পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত এমনকি কেয়ামত পর্যন্ত হক ও বাতিলের লড়াই ছিলো, চলছে, চলবে। আর এই হক ও বাতিলের মধ্যে কে হক এবং কে বাতিল তা চেনাই হয়ে যায় অনেক সময় দুষ্কর। এই বাতিলরা দুইভাবে প্রকাশ পায়- ১) প্রত্যক্ষভাবে ২) পরোক্ষভাবে। প্রথম প্রকার তো স্পষ্টই। দ্বিতীয় প্রকার- যদিও ইসলামের লেবাসধারী, প্রকৃতপক্ষে মুখোশ পরিহিত বন্ধু নামের শত্রু। প্রথম প্রকার ও দ্বিতীয় পকার উভয়ের টার্গেট-ই হলো এক। আর এমন হক ও বাতিলের মধ্যে ধামাচাপা দেওয়া একটি দল হলো মওদুদীর অনুসারী ও তার প্রতিষ্ঠিত “জামাতে ইসলামী”।
জামাতে ইসলামী শুরু থেকেই মওদুদীর ভ্রান্ত মতবাদ লালন করে আসছে , যা বিশ্বাস করলে একজন মুসলমানের সামান্যতম ঈমানও বাকি থাকবে না।
আবুল আলা মওদুদীর কয়েকটি নিকৃষ্ট মতবাদ-
১) তিনি তার লেখা তাফহীমুল কুরআনে লেখেন যে, আল্লাহ তায়ালা কুরআনে পাকে বিবাহিত মহিলার ব্যভিচারের শাস্তি স্বরূপ রজম কে সাব্যস্ত করে বান্দাদের উপর জুলুম করেছেন। নাউজুবিল্লাহ।
২) মওদুদী আম্বিয়ায়ে কেরামদের (আ.) শানে কটুক্তি করে সূরায়ে হুদের ৪৬নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন যে, সকল নবী-রাসূল (আ.) হলেন মানুষ, আর মানুষ ভুলের উর্ধে না, সুতরাং নবীদের ভুল বা গুনাহ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
শুধু তা বলে থামেননি; বরং অনেক নবীদের নাম নিয়ে নিয়ে বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে তাদের গুনাহগার সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেছেন।
৩) মওদুদী তার লেখা তরজমানুল কুরআনে লেখেন
যে, অনেক সাহাবায়ে কেরাম (রা) ভুল হাদীস বর্ণনা করেছেন। শুধু তাই না; বরং অনেক সাহাবাদের নাম নিয়েও তাদের দোষী বানানোর চেষ্টায় ছিলেন। তিনি সাহাবায়ে কেরাম যে, সত্যের মাপকাটি, তা অস্বীকার করেন।
৪) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত একমত- নামাজ, রোজা, হজ জাকাত, কালেমা এগুলো হচ্ছে ইসলামের মৌলিক বিষয়, আর খেলাফত হলো তার সহায়ক। কিন্তু মওদুদী বলেন, নামাজ, রোজা… এগুলো হলো ট্রেনিংকোর্স আর খেলাফত হলো ইসলামের মৌলিক বিষয়।
৫) কুরআন নাজিলের তেরশত বছর পর জন্মে মওদুদী বলেন- কুরআনের না-কি অনেক অপব্যাখা চলে আসছে। নাউজুবিল্লাহ। এগুলো ছাড়াও আকিদা, আমল ও পরিভাষার বিভিন্ন গোমরাহী মতবাদ ব্যাক্ত বারেছেন আবুল আলা মওদুদী।
তার এই ভ্রান্ত আকিদা সমূহের বিরুদ্ধে যুগ যুগ ধরে হকপন্থী উলামায়ে কেরাম কথা বলে আসছেন এবং ভবিষ্যতেও বলবেন, ইনশাল্লাহ।
কুরআনে পাক থেকে মওদুদীর গোমরাহী মতবাদের সংক্ষিপ্ত জবাব:
১) আল্লাহকে নিয়ে মওদুদীর কটূক্তির উত্তর বিভিন্ন আয়াতেই রয়েছে। যেমন- ان الله لا يظلم مثقال ذرة
আল্লাহ পাক করো উপর সামান্যতম অন্যায় করেন না।
২) নবীজিকে (সা) নিয়ে কটূক্তির জবাব কুরআন থেকে:
আল্লাহ বলেন- انا فتحنا لك فتحا مبينا ليغفرلك الله ما تقدم من ذنبك وما تأخر
আমি তোমাকে স্পষ্ট বিজয় বিজয় দান করেছি, যাতে আল্লাহ তোমার আগের ও পরের সমস্ত ভুল মার্জনা করে দেন। এতে স্পষ্ট, এমনকি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকিদাও হলো- সমস্ত পয়গাম্বর (আ.)
নবুওতপূর্ব ও পর সর্বাবস্থায় নিস্পাপ।
৩)সাহাবায়ে কেরাম (রা.) সম্পর্কে আল্লাহ বলেন- رضي الله عنه ورضواعنه
তাদের প্রতি আমি সন্তুষ্ট, তারাও অনুগত। যেখানে স্বয়ং আল্লাহ সন্তুষ্ট সেখানে তাদের সমালোচনার আর কে আছে। সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি নিয়ে কুরআনের আয়াত- آمنو كما آمن الناس
৪) হাদিসে পাকে রয়েছে- بني الاسلام على خمس شهادةاشهد الااله الله واشهدان محمدرسول الله واقام الصلاةوايتاءلزكاةوالحج وصوم رمضان
ইসলামের ভিক্তি পাঁচটি- কালেমায়ে তাওহীদ, নামাজ, রোজা হজ, জাকাত।
আর খেলাফাহ হলো তা আদায়ের সাহায়ক।
৫)আল্লাহ বলেন -انا نحن نزلنا الذكروان له لحٰفظنون – আমি কুরআন নাজিল করেছি এবং তা হেফাজতের দায়িত্বও আমার। যেখানে স্বয়ং আল্লাহ দায়িত্ব নিয়েছেন সেখানে কুরআনের ভুল ব্যাখ্যার কোন সন্দেহই থাকে না।
কুরআন-হাদীস, ইজমা, কিয়াস সবগুলোর মাধ্যমেই প্রমানিত হয় মওদুদী কখনও ইসলামের পক্ষে ছিলেন না; বরং ইসলামের মুখোশ পরে তিনি ইসলামকে শিকারী বানিয়ে তার ব্যাক্তিত্ব ও রাজনীতি ফোকাস করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো- মওদুদী প্রথম অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর তার বাবা মারা যান, ফলে তিনি পরিবার চালাতে লেখা-পড়া বাদ দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন এবং এক পর্যায়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। অতঃপর এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে নিজের স্বার্থ হাসিলে প্রতিষ্ঠা করেন জামাতে ইসলামী। আর শুরু করেন নিজের মনগড়া গোড়ামী মতবাদ। আর এই মওদুদীর প্রতিষ্টিত ও অনুসরণীয় দল “বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী” তারা শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মওদূদীর অনুসরণ করে আসছে। তাদের মূল মওদুদীকে এমনকি বর্তমানেও তাদেরকে আহলে হক উলামায়ে কেরাম তাদের ভ্রান্ত আক্বিদার কথা জানিয়ে তা থেকে নিজেদের সরিয়ে সঠিক পথে আহ্বান করছেন। কিন্তু কে শুনে কার কথা, তারা তাদের গোমরাহী নিয়ে এখনও বসে আছে। মুখে ইসলামের কথা বলে বলে অনেক ধার্মিক ব্যাক্তিদের বিভ্রান্তিত করছে!
এমতাবস্থায় আমাদের উচিৎ তাদের মুখোশ উন্মোচন করে সকলকে সতর্ক করা। আল্লাহ পাক আমাদের তাওফিক দান করুন এবং সর্বদা হকের উপর অটল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।