পর্যায়ে কি কাণ্ড করে বসে মোনা এবং শ্রাবণ। কি অবস্থায় তারা একে অপরকে দূরে ঠেলে দেয় সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকি পাঠকের সাথে আমিও।

 

(চলবে…)

 

ভালোবাসার সমীকরণ (১১তম পর্ব)

জাকির আলম   

 

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park