1. admin@ichchashakti.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৬ অপরাহ্ন

ভালোবাসা তবুও হারিয়ে যায় — জাকির আলম

  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১৮ বার পঠিত

ভালোবাসা তবুও হারিয়ে যায়

জাকির আলম

 

সাড়ে তিন বছরের মাথায় তুমি যেদিন স্বেচ্ছায় আমার সাথে সম্পর্কের ইতি টানলে, সেদিন মনে হয়েছিলো পুরো আকাশটা যেন  মাথার উপর ভেঙে পড়লো। সরে গিয়েছিলো পায়ের তলের মাটি। তখন স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো। তবুও তোমাকে বুঝতে দেইনি তখন আমার ভিতরের অবস্থান। জানতে চাইনি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কারণ। বরং মৃদু হেসে নিজেকে শক্ত করে তোমার চলে যাওয়া মেনে নিলাম। তৎক্ষণাৎ চোখে জল এলেও আড়ালে মুছে ফেললাম। তিল তিল করে গড়ে ওঠা সম্পর্ক নষ্ট করতে তোমার খানিক দ্বিধাও হয়নি। অথচ তোমাকে ভালোবাসতে গিয়ে হাজারো ত্যাগ শিকার করেছি আমি। যখন তুমি যা বলতে অনুগত হয়ে তাই মেনে নিতাম। কখনো তোমার অবাধ্য হতাম না। কিন্তু তুমি আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে ঠকিয়ে দিলে আমাকে। জানিনা কোন স্বার্থের টানে আমার সাথে তুমি এমন আচরণ করলে। আমিতো কোনো দোষ করিনি।

 

কখনো তোমাকে কষ্টও দেইনি। তবে কেন এমন করলে আমার সাথে ? তোমার সাথে পরিচয় হওয়ার পর কোনোদিন খারাপ ব্যবহার করিনি। তবুও তুমি আমার সাথে সম্পর্ক রাখলে না। মিথ্যে ভালোবাসার অভিনয় করে মহাসমুদ্রে আমাকে তুমি ডুবিয়ে দিলে। বুকে জড়িয়ে কখনো আমার ভালোবাসা অনুভব করলে না। এতোটা অমানবিক তুমি জানা ছিলো না। আমি দেখেছি আমাকে কাঁদিয়ে তোমার হাসি মুখ। দেখেছি আড়াল থেকে তোমার বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস। সব দেখেও কিছু বলতে পারিনি। নীরবেই সয়ে গেছি সব। ভালোবাসার হাত তুমিই আগে বাড়িয়ে ছিলে। দেখিয়ে ছিলে হাজারো স্বপ্ন। তথাপি তুমিই সব ভেঙে দিলে। বিপরীতে আমি পারলাম না তোমাকে অপরাধী বানাতে। পারলাম না তোমার সাথে একটা জীবন থেকে যেতে। এতত্সত্ত্বেও তোমাকে আমি অভিশাপ দিবো না। দিবো না কোনো অভিযোগ। তোমাকে আমি মুক্ত করে দিলাম।

 

উড়ে যেতে পারো তোমার আকাশে। তাতে যতো কষ্ট আমার হোক। কখনো চাইনি জোর করে তোমাকে ধরে রাখতে। জোর করে আর যাই হোক ; কাউকে ধরে রাখা যায় না। তাই আমিও চাইনি। গত সাড়ে তিন বছর তোমার সাথে খুব আনন্দেই ছিলাম। নিয়ম করে ঘুরতে যাওয়া, সময়-অসময় আড্ডাবাজি সব চলতে তোমার সাথে। কখনো বা খুনসুটি খেলতে খেলতে লুটিয়ে পড়েছি তোমার বাহুবন্ধনে। জোছনা রাত এলেই দিঘির জলে নৌকায় ভেসে অবলোকন করে তোমার হাসি মুখ। চরম উত্তেজনায় ছুঁয়েছি তোমার হাতের আঙুল। তুমি যখন শাড়ি পরতে ভীষণ রকম সুন্দর লাগতো। তোমার দীঘল চুলের খোঁপায় ফুল গুঁজে দিতে অন্য রকম ভালোলাগায় শিহরণ জাগতো বুকে। এতো সব ভুলে যেতে তোমার সময় লাগেনি। মানুষ এতোটা নির্মম হয় জানা ছিলো না। সহসাই কেড়ে নিলে আমার সব সুখ। তোমার সাথে কাটানো দিনগুলো যতোটা আনন্দের ছিলো, এখন তা কাঁটার মতো শরীরের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে বিদ্ধ করে। সইতে খুব কষ্ট হয়। আজ তুমি অনেক দূর। চাইলেই তোমাকে দেখতে পারিনা।

 

ছুঁতে পারিনা তোমার চেতন। হাত বাড়ালেই এখন শুধু অন্ধকারের হাতছানি। যেদিকে চাই ব্যর্থতার গ্লানি এসে আঁকড়ে ধরে আমাকে। সেখান থেকে ছুটে আসার কোনো রাস্তা খোলা নেই। সেখানেই ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে আমাকে। সেটা তুমি কখনো জানতেও পারবে না।

তোমার যখন প্রচণ্ড মন খারাপ হতো কতো না বাহানায় তোমার মন ভালো করে দিতাম। কখনো মাথা ব্যথা করলে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতাম। কখনো অসুস্থ হলে সেবা যত্ন করতাম। রাতে ঘুম না হলে ঘুমের গান শোনাতাম। হাঁটতে চাইলে নিয়ে যেতাম সমুদ্রপাড়ে। তখন দখিনা সমীরণে উড়াউড়ি করতো তোমার রেশমি চুলগুলো। তখন তা দেখে ভালোলাগায় ভরে যেত আমার মন। তোমাকেও তখন ভালোলাগায় হাসতে দেখেছি। হাত বাড়িয়ে আকাশ ছুঁতে দেখেছি। চোখ বন্ধ করে পাখির মতো ডানা মেলে উড়তে দেখেছি। সেই দিনগুলো আজ বিবর্ণ স্মৃতি হয়ে আমাকে কষ্ট দেয়। সরাতে পারিনা ভাবনা থেকে। তুমি আজ কোথায় আছো, কেমন আছো জামিনা। তোমার কোনো ঠিকানাও জানিনা। তুমি চলে গেছো দূরের পৃথিবীতে। আমার থেকে দূর বহুদূর।

 

অনেক দিন তোমার ভয়েস শুনতে পাই না। দেখতে পাই না তোমার হাসি মুখ। এখনো নিয়ম করে সূর্য ওঠে। রাত আসে দিনের শেষে। প্রকৃতির কোনো কিছুই বদলে যায়নি। বদলে গেছো শুধু তুমি। একদা কথা দিয়েছিলে তুমি কখনো বদলে যাবে না। প্রকৃতির মতো স্বাভাবিক থাকবে তুমি। তুমি তোমার কথা রাখোনি। সময়ের ব্যবধানে ঠিকই বদলে গেছো তুমি। নিজেই নিজের অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছো। না কোনো শাস্তি দিবো না তোমাকে। দোষী বলেও অভিযুক্ত করবো না। তুমি যা করেছো নিজের ভালোর জন্যই হয়তো করেছো। তুমি ভালো থাকলেই আমার ভালো থাকা। সর্বদা আমি তোমার ভালো চেয়েছি। তুমি আমাকে যতোই কষ্ট দাও নীরবে সব সয়ে নিবো। কিন্তু তোমার কোনো কষ্ট হোক সেটা আমি মেনে নিতে পারবো না। বলতে পারো এসব আমি ন্যাকামি করে বলছি। আদতে না। তোমার সাথে আমি কখনো ছলনা করতে পারবো না। এখনো তুমি চাইলে বন্ধুত্বের জায়গা থেকে তোমার জন্য আমি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবো। আমার দরজা সবসময় তোমার জন্য খোলা।

 

কখনো তোমাকে ফিরিয়ে দিবো না। বিশ্বাস এবং ভরসা করতে পারো। এতোটা অমানবিক আমি নই। বাড়ির পাশে যমুনা নদীটা প্রতিনিয়ত বয়ে চলেছে সাগরের টানে। সাগর কখনো নদীকে মানা করেনি তার কাছে ছুটে আসতে। সাগর জানে নদী না ছুটে এলে সেও একদিন শুকিয়ে যেতে পারে। সেজন্য তার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই নদীর কাছে তার অগাধ ভালোবাসা বিরাজমান। কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভুল করে না সে। অথচ আমরা মানুষ কতোটা নির্মম ! অকৃতজ্ঞ তো বটেই। আমার কাছে থাকার মতো তুমি হাজারটা কারণ বের করতে পারতে। পারতে আমার সাথেই চিরদিন থেকে যেতে। আমার থেকে তোমাকে কেউ বেশি ভালোবাসতে পারে এটা আমার জানা নেই। একজন মানুষ হিসেবে তোমাকে আমি সর্বোচ্চ পরিমাণ ভালোবেসে ছিলাম। তোমাকে পাওয়ার জন্য নিজের সবকিছু বিসর্জন দিয়েছি। তবুও তোমার প্রিয় মানুষ হয়ে থাকতে পারিনি আমি।

 

দিনের শেষে যখন রাত আসে তোমাকে তখন খুব মনে পড়ে। বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে চোখের জলে বালিশ ভিজিয়ে ফেলি। ঘুমাতে পারিনা কোনো মতে। বুকের ভিতর চাপা আর্তনাদ ভীষণ কষ্ট দেয়। মুখ ফুটে কাউকে বলতেও পারিনা। তখন নিজেই নিজেকে ধিক্কার দেই। আমার জন্য যে কাঁদে না, তার জন্য কেন আমি কাঁদি ? মনকে বোঝাতেই পারিনা তুমি কোনোদিন আমার ছিলে না। পরিযায়ী পাখির মতো আমার জীবনে তুমি এসেছিলে। তাই নিজের সুবিধা মতো আবার চলে গেছো। মাঝে রেখে গেছো আমার বুকে কষ্টের পাহাড়। তুমিতো ভালোই আছে আমাকে ভুলে। কিন্তু আমি কেন এতো কষ্ট পাই ? আমিতো তোমাকে ছেড়ে দেইনি। কখনো ঠকাতেও চাইনি তোমাকে। আমিতো ঠিকই চেয়েছিলাম তোমার সাথে ঘর বাঁধতে। তবুও কেন নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে ? আমিতো কোনো দোষ করিনি। নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কোনো ভাষা আমার জানা নেই।

 

গত সাড়ে তিন বছর তোমার সাথে সম্পর্ক থাকা অবস্থায় তোমার থেকে কিছু গিফ্ট পেয়েছিলাম। সেগুলো খুব যত্ন সহকারে রেখে দিয়েছি। কোনোদিন তুমি ফিরে চাইলে তৎক্ষনাৎ ফিরেয়ে দিবো। আদতে তোমার কাছে আমি ঋণী থাকতে চাই না। যে তোমার সাথে আমার ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো, সেখানে তুমিই যেহেতু আমার জীবনে নেই, তাই তোমার কিছু নিজের কাছে রাখতে খানিক আকর্ষণ নেই আমার। তুমিই ছিলে আমার সবচেয়ে বড় গিফ্ট। তাই তোমাকে হারিয়ে মনের দিক থেকে আদৌ ভালো নেই আমি। তোমাকে কোনো রূপ ফোন বা মেসেজ দিতে মানা করেছো তাই মন চাইলেও দিতে পারি না। যোগাযোগের সব মাধ্যম থেকে তুমি আমাকে বিদায় জানিয়েছো। তাই মন চাইলেও তোমার সাথে কথা বলতে পারিনা। খুব মনে পড়ে তোমাকে। তোমাকে বোঝাতে পারিনা আমি ভালো নেই তোমাকে ছাড়া। আজ আমি হাসতে ভুলে গেছি। তোমার কথা ভাবতে গেলেই চোখের জলে আমার বুক ভেসে যায়। চোখ মুছতে মুছতে ভিজিয়ে ফেলি নীল তোয়ালে। আজ নিজেকে নিজে ভুলে গেছি।

 

ভুলে গেছি নিজের ভালো থাকার কথা। শরীর জুড়ে এখন শুধু বিষাদের তাড়না। অবসাদ নেমে এসেছে রক্তের হিমোগ্লোবিনে। চরম সত্ত্বেও তোমাকে ভুলতে পারিনা। সত্যিই  তোমাকে ভুলতে পারিনা আমি। কখনো ভুলে যেতেও চাই না। তোমার উপর কোনো অধিকার নেই আমার। তবুও তোমাকে দূর থেকে ভালোবেসেই কৃতার্থ থাকতে চাই আমি। তাতেও পরম সুখ। তাতেও বেঁচে থাকার সাধ জাগে। তোমাকে আমি মনের গহীন ভিতর থেকেই চরমমাত্রায় ভালোবেসে ছিলাম। আমার ভালোবাসায় কোনো স্বার্থ ছিলো না। যা কিছু ছিলো সব তোমাকে কাছে পাওয়ার নিমিত্তে। কভুও তোমাকে পেলাম না। না পাওয়ার অভিমানে নিজেকেই দোষী সাব্যস্ত করেছি। মনকে শাস্তি দিয়েছি দেয়ালে মাথা ঠুকে। সবকিছুর অবসানে ভালোবাসা তবুও হারিয়ে যায়।

হারিয়ে যায় প্রিয় মানুষটিও। থাকে শুধু বিকট অন্ধকারে অমাবস্যা রাতে মন খারাপের গল্প বুনন। তখন সঙ্গ দিতে ছুটে আসে দূর আকাশের নক্ষত্রপুঞ্জ। তোমাকে ভোলা যায় না বিধায় মন থেকে ভীষণ অনুভব করি। নীমিলিত অর্ঘ্য দেই তোমার উদ্দেশ্যে। তোমাকে এখনো ভালোবাসি আগের মতোই। মন চাইলে ছুটে এসো কুয়াশা ভেজা শরীরে আমার আঙিনায়। অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি দৃষ্টির দরজা খুলে অবুঝ বালক !

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park