ভালোবাসার সমীকরণ (প্রথম পর্ব)
জাকির আলম
চৌহালী, সিরাজগঞ্জ
শ্রাবণ : কেমন আছো প্রিয়তমা ?
মোনা : ভালো আছি। তুমি কেমন আছো ?
শ্রাবণ : ভালো নেই। একাকী জীবন। নিঃসঙ্গতায় কাটে সারাক্ষণ।
মোনা : তাহলে বিয়ে করে ফেলো নিঃসঙ্গতা কাটাতে।
শ্রাবণ : হুমমম। এই চলো না আমরা বিয়ে করে ফেলি !
মোনা : পাত্রী দেখছো ?
শ্রাবণ : না। তুমি আমি বিয়ে করে ফেলি চলো।
মোনা : ফ্রেন্ড না হলে ভেবে দেখতাম।
শ্রাবণ : সমস্যা কি তাতে ? রাজি হয়ে যাও।
মোনা : না। তাছাড়া সমবয়সী কাউকে বিয়ে করবো না। সিনিয়র কোনো ভালো ছেলে পেলে বিয়ে করবো।
শ্রাবণ : সিনিয়র কোনো বিষয় না। ভালোবাসা আর একে অপরের প্রতি সম্মান থাকাটাই বড় কথা। তোমাকে আমি অনেক সম্মান করি। ভীষণ ভালো লাগে তোমাকে। তুমি অনেক বুদ্ধিমতী আর সুন্দরী একটা মেয়ে। তোমাকে পেলে এক জীবন সার্থক। আমার কথায় রাজি হও। চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি।
মোনা : না, এটা কখনো সম্ভব না আমার পক্ষে। সিনিয়র ছেলে ছাড়া বিয়ে করবো না।
শ্রাবণ : নবম শ্রেণিতে পড়াকাল থেকে তোমাকে আমি ভালোবাসি। তোমার কথা ভেবে গল্প-কবিতা লিখি।
মোনা : আগে তো কখনো বলোনি।
শ্রাবণ : বলার মতো সাহস পাইনি। তুমি কি না কি ভাববে তাই বলতে পারিনি দ্বিধা আর সংকোচকে উপেক্ষা করে। এখনো তো সময় আছে চলো না আমরা বিয়ে করি।
মোনা : না। আমার জন্য দোয়া করো আমি যেন ভালো একটা ছেলে পাই। যে আমাকে ভীষণ ভালোবাসবে। আমাকে ঘিরে তার সবকিছু থাকবে। আমি যেন তার জীবনে ভালো অবদান রাখতে পারি। সে যেন একটা সময় অবলীলায় বলে দেয় আমার জন্য সে জীবনে সফল হয়েছে। এই অবদান টুকু তার জীবনে আমি রাখতে পারি। সারা জীবন যেন তার পাশে থাকতে পারি যেকোনো মুহূর্তে।
শ্রাবণ : ( মনে মনে একটু কষ্ট পেলো। এমন একটা মানুষ পেলে কতো না সুখী হতে পারতো এক জীবনে। কিন্তু তাকে পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।) ঠিক আছে তোমার জন্য দোয়া করি জীবনে এমন একটা মানুষ খুঁজে পাও।
মোনা : থ্যাংকস।
শ্রাবণ : বিয়ে করবে কবে নাগাদ ?
মোনা : ছেলে দেখার কাজ চলছে। ভালো একটা ছেলে পেলেই বিয়ে করবো।
শ্রাবণ : বিয়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত তুমি ?
মোনা : হুমমম…
শ্রাবণ : তুমি অনেক সুন্দরী।
মোনা : না। তেমন সুন্দরী না।
শ্রাবণ : না সত্যি বলছি তুমি অনেক সুন্দরী। অনেক ফিট তুমি।
মোনা : হুমমম। এটা ঠিক।
শ্রাবণ : এক জীবনে তোমাকে না পাওয়ার আক্ষেপ আমার সারা জীবন থেকে যাবে। তোমাকে পেলে উৎফুল্ল এক জীবন কাটাতাম। তোমার নিঃশ্বাসে বেঁচে থাকতাম।
মোনা : তুমিও বিয়ে করে ফেলো।
শ্রাবণ : তুমি ছাড়া আর কোনো মেয়েকে আমার ভালো লাগে না। আমার পৃথিবী জুড়ে শুধু তোমার উপস্থিতি। তুমি ছাড়া কাউকে ভাবতে পারিনা।
মোনা : তুমি অনেক ভালোবাসতে পারো। তোমার মনটা অনেক ভালো।
শ্রাবণ : তুমিও অনেক ভালোবাসা প্রবণ একটা মানুষ। তোমার হাসি অনেক সুন্দর। তোমার মায়াবী চোখের চাহনি আমার ভীষণ ভালো লাগে।
মোনা : থ্যাংকস।
শ্রাবণ : তুমি অনেক আকর্ষণীয়। কাছে পেলে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে। বুকে জড়িয়ে কপালে চুমু খেতে ইচ্ছে করে।
মোনা : কি নির্লজ্জ কথা !
শ্রাবণ : হুমমম। ছেলে মানুষ প্রেমে পড়লে একদম নির্লজ্জ হয়ে যায়।
মোনা : তাইতো দেখি। তোমার অনেক ফিলিংস মনে হয়।
শ্রাবণ : হুমমম একদম ঠিক বলেছো। তোমাকে দেখলে আরো বেশি ফিলিংস জাগে মনে। কাছে পেতে মন চায়।
মোনা : ভাগ্যে থাকলে পেতেও পারো। ভাগ্যের কথা তো কেউ আমরা জানিনা।
শ্রাবণ : আমার হও তুমি। ভীষণ ভালোবাসবো তোমাকে। প্রচণ্ড কেয়ার করবো।
মোনা : এভাবে বলো না গো। আবার প্রেমে পড়ে যাবো। মানুষের ভালোবাসা উপেক্ষা করা অনেক কঠিন ব্যাপার।
শ্রাবণ : তাই যদি হয় তাহলে আমাকে উপেক্ষা করো কেন ? ভালোবেসে তো বুকে টেনে নিতে পারো। তোমার জীবনের সাথে জড়াতে পারো।
মোনা : কি যে করি ! ভাবতে পারছি না।
শ্রাবণ : ইচ্ছে করে তোমার রাঙা ঠোঁটে আমার ওষ্ঠ ছোঁয়াই। নাকে নাক ঘঁষে বুকে জড়িয়ে ধরি। হাতে হাত রেখে সম্মুখে হেঁটে চলি তোমার ভালোবাসাময় আঁকাবাঁকা পথে। কতো শত ইচ্ছে জাগে তোমাকে কাছে পাওয়ার বাসনায়।
মোনা : তোমার চাওয়া পাওয়ার মনোবাসনা পূর্ণ হোক।
শ্রাবণ : জীবনে প্রথম ভালোবাসার মানুষ তুমি। সেজন্য তোমার প্রতি আমার অনেক বেশি আবেগ অনুভূতি। তোমাকে ভালোবেসে বলতে না পারাটাও অনেক কষ্টের। আজ না বলে আর থাকতে পারলাম না৷ বলেই যেহেতু ফেলেছি তাহলে আর দূরে ঠেলে দিওনা। আমাকে তোমার বুকে একটু জায়গা দাও। ভীষণ ক্লান্ত আমি। তোমার ভালোবাসা পেতে প্রচণ্ড কাতর।
মোনা : ভালোবাসো এ কথা আগে বললে পারতে। মনের কথা কখনো আটকে রাখতে হয় না। প্রকাশ করতে হয়। প্রকাশ না করলে বুঝবো কেমনে ?
শ্রাবণ : ওই যে বললাম, দ্বিধা আর সংকোচে তোমাকে বলতে পারিনি।
মোনা : আমাকে তুমি অপরাধী বানিয়ে দিলে। তোমার এই ভালোবাসাকে অগ্রাহ্য করা অনেক কঠিন। তবুও গ্রহণ করতে যাওয়া আরো বেশি কঠিন। আমাকে তুমি ক্ষমা করো প্রিয়। তোমার এই ভালোবাসার প্রতি অনেক সম্মান জানালাম আমি। সারা জীবন বন্ধু হয়ে পাশে থাকবো। কথা দিলাম কখনো তোমাকে দূরে ঠেলে দিবো না।
শ্রাবণ : ভালোবাসা অনেক কঠিন জিনিস। যা সবাইকে ভালোবাসা যায় না। তোমাকে ভালোবাসতে পেরে ধন্য আমি। তোমাকে না পেলেও আমার কোনো দুঃখ নেই। তোমাকে ভালোবাসতে পারাটাও কম আনন্দের নয়। আমার অস্তিত্ব তুমি। আমার নিঃশ্বাস তুমি। আমার পৃথিবী তুমি। আমার পুরো শরীর জুড়ে শুধু তোমার অস্তিত্ব বিদ্যমান।
তোমাকে নিয়ে লেখা হাজার কবিতার মধ্যে একটি কবিতা …
তোমার অপেক্ষার শহরে আমি এক পরিযায়ী পাখি।
চরম বিশ্বাসে তোমাকে আমি ভালোবাসি।
প্রতিদিন তোমার সাথে কথা না হলে
নিঃশ্বাস আমার বন্ধ হয়ে যায়…!!!
তোমাকে ভালোবাসি তাই ভুলে যাওয়ার অধিকার নেই।
দিন থেকে রাতের প্রতিটি নিঃসঙ্গ নিঝুম প্রহরে
তোমাকে চাই অবরুদ্ধ মনের পশ্চাত প্রান্তরে।
ছায়াঘেরা নিসর্গের একমুঠাে রৌদ্দুর গায়ে মেখে
অবনত হতে চাই তোমার বাহুবন্ধনে।
যাপিত জীবনের ফেলে আসা স্মৃতির দোরগোড়ায়
জন্ম হবে তোমার আমার অমর প্রেমের কবিতা।
প্রতিশ্রুতির খেয়ালে কালের যাত্রায় ভেসে
একদিন পৌঁছে যাবো তোমার মনের পোতাশ্রয়ে।
ধীরে ধীরে অবুঝ প্রেমের বাক্যবাণে তোমাতে আমি
মিশে যাবো সঙ্গম নদীর দুরন্ত সাঁতারে…
তোমাকে এতো ভালোবাসি বুঝাতে গিয়েও
ব্যর্থতায় ডুবে যাই অবসান্য নীলিমায়।
তবুও তুমি একদিন বুঝবে সেই দিনের প্রতীক্ষায়
সময় বয়ে যায় সুদিনের হাত ধরে
তোমার মনের জগতে আলতো পরশ মেখে।
মোনা : তোমার সব লেখাই অনেক সুন্দর। অনেক সাজানো গোছানো ভাষা। তোমার গল্প-কবিতার অংশ হতে পেরেও ভীষণ ভালো লাগছে। নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে । সেজন্য তোমাকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। আশা করি সারা জীবন এমনি করেই আমাকে ভালোবেসে যাবে। কখনো দূরে ঠেলে দিবে না। চরম বিশ্বাসে তোমাকে আমার হৃদয়ে ঠাই দিলাম। তোমার জন্য অনেক বেশি শুভ কামনা প্রিয়।
শ্রাবণ : তোমাকে কাছে পাওয়ার আশা কোনো কালে আমার ম্লান হবে না। ভালোবাসতে বাসতে বুড়ো হয়ে যাবো তবুও তোমাকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিবো না। শুধু এক জনম নয় ; লক্ষ জনম আমি তোমাকেই চাই। তুমি আমার অনন্তকালের চির সারথি। তোমাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি।
মোনা : ভাগ্যে থাকলে তোমার হতেও পারি। তোমার ভালোবাসা চুম্বকের চেয়েও বেশি কাছে টানে। কখনো পরাজিত হলে চলে আসবো তোমার কাছে। তখন অনেক যত্ন করে রেখে দিও। হারিয়ে ফেলো না। মনে কষ্ট দিওনা। আগলে রেখো তোমার আকাশে। জায়গা দিও বুকের জমিনে। বিধাতা যেন তোমার মনের আশা পূর্ণ করেন। আমিন।
শ্রাবণ : আজ আমি সফল। তোমাকে কাছে পেতেও আরো বেশি ভালোবাসবো তোমাকে প্রিয়তমা আম্বিয়া। তুমি আমার হবে। শুধুই আমার। হারাতে দিবো না কোনো কালে।
মোনা : অপেক্ষায় রইলাম তোমার পথের দিকে চেয়ে। সেদিন চলে আসবো তোমার কাছে যেদিন তোমার ভালোবাসা পাওয়ার ক্ষুধায় প্রচণ্ড কাতর হবো আমি। সেদিন পৃথিবীর যাপিত শক্তি আমাকে শক্ত বাঁধনে বেঁধেও আটকে রাখতে পারবে না। কাছে এসে ক্লান্ত প্রাণে বলে দিবো, আমিও ভীষণ ভালোবাসি তোমাকে। বুকে টেনে নাও ক্লান্ত আমিটাকে।
শ্রাবণ : হুমমম। সেই দিনের আশায় রইলাম। আমার ভালোবাসার গভীরতা দিয়ে তোমাকে যেন জয় করতে পারি। চলো আমাদের কার্যক্রম শুরু করি।
মোনা : হুমমম চলো, চলো, চলো…!!!
( চলবে…)