ভালোবাসি প্রিয়তমা, ভীষণ ভালোবাসি তোমাকে (এক) ----- জাকির আলম
ফেসবুকের মাধ্যমেই তোমার সাথে প্রথম পরিচয়। প্রকৃতিতে তখন বসন্তের আনাগোনা। কোকিলের গানে মুখর পরিবেশ। অতঃপর ধীরে ধীরে তোমার কাছে আসা। তখন তোমার মুখে ভাইয়া ডাক শুনলে কেমন যেন এক অনুভূতি হতো। শহর অভিমুখেই তোমার বসবাস। তবুও গ্রামের প্রতি আলাদা একটা টান আছে তোমার। সেজন্য আমার গ্রামে থাকা নিয়ে তোমার কোনো আপত্তি ছিলো না। সহসাই আমাকে তুমি আপন করে নিয়েছিলে। এভাবে চলতে চলতে কখন যে তোমার প্রেমে পড়েছিলাম হলফ করে তা বলতে পারছি না। সেজন্য অবশ্য দুঃখ প্রকাশ করছি। তোমার প্রেমে পড়ার মতো অনেকগুলো কারণ অবশ্য আছে। ততোদিনে তুমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পূর্ণ করেছো। তোমার কণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি দারুণ ঝংকার তোলে অবচেতন মনে। শুনেছি ছোটবেলা থেকেই বাংলা শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি তুমি অনেক বিচক্ষণ।
তাই তোমাকে ভালোলাগার এটাই মূল কারণ হতে পারে। কপালে লাল টিপ, খোলা চুলে শাড়ি পরিহিত অবস্থায় তোমাকে যতোদিন দেখেছি, চোখ সরাতে পারিনি তোমার অবয়ব থেকে। ভীষণ মাত্রায় সুন্দর তুমি। আদতে বলতেই হয়, তুমি কল্পনার থেকেও বেশি সুন্দর। ভোজন বিলাসী তোমাকে দেখলেই অনুভূতির মাঝে হাজারে গল্প-কবিতার জন্ম হয়। নিখুঁত চাহনির মায়ায় পড়ে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তুমুল ভালোবাসার সব দরজা খোলা রেখে তোমাকে ছুঁতে গেছি গোলাপের সুবাস পেতে। নিঃশ্বাসের প্রতিধ্বনি শুনে আমি দেখেছি তোমার ঘুমন্ত মুখখানি। মেহেদি রাঙা হাতের নখগুলো স্পর্শ করতেই আমি খুঁজে পেয়েছি নীবৃত সুখ। কখনো চাইনি নীরব জোছনা রাতে অভিসারে তোমার দেখা পেতে। তোমাকে ভালোবাসার মতো অনুভূতি পুরো পৃথিবীর বুকে দ্বিতীয়টি নেই। তোমাকে চাওয়া-পাওয়ার হিসেব কখনো মেলাতে যাইনি। সব চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে তুমি। তোমাকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসাই হতে পারে আমৃত্যু বেঁচে থাকার পাথেয়। তোমার সাথে পায়ে পায়ে হেঁটে যতোবার সমুদ্র স্নানে গেছি, ততোবার মুগ্ধ হয়েছি তোমার ভেজা পায়ের নাচুনি দেখে। শহরের ক্যাফেটারিয়ায় বসে তোমার সাথে গল্প কথায় নিমগ্ন হতে হতে সময় কেটে গেছে স্বর্গীয় সুখে। দিনের শেষে বাসায় ফেরার পথে বাচ্চু মামার টকের সাথে ফুচকা খেতে তোমার যে আবদার তা ফেলতে পারিনি কখনো। যেদিন থেকে তোমার হাতে হাত রাখার অধিকার পেয়েছি, সেদিনের পর থেকে কখনো আর দূরে থাকতে পারিনি আমি।
এক নিমেষ তোমায় না দেখলেই মন খারাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অফুরন্ত মায়ায় আমাকে তুমি জড়িয়ে রেখেছো। তাই তোমার থেকে আর দূরে থাকতে পারিনা। কিন্তু আমার সাথে তোমার সম্পর্কের কথা যেদিন তোমার পরিবার জেনে যায়, সেদিন থেকে আমার জীবনে কালবৈশাখী ঝড় নেমে এসেছে। তোমার আমার মাঝে তখন বিস্তর ফারাক। তোমার পরিবার আমাকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে৷ যোগাযোগের সব মাধ্যম বন্ধ। দোখাও হয় না আর আগের মতো। আমাকে ছাড়া তুমি কেমন আছো জানিনা। কিন্তু তোমাকে ছাড়া একটুও ভালো নেই আমি। আমার ভালো থাকার সব মূল সূত্র ছিলে তুমি। শুনেছি বড় লোকের ছেলের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করেছে পরিবার। তুমি সেটা মেনে নিয়েছো কিনা জানিনা। যেই তোমাকে একদিন না দেখলে মনটা ছটফট করতো সেই তুমি আজ অনেক দূরে। আমি চাইলেও তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। তার কিছু দিন পরেই তোমার বিয়ে হলো। তুমি হারিয়ে গেলে আমার জীবন থেকে। তোমাকে হারানোর শোকে ধীরে ধীরে পাথরের মতো শক্ত হয়েছি। হাসতেও ভুলে গেছি আমি। শেষ বারের মতো তোমাকে দেখার সুযোগ হয়নি। এভাবে তোমাকে হারিয়ে ফেলবো কখনো বুঝতে পারিনি আমি৷ মন থেকেই তোমাকে আমি কাছে চেয়েছিলাম। অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তোমাকে আমার পাওয়া হলো না। ঠিকই হারিয়ে গেলে তুমি। আমি মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান বলে আমার সাথে তোমার সম্পর্ক তোমার পরিবার মেনে নেয়নি। ফলস্রুতিতে আমি হেরে গেলাম। জিতে গেলো তোমার পরিবার।
মাঝখান থেকে আমি ছিটকে পড়লাম বেদনার আগুনে। তোমাকে ভালোবাসাটা ছিলো আমার জীবনে চরম অপরাধ। তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা ছিলো তার চেয়েও মস্ত বড় অপরাধ। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম তোমার সাথে আমার যায় না। বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে তুমি। তাই আমার মতো মধ্যবিত্তের সাথে তোমাকে বিয়ে না দেওয়াটাই স্বাভাবিক। তবুও কষ্ট হয় এই চরম সত্য মেনে নিতে। সত্যিকারের ভালোবাসা যে মানুষকে এতোটা পঙ্গু করে দিতে পারে সেটা আমার জানা ছিলো না। তোমাকে হারিয়েই তা জেনেছি। আরো জেনেছি তেলে-বেগুনে কখনো এক হয় না। তা হয় না বলেই মানুষের জীবন এতোটা কষ্টের হয়। তোমাকে হারিয়ে কতোটা কষ্ট পেয়েছি তা প্রকাশে অপারগ আমি। এখনো মনে হয় তোমাকে কাছে পেলে আমার মনের সব কষ্ট দূর হয়ে যেত। হাসতে পারতাম মন খুলে। তোমার ঠিকানা পেলে আবার হাত বাড়াবো। খুলে দিবো মনের সব দরজা। তোমাকে বোঝাবো আমি ভালো নেই তোমাকে ছাড়া। তোমাকে বোঝাবো আমার পৃথিবী তুমি। জোর করে হলেও তোমাকে ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। হয়তো তুমিও ফিরে আসতে চাবে। কিন্তু সমাজের ভয়ে আমাকে তুমি ফিরিয়ে দিবে।
আবার হয়তো সমাজকে পিছনে পেলে তুমি ফিরে আসতে চাবে আমার কাছে। ভালোবাসার মানুষ ছাড়া কেউ ভালো থাকতে পারে না। যেটা আমি তুমিও পারিনি। পরিবারের চাপে হয়তো আমাকে ছেড়ে অন্যের কাছে গিয়েছিলে। ভালো থাকার তুমুল চেষ্টা করেও ভালো থাকতে না পারাটাও কম কষ্টের নয়। তখন সমাজ এবং পরিবারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাটা অপরিহার্য হয়ে ওঠে। তোমার আমার অবস্থাও ঠিক তাই। যুদ্ধ করে বাঁচা ছাড়া আর কোনো পথ নেই।
( দুই )
তারপর অনেক বছর পেরিয়ে গেছে। দুই সন্তানের মা হয়েছো তুমি। ততোদিনেও আমি বিয়ে করিনি। মন থেকে বিয়ে নামক শব্দটা চিরতরে রহিত করেছি। জীবনের প্রয়োজনে কর্ম করে খেতে হয়। তাই কর্মের মধ্যে ডুবে থেকে বাকি জীবন অতিবাহিত করার চেষ্টা। কখনো অবসর পেলে হাফ ছেড়ে বাঁচার জন্য একটু বিনোদনের চেষ্টা। এভাবেই চলছিলো জীবন। মনের মধ্যে কোনো আফসোস আর কাজ করে না। সকল কিছু মানিয়ে নেওয়ার তুমুল প্রচেষ্টা। এমন এক সময় তুমি ফিরে আসতে চাইলে আমার জীবনে। বড় লোক স্বামীর সাথে ঘর সংসার এতোদিনেও নাকি তুমি মানিয়ে নিতে পারোনি। মানিয়ে নেওয়ার শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছো।
অর্থ-বিত্তের অভাব না থাকলেও স্বামীর ভালোবাসাটা নাকি কখনো পাওনি তুমি। দিনের পর দিন স্বামীর অবহেলা এবং শারীরিক অত্যাচারে রীতিমতো অতিষ্ঠ তুমি। হাফিয়ে উঠেছো ওই সংসার নামক নরক থেকে। মুক্তি পেতে আমাকেই স্মরণ করেছো তুমি। অনেক দিন পর তোমার ফোন পেয়ে রীতিমতো অবাক আমি। তোমার কণ্ঠস্বর শুনেই কাঁপন উঠেছে আমার বুকে। সেই পরিচিত কণ্ঠ এখনো আমার বুকে শিহরণ তোলে। কিন্তু তোমার কণ্ঠস্বর শুনে তৎক্ষণাৎ মনে হলো ওখানে ভালো নেই তুমি। যখন বললে পুনর্বার আমার জীবনে ফিরে আসতে চাও তুমি তখন মনের মধ্যে কেমন যেন একটা সুখ অনুভূত হলো। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললাম। তুমি জানতে চাইলে আমি তোমাকে গ্রহণ করবো কিনা ? আমি হা না উত্তর করার আগেই তুমি কান্না করে দিলে নরক থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য৷ তখন রীতিমতো ভাবনায় পড়ে গেলাম আমি৷ হাত বাড়িয়ে যে তোমাকে ফিরে আসতে বলবো সেটা তখন মাথায় কাজ করেনি। কিছু সময় পর অবশ্য তোমাকে ফিরে পেতে সাহসী হাত বাড়িয়ে দেই। তখন তুমি কতোটা খুশি হয়েছো জানা নেই। সংসারে সুখ না পেলে মুক্তি পাওয়ার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। তুমি ফিরে এলে আমার অগোছালো জীবনে। তোমার ফুটফুটে সন্তানদের মুখের দিকে তাকাতেই ভীষণ মায়ায় পড়ে গেলাম আমি৷ তখন মন থেকে তোমাকে গ্রহণ করে নিলাম। করুণা করে নয়৷ ভালোবাসার সংমিশ্রণে তোমার সাথে থাকার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হলাম। অভাবের সংসারে তোমাকে সুখী করতে জীবন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লাম আমি৷
তোমার মুখে সুখের হাসি ফোটাতে ভুলে গেলাম নিজের অবস্থান। তোমাকে ফিরে পাওয়া আমার জীবনে সবচেয়ে বড় উপহার। সবকিছু ছেড়ে এসে আমার হাত ধরে বাকি জীবন বাঁচার যে আকুতি তা নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলাম আমি। তুমি আমার এমন একজন মানুষ, যাকে ভালোবাসতে না পারলে দেহের মাঝে অস্থিরতা ভর করে। তৃষ্ণা জাগে সংগোপনে তোমার সঙ্গ পেতে। তোমাকে জড়িয়ে ধরার যে অপ্রতিম সুখ তা অন্য কোথাও নেই। তোমাকে পেয়ে পরিপূর্ণ আমি। বড় লোক স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে আমার কাছে তোমার ফিরে আসা বিশাল এক সাহসী পদক্ষেপ। জানিনা এই বিতৃষ্ণা জীবনে কতোটা ভূমিকা রাখতে পারবো আমি৷ তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো তোমাকে বুকে ধারণ করার। প্রতিদিন তোমার হাসি মাখা মুখ দেখে ভেসে যাবো অসীম কালের প্রবাহে। আমার জীবনে তোমাকে ফিরে পাবো কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। তবে তোমার জন্য ভালোবাসাটা সবসময় ছিলো৷ এখনো তোমার ভালোবাসা পেতে দিওনা আমি। তোমার বিচ্ছেদ অনেক বেশি যন্ত্রণাময়।
যেদিনগুলো তুমি আমার থেকে দূরে কাটিয়েছো সেইদিনগুলো নরকের আগুনের থেকেও তীব্রতর ছিলো। জ্বলে-পুড়ে নিঃশেষ হয়েছি আমি। এখন তুমি এবং তোমার সন্তানদের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বাকি জীবন তোমার সাথে থাকার প্রতিশ্রুতি দিলাম আমি। কখনো তোমাকে কষ্ট দিবো না। আবার আমাদের জীবনে অতীতের সেই দিনগুলো ফিরিয়ে আনবো। তোমাকে নিয়ে হারিয়ে যাবো নিবিড় ভালোবাসার ভুবনে। সেখানেই ঘর বাঁধবো তোমাকে নিয়ে। তোমার মতো করেই সাজাবো জগৎ সংসার। রাত এলেই আমার কোলে তোমাকে ঘুম পাড়াবো। সিঁথি করে বেঁধে দিবো লম্বা চুলের বেণী। কখনো শাড়ির কুচি তুলে গুঁজে দিবো নাভির নিচে। তখন হয়তো ভীষণ ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরবে আমাকে। আমিও তখন তোমার মনের অবস্থা বুঝে হাত বাড়িয়ে প্রসারিত করে দিবো আমার বুক। নিশ্চিন্ত মনে তুমি হারিয়ে যেতে পারবে সেথায়। এতোসব ভালোলাগায় তোমাকে নিয়ে সাধ হবে অনন্তকাল বেঁচে থাকার। সেই সময়ের ভালোবাসার গল্প লিখে উপহার দিবো তোমাকে। সাথে আমাকেও তুলে দিবো তোমার হাতে। গল্পের সাথে আমাকেও পড়ে নিও আপাদমস্তক নাড়িয়ে। ভালোবাসি প্রিয়তমা, ভীষণ ভালোবাসি তোমাকে।
Website: www.ichchashakti.com E-mail: ichchashaktipublication@gmail.com