1. admin@ichchashakti.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০২ অপরাহ্ন

রক্তকরবীর প্রেম — শরীফ হোসাইন

  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১৮ বার পঠিত

রক্তকরবীর প্রেম পর্ব-০১  —– শরীফ হোসাইন৷

 

নির্জন রাস্তায় চলছি, গ্রামের আকাঁবাকাঁ পথ ধরে৷  নীল দিগন্তে তখন কুসুমিত  হতে শুরু করেছে।  এ গায়ের পথের ধূলো কেমন যেন একটা নেশার সৃষ্টি করে।  চাকরি সুবাধে জয়পুরহাটের এ গ্রামে আগমন।  এখানে নিজেকে অপরিচিত আগুন্তুক হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করেছে।  যেমন শুভ্রতা তেমন সৌন্দর্য  এ গ্রামের৷   গ্রামের মেঠোপথ ধরে বয়ে চলেছে তুলসীগঙ্গা  নদী।  অপরূপ সৌন্দর্য  এ নদীর৷  দু-তীর সবুজ গাছপালায় ছেয়ে আছে।  পথ চলতে চলতে কয়েকটি মন্দির চোখে পড়ল। সে মন্দিরের পাশেই একটি রক্তকরবী ফুলের গাছ।  সে গাছের ফুল  ছিড়ে  মেঘকালো কেশে  জায়গা করে দিল এক বালিকা ।  তার চোখ দুটোতে কেমন যেন একটা মায়া , নিজের চোখকে বারবার সরানোর চেষ্টা করছিলাম কিন্তু কোথায় যেন আটকেঁ গেল নেত্র।  ভারী হয়ে আসতে থাকল আমার  দেহ।   যেন বরফ শীতল উষ্ণতা  আমার হৃদয়পটে শিহরন দিয়ে গেল।  তার সঙ্গে পরিচিত হবার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না।   জিজ্ঞেস  করেই বসলাম।

ওহে,

আশা জাগানিয়া ভোরের  হাওয়া,

হঠাৎই পেলাম কেন তোমার দেখা?

তোমার চিকুরজালে রক্তকরবীর প্রেম,

জগতের সকল বন্ধন ছিন্ন করিবার চায়

নতুন করে বাঁচিবার সাধ জাগে  ভুলিয়া

সকল পুরোনো মান অভিমান  সংঘাত ছাড়িয়া।

 

হঠাৎই তার হরিনী চোখ দুটো মিটমিট করে উঠে ইশারায় কি যেন বুঝানোর চেষ্টা করল।

আমি দৃঢ় হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম   —

আপনার সৌন্দর্য লুকাবার বৃথা চেষ্টা কেন তোমার বারবার?

কেন সরিয়া যাচ্ছো দৃষ্টির আড়ালে, না শুনে আমার  মিনতি সম্ভার,

রূপের সৌন্দর্যকে আড়াল করিবার কেন তোমার  এত সাধ?

তোমার এলোকেশের রক্তকবরী যে উন্মোচিত করে সৌন্দর্য   অবাধ।

 

হেসে চলে গেল সেই বুনোলতার মত দোদুল্যমান মান করে আমার হৃদয়।  চিন্তায়  বিভোর হয়ে উঠল আমার এ হৃদয়। সার্কিট হাউজে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল আমাদের অফিস থেকে।  সকাল বারোটায় ফিরলাম সার্কিট হাউজের ভিআইপি -১০ রুমে।  হঠাৎ আয়নায় চোখ পড়ল, দেখি পিছনে দাড়ায় সে প্রেয়সী–

 

” ও মোর প্রিয় তুমি আসিয়াছো মোর আঙ্গিনায়,

করিয়া নিবে কি আপন মোরে,

আমি যে মাতাল হয়েছি ভুলিয়াছি নিজেকে

সপিয়া দিয়াছি আমার আকুল হিয়া

শুধু আঁখিপাতে দেখছি মূর্তিরূপে তোমায়। ”

 

হা হা হাহা,

‘ হে নব্য পথিক তুমি নতুন শহরের মায়ায় মত্ত,

হারিয়েছ মোহে,

তোমার তরেতে দেব না ধরা সহসা রহিব কুহেলিকা হয়ে।

হা হা,

 

কোথায় গেলে হে স্বপ্নচারিনী,   কেন কল্পনায় আসলে,  জাগরনেও কেন দেখি তোমাকে আমি।

 

পরক্ষনেই মনে হলো এ নির্জন কক্ষে আমার একাকী মূর্তি ছাড়া আর কেউ ত আসার কথা না,  কি হলো আমার।

গতকাল রাতে ঘুম হয়নি আমার তাই মনে হয় দৃষ্টিভ্রম হচ্ছে। বিছানায় শুয়ে একটু ঘুম আসার চেষ্টা করছিলাম।  আর ভাবছিলাম কাল আরেকটিবার যাব।

 

সন্ধ্যায় বের হলাম শহরে। এ শহরের বিখ্যাত লালমুরগীর মাংস আর লতিকার গল্প শুনেছিলাম বহুদিন আগে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি হোটেলে খেয়ে নিলাম।  এক কথায় এর স্বাদ ভুলবার নয়।   আমার বন্ধু জিসান, আমি জয়পুরহাট থাকায় ফোন দিয়ে জানালো তার একজন বন্ধু নাবিল জয়পুরহাট থাকে। রাতে  আমাকে ফোন দিল নাবিল।

নাবিল জানালো সে ঢাকা যাবে আমাকে সময় দিতে পারবে না।  কিন্তু জিতু নামের আরেক বন্ধুর ফোন নাম্বার দিল।  কথা হলো জিতুর সাথে।  রাত ৮:০০ ঘটিকায়  বের হলাম, আমতলীর মোড়ে দেখা হলো তার সাথে প্রথম পরিচয়েই এত আপন হতে পারে বন্ধু জিতুকে না দেখলে বুঝবার সাধ্য ছিল না এর আগে।

শহরটা একটু ঘুরে দেখলাম,  চা খেলাম আড্ডা দিলাম।

পরদিন সকালে আবার উঠিলাম খুব ভোরে, চলে গেলাম সেই তুলসীগঙ্গার তীরে ভাঙ্গা মন্দিরের পাশে,  সেই রক্তকরবীর ফুল আর নীল শাড়ীর আঁচলে সে মায়াবতী  আমার দৃষ্টিগোচর হলো,  নিশ্চুপ মন তখন রবি ঠাকুরের  কবিতা পাঠ করিতে থাকিল —

 

“আজি এ প্রভাতে রবির কর

কেমনে পশিল প্রাণের পর,

কেমনে পশিল গুহার আঁধারে প্রভাতপাখির গান!

না জানি কেন রে এত দিন পরে জাগিয়া উঠিল প্রাণ।

জাগিয়া উঠেছে প্রাণ,

ওরে উথলি উঠেছে বারি,

ওরে প্রাণের বাসনা প্রাণের আবেগ রুধিয়া রাখিতে নারি।”

 

এ নারী নাকি প্রতিমারূপী কোন সত্ত্বা আমি বুঝে  সঠিকভাবে আচঁ করতে পারলাম না।

এবার সাহস করে তার কাছে চললাম, হঠাৎ শুনতে পেলাম নুপুরের শব্দ ”

 

নুপুর বাজে, দোল খায়, নৃত্যভঙ্গি, প্রেমের আঁধার

শব্দে শব্দে, মনের ঢেউ, সাজে সাজে, প্রেমের জড়োয়ার।

চরণে চরণে, হৃদয়ের সুর, নৃত্যে নেচে, জীবনকে পূর্ণ

নুপুরের খোঁজে, ছুটে চলে, স্বপ্নের মাঝে, প্রেমের পালা।”

 

সখী একটু বার দৃষ্টিপাত করো এ পথিকে তুমি।

তার হরিনী চোখ তুলে  আমার পানে চেয়ে বলল ,  কে আপনি কি চান এখানে?

বললাম ” তোমার সনে কথা পাতিবার চাই, চাই তোমার সাঙ্গ, তোমার তরেতে মন যে নাচিছে গ্রহন করিয়া নাও মোরে প্রিয়।  ”

 

ইস, লজ্জা নেই পথিক তোমার, এসেছো কোথা হতে,  দুদন্ড দেখিয়া তুমি কেমন হয়েছ অন্ধ।

 

 

রক্তকরবীর প্রেম

(পর্ব-০২)

 

লজ্জা কিসের  প্রিয়া, লজ্জা কিসের বল,

যদি ভালোবাসিস আমায় অজানাতে হারায় চল।

 

প্রথমবারের মত কোন রাগিনীর সাথে কথা বলা হলে চোখে চোখ রেখে,  নেশায়  আসক্ত হয়ে যাচ্ছিলাম যতবার তার ঐ কাজলরেখার উপর আমার চোখ পড়ছিল।

তা তোমার নাম??

আমার নাম নীলাবতী।

 

নীলাবতী তুমি   হইয়ো না বিলিন এ প্রভাতে,

আমায় তুমি কি দিবে সুযোগ হারায়  যেতে তোমাতে।

 

আগন্তুক, এসব বলবেন না মানুষ শুনলো আমার কলল্ক হয়ে যাবে ।  আপনি এখানে এসেছেন কোথা থেকে।

আমি এসেছি ঢাকা থেকে উঠেছি তোমাদের সার্কিট হাউজে। সার্কিট হাউজ চেনো?

জ্বি, চিনি ওটা আমাদের কালেক্টরেট বালিকা বিদ্যালয়ের পাশে।   আমি মাঝে মাঝে ঐখানে যাই। আবার পরিবার বড্ড ভয় পায় আমাকে নিয়ে। তবে আমি মুক্ত স্বাধীনতায় বিশ্বাসী।  ধর্ম বর্ণ ভেদাভেদ আমার নেই।

একদিন আসেন সার্কিট হাউজ মাঠে। আচ্ছা দেখি যাওয়া যায় কিনা।

” নীলবতি তোমার সম্মতি পাওয়ার জন্য যদি শতবছর ঈশ্বর আমায় রাখে অপেক্ষমাণ,

থাকব পথ চেয়ে অসীমে সময়ে চেয়ে সীমাহীন দূরত্ব যেথায় মিলেছে নীল আসমান,

তোমার চোখের ইশারা যদি একটিবার আমাকে ডাকে,

শত বেদনা রুষ্টতা হারিয়ে দিব জীবন স্রোতের বাঁকে। ”

 

পথিক আজ যে আমাকে যেতে হবে সময় যে বহমান।  অন্যদিন সাক্ষাৎ হবে, মঙ্গল আসুক তোমার জীবনে আবহমানকাল ।  ভালো থেকো।

নীলাবতীর সাথে সময় যেন ক্ষিপ্ত ঘোড়াবেগে চলে গেল,  কেন আরেকটু ধীরে সময় ফুরাল না।  কেন সে সময় শৃঙ্খলিত হলো না আমার আহ্বানে?   নীলাবতী তোমার কি এমন হতো  আর ক্ষণকাল আমাকে সাঙ্গ দিলে।

সার্কিট হাউজে ফিরে চললাম মনকে অনেক বুঝিয়ে কিন্তু মন কিছুতে বুঝিতে চায় না।

আজও পারলাম না আমার মনকে চিনিতে

পাগল মন রে

মন কেন এতো কথা বলে

ও পাগল মন, মন রে

মন কেন এতো কথা বলে।”

 

রিকসাতে যখন গতি পেল তখনও আমার মন মন্দিরে প্রতিমারূপে নীলাবতীর সে অবয়ব দেহ। গ্রামের আকাঁবাকা রাস্তায় চলছে রিকসা পাশ দিয়ে বহমান তুলসীগঙ্গা,  তুলসীগঙ্গার রূপে যেন  বর্ষার যৌবন বয়ে চলেছে নিরুদ্দেশ যাত্রায়।  নদী ও মানুষের কত মিল এ বসুধায়,  সর্বদা যেন আস্বাদন করার ইচ্ছা সকল সৌন্দর্য , ডুবে থাকার ইচ্ছা যেন অমৃত সুধা পিয়ে।  সার্কিট হাউজে আসার পর গোসল করলাম,  নীল রঙ্গের একটি  টি শার্ট পরিধান করে খাবার খাওয়ার জন্য বের হলাম।  চললাম শহরের নির্জন স্টেশন এর মোড়ে। এখানে ভালো নদী ও চলনবিলের মাছ পাওয়া যায়।  হোটেলের খাবারের প্রতি আমার কেন যেন অরুচি কাজ করে।  কিন্তু,  এ শহর যে এখন নিজের শহর মনে হয়, মনে হয় এখানকার সবই সুন্দর অমৃত -সুধা।  ছোট মাছ,  বিভিন্ন ধরনের ভর্তা খেলাম, সাথে খেলাম লালমুরগীর রোস্ট।  এখানকার রোস্টগুলো স্থানীয় মসলায় ভরপুর একটু ঝাল এবং এর স্বাদ অবর্ণনীয়।  খাওয়া দাওয়া শেষে সার্কিট হাউজ মাঠে বসে খেলা দেখায় মত্ত হলাম।  ছেলেরা ফুটবল, ক্রিকেট খেলায়  আর মেয়েগুলো ঝালমুড়ি ফুচকা খাওয়ার ব্যস্ততায় কাটাচ্ছে। আমি বসে বসে ভাবছি কি করা যায়। পরক্ষণেই ভাবলাম একটা কবিতা লিখব,  কী নাম দেওয়া যায় চিন্তা করতে লাগলাম।    স্বপ্ন হলে মন্দ হয় না।

 

” স্বপ্ন দেখছি নীলাবতী তুমি আমার পাশে আসন গাথিঁয়া রয়েছে দৃঢ়,

তোমার অনুপস্থিতি যে আমাকে আকঁড়ে ধরে সদা করছে অনঢ়,

প্রেম আশা প্রত্যাশার মেঘ যে ক্রমশই হচ্ছে গাঢ় থেকে গাঢ়,

তোমার অবয়ব যেন চোখের মনিপাতে সদা জাগ্রত,

ভেবে পাচ্ছি না এত সুখ এ রুঢ় হৃদয়ে কোথা হতে হল আগত।

একি মায়ায় জড়ালে তুমি?

এক দন্ড যে পাচ্ছি না তোমাকে ভুলে থাকতে আমি।

এসো হে কুহেলিকা একবার স্বপ্নলোক থেকে বাস্তবে,

এসো হে মায়াবতী নীলা আমার হৃদয়পটে। ”

 

কবিতা থেকে যখন মন সরালাম ঝাপসা চোখে দেখছিলাম দূর হতে কে যেন আমার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ক্রমে ক্রমে স্পষ্ট হয়ে গেল এ যে নীলা, আমার নীলাবতী৷  আমার কথা যেন এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেল।

শুধু আবেগতাড়িত একটি কথায় আসল।

তুমি আসিয়াছো!

হ্যাঁ।

তোমাকে নীল শাড়িতে বেশ সুন্দর লাগছে নীলা।  তুমি আসবে এ প্রতিক্ষায় ছিলাম।

 

“তোমার চোখের দিকে চেয়ে, আমি হারিয়ে যাই,

প্রতি নিঃশ্বাসে চাই, ভালোবাসার এই আবহে থাকি।

চাওয়া যতই গভীর, প্রাপ্তি যেন এক স্বপ্ন,

তোমার হাতে আমার হাত, জীবনের সব কিছু।

শুধু তোমার জন্য ভালোবাসা,

প্রাপ্তি আমার, চাওয়া একান্ত।

মিলনের এই মূর্চ্ছনায়,

হৃদয় জুড়ে তুমি, আমি, একান্ত।”

 

সহসাই আবিষ্কৃত করলাম নীলার হাতে ” এক গুচ্ছ রক্তকরবীর ফুল৷

এ নাও আমার প্রিয় পুষ্প করবী, নাও গ্রহন কর।  কি হল নাও। নিবে  না?

হাত বাড়িয়ে ধরে নিলাম ফুল।৷ তা তুমি নীল শাড়িতে? নীল রং আমার বড্ড প্রিয়।  আমারো। দেখ দুজনার কত মিল।  তোমার পছন্দ নীল, আমারো, তোমার পরিহিত শাড়ি আর আমার টি-শার্ট সব নীল।  তোমার পছন্দ রক্তকরবী আমার পছন্দও তাই।

হুম।চলুন ঐদিকটাই যাওয়া যাক।   এ শহরের ঝালমুড়ি খেয়েছেন কখনও?

আমার কণ্ঠরোধ করেছে যে নারী তার কথায় শুধু মাথা নেড়ে না করা ছাড়া উপায়ন্তর পেলাম না।

ঝালমুড়ি খেতে গেলাম, খেতে খেতে অনেক কথা বলল,  আমি কিছুই যেন শুনতে পাচ্ছিলাম না শুধু অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়েছিলাম,  চেয়েছিলাম তার দৃষ্টিপাতে।

তা ঝালমুড়ি কেমন লাগল?

অমৃত, অমৃত। কেন অমৃত মনে হলো? এদিকের ঝালমুড়ি হাতের তৈরি মুড়ি দিয়ে বানানো, এখানকার মুড়িগুলো কাঁচা সরিষার ঝাঁঝ দিয়ে মাখা। এমন ঝালমুড়ি কোথাও পাওয়া যায় না।  কথায় কথায় কেমন করে  যেন সন্ধ্যা হয়ে গেল।  সময় ফুরিয়ে গেল খরস্রোতা নদীর মত।

আমাকে যে উঠতে হবে নীল,  বাড়ি ফিরতে হবে।  তাকে থাকার জন্য অনুরোধ করার খুব সাধ জেগেছিল। কিন্তু পারিনি।  নিরুপায় হয়ে গেলাম। শুধু অনুনয় মিনতি করে বললাম ” আর ক্ষণকাল কি থাকা যাবে?  তার চোখে থেকে যাওয়ার আগ্রহ থাকলেও থাকতে পারল না। আমি তাকে রিকশায় করে পৌঁছে দিতে চাইলে বলল,  না থাক,  অপরিচিত কারো সাথে রিকশায় দেখলে লোকে কি বলবে?

তারপর, আরেকবার বললাম যাই না, আমি তোমার সনে।

কিছুক্ষণ সুনসান নীরবতা ,  তারপর রাজি হলো সে।

শহরের শেষপ্রান্তটায় আসতেই আমাকে নামতে হলো সে চলে গেল। পরদিন সকালে আমার জয়পুরহাট থেকে পাচঁবিবি উপজেলায় যেতে হলো অফিসিয়াল কাজে।  সেখানে গেলাম আমরা চার সহকর্মী –  আমি,  অন্তর ভাই,  রাইসা আপু ও হাসিব ভাই।  যাওয়ার আগে ভোরবেলা সার্কিট হাউজ ত্যাগ করে গিয়েছিলাম সেই তুলসীগঙ্গার তীরে ভাঙ্গা মন্দিরের পাশে। রক্তকরবী গাছে আজ অনেক ফুল ফুটেঁ আছে, কিন্তু যার স্পর্শে সে রঙ্গিন হয় সে আজ নেই। কেমন যেন শুন্যতা কাজ করছে চারদিকে।  হঠাৎ দেখলাম একটি ছোট মেয়ে সে ফুলগাছের ফুল ছিড়ছে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম,  এখানে নীলাবতীদের বাড়ি কোথায়। মেয়েটি মৃদু হেসে বলল, এ নামে ত কেউ থাকে না এখানে।

আমি নিশ্চুপ থেকে বললাম, নীলা নামের কেউ থাকে?  উত্তরে  না শুনে মনের কোণে বজ্রপাত শুরু হল।

জগতের সকল কিছু যেন  ক্রমশ ঘোলাটে লাগতে শুরু করল।

তারপর রক্তকরবীর দিকে তাকিয়ে  রইলাম–

 

“রক্তকরবী, তুমি

গ্রীষ্মের রোদে লাল পাঁপড়ি অবয়ব,

কিছুটা প্রেম, কিছুটা যন্ত্রণার

তোমার রঙে ভরিয়ে দেয় হৃদয়।

রক্তকরবী তুমি

মাধুর্যের ছোঁয়া, মনে দিলে সুর,

রক্তকরবী তুমি

প্রেমের প্রতীক, অমলিন সুখের রূপের আসর।  ”

 

সার্কিট হাউজে ফিরে পাচঁবিবি গেলাম।  সেখান  থেকে ফিরে আবার

সার্কিট হাউজে ফিরলাম। সেখান থেকে ঢাকা রওনা দিলাম।  ট্রেনে বারবার তার কথা মনে হচ্ছিল।  পরক্ষণে মনে হল একটা ফোন দিই তাকে,  কিন্তু তার মোহে এতটায় ডুবে ছিলাম যে তার ফোন নাম্বার বা তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিছুই রাখা হয়নি।

শুধু নয়নজলে নিজেকে শীতল করার চেষ্টা করলাম। আর মনে মনে আবৃত্তি করলাম–

 

” ধূসরতার মধ্যে ডুবিয়ে দিয়ে কোথায় রহিলে প্রিয়া,

আজ ক্ষণে ক্ষণে তোমার স্মৃতিতে কাঁদছে মোর আকুল হিয়া,

তুমি কি  বাস্তব ছিলে নাকি অলিক,

আর কিছুদিন থেকে যেতে মোর দ্বারে দিতে ভালোবাসা খানিক।

আজ আমি নিস্তব্ধতায় তোমার চিত্রপট  দেখি,

তুমিও কি ভাবছ বসে, দেখছ আমার ছবি। ”

 

মায়া হয়ে এলে তুমি, আবার চলে গেলে ,

শত ব্যথা ভুলিয়ে আবার ডুবালে শত বিরহে।

আরেকটি বার ফিরব আমি তুলসীগঙ্গার তীরে,

সেদিন ওগো দিয়ো দেখা এ অদমরে।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park