আজকাল কিছু নতুন নতুন শব্দ শুনে থাকি। যদিও ঘটনার প্রেক্ষাপট থেকেই নতুন শব্দের উদ্ভব হয়ে থাকে। যেমন- সমাজে বাড়ছে সড়ক দূর্ঘটনা, বাড়ছে দ্রব্যমূল্য বা জিনিসপত্রের দাম। আর এসব ঘটনা থেকেই নতুন কিছু শব্দ পেলাম, তাই বলতে পারি যে, বেপরোয়া চালকদের কারনে ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা। দূর্ঘটনার কারনে কত মা হারিয়েছে সন্তান, কত পরিবার হচ্ছে নিঃস। যার যায় সে বোঝে। তবে কি দূর্ঘটনায় বেচে না থেকে মরে যাওয়া অনেক ভালো, বিশেষ করে দূর্ঘটনায় যার একটি পা থাকে না, যার একটি হাত থাকে না সে বোঝে সমাজে কত অবহেলিত হতে হয়। এসব পঙ্গু, অসহায় জীবন পরিবারের বোঝা। এদের অনেকের পরিনতি শেষে ভিক্ষা তে গিয়ে পৌছে। তাই এ ধরনের দূর্ঘটনা না কে আমরা বলতে পারি সড়ক সন্ত্রাস। প্রশ্ন হলো এই সন্ত্রাস জম্ম দিচ্ছে কারা, কেনই বা এই সন্ত্রাস ভয়াবহ আকার ধারন করছে। আবার যে ভাবে দিন কে দিন দ্রব্যমূল্য বাড়ছে তাতে করে বলতে পারি মূল্য সন্ত্রাস। তবে বর্তমানে মূল্য সন্ত্রাস আর সড়ক সন্ত্রাস একটু ব্যপক থেকে ব্যপকতর দেখা যাচ্ছে। সমাজে নানা ধরনের সন্ত্রাস আছে যেমন- ছিনতাই, খুনি, চোর, বাটপার কত ধরনের তা বলে শেষ নেই।এ দের জন্য আইন আছে। যদিও এদেশের আইন শুধু বইয়ে সীমাবদ্ধ। তবুও মাঝে মাঝে দেখা যায় পুলিশ ধরছে, থানা হাজতে ভরছে, মামলা চলছে। মজার বিষয় হচ্ছে এদেশে একজন ব্যক্তিকে ৩০ বছর মামলা চালিয়ে প্রমান করতে হয় যে, সে ব্যক্তি দোষী বা নির্দোষ কিংবা এই জমি আমার।
যাই হোক, কথা হলো এদের জন্য আইন আছে কিন্তু ঐ যে সড়ক সন্ত্রাস আর মূল্য সন্ত্রাস এদের জন্য মনে হয় আইন হয়তো নেই, না হয় বাস্তবায়ন হচ্ছে না।আর না হয় নতুন শব্দের জন্য নতুন আইন এখনো হয়নি। তা না হলে দিন যত যায় ততই সড়ক দূর্ঘটনা আর দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছেই। সত্যি কথা বলতে কি, আমার মনে হয় দিন কে দিন যত যাবে ততই দূর্ঘটনা বাড়বে। এর কারন গুলো যদি বলি,
(১) একজন লোক গ্রাম থেকে শহরে আসে কাজের জন্য, আবার শহর থেকে বিদেশ যায় কাজের জন্য। সাধারন মানুষ জন গ্রাম থেকে -শহরে, শহর থেকে –বিদেশ পর্যন্ত চলে যায় কাজের জন্য। আর আমরা শহর ছেড়ে গ্রামে যেতে পারি না, গ্রাম উন্নয়নের জন্য। এটা আমাদের ব্যর্থতা। আমরা ঘুরে ফিরে যা করি এই ব্রীজ, সেই ব্রীজ, উড়াল সেতু, ইউ সেতু, জেড সেতু সব এক জায়গায় অর্থ্যৎ এই শহরেই করছি। তাই জ্যাম বাড়বে বৈ কমবে না কোনদিন। আর দূর্ঘটনাও কমবে না।
তাই আমাদের উচিত গ্রামের রাস্তাঘাট, কলকারখানা, কর্মসংস্থান এর ব্যবস্হা করা। তাহলে দেখবেন গ্রামের মানুষ শহরে আসবে না।জ্যাম বা দূর্ঘটনা কিছুটা হলেও কমবে। প্রয়োজনে আমরা প্রতি বছর যদি একটি করে জেলা উন্নয়নের কাজ করলেও কোন একসময় দেখবেন গ্রাম উন্নয়ন হয়ে যাবে, মানুষেরা শহর মুখী হবে না, জ্যাম, দূর্ঘটনা তেমন হবে না। কারন শহরে কটা মানুষ বাস করে, সব আসে গ্রাম থেকে। এই যে শহরে এত রিক্সা চালক এরা কিন্তু শহরের একজনও না সব গ্রাম থেকে আসা। কারন গ্রামে রিক্সা চালাতে লজ্জা পায়, তাছাড়া গ্রামের মানুষ শহরে আসাতে, গ্রামে আর রিক্সা চড়ারও মানুষ পাওয়া যায় না। অথচ গ্রামে যদি কাজ করার ব্যবস্থা হত তবে গ্রামের মানুষ গুলো শহরে এসে রিকশা চালাতো না। দেখেন গ্রাম উন্নয়ন করলে রিক্সা চালকও অনেক টা কমে যকবে।
(২) আবার আমাদের দেশ পাশ্চাত্য অনুসরণ করে। কিন্তু সেখানেও ভেজাল, কারন পুরোপুরি অনুসরণ করে না। দেখা যায় শিক্ষা খাত করেছে বা আরো কিছু খাত করেছে অথচ রাস্তাঘাট বা দূর্ঘটনা বসত যত আইন আছে সেগুলো আর করা হয় নি। কেননা বিশ্বের অনেক দেশে রাস্তাঘাট থেকে দোকান, মার্কেট, বাজার ইত্যাদি দুরে হয়ে থাকে। তাই ঐ সব দেশের দূর্ঘটনা অহরহ শোনা যায় না। অথচ আমাদের দেশে রাস্তাঘাট না হতেই রাস্তার দু-পাশে দোকানপাট, মার্কেট, বাজার, বাড়ি, স্কুল, প্রভৃতির জম্ম হয়ে যায়। যার কোন আইন কানুন নেই। তাই দূর্ঘটনা বাড়ছেই, বাড়বেই।
(৩) আরেকটি বিষয় হলো আমাদের দেশে এখনো দূরপাল্লা তে বাসে করেই যেতে হয়। ট্রেনের ব্যবস্থা এখনো করা হয়নি। তবে শুনেছি উদ্দ্যেগ নিয়েছে। এই উদ্দ্যেগ আবার কবে শেষ হবে তা আদৌ জানা নেই। ট্রেন যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দেয় তবুও যানবাহন কিছুটা কমবে। যদি ট্রেন দূর্ঘটনাও বেড়ে চলেছে। তবে কি মাঝে মাঝে আমার মনে হয় কিছু দূর্ঘটনা ঘটে না ঘটায়। যেমন -পাবক লাগে না, লাগায়। ট্রেন দূর্ঘটনা গুলোও এমনি মনে হয়। কারন -আগুনের হাত পা নেই যে উড়ে এসে ঝুড়ে বসবে।তাছাড়া যখন ছোট ছিলাম তখন এতো দূর্ঘটনা শুনিনি। যা এখন শুনি বা দেখি।
(৪) আবার আরেকটি বিষয় না বললেই নয়, সেটা হলো যানবাহন সংক্রান্ত যত আইন আছে, ট্রাফিক আইন, দূর্ঘটনা জনিত আইন ইত্যাদি বিষয়ে কঠোর হতে হবে এবং আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। মানুষকে আইন জানাতে হবে। এদেশের নব্বই ভাগ মানুষ আইন জানে না। আর দশ ভাগ যারা জানে তারা জানায় না বা বাস্তবায়ন নেই বা টাকার গোলাম হয়ে যায়। সত্যি বলতে কি যারা আইন তৈরী করে তারাই ভাংগে, তারাই মানে না। একবার শুনেছি নিষিদ্ধ করা হয়েছে কারো গাড়িতে কালো গ্লাস থাকবে না, অথচ বড়বড় মাথাওয়ালা লোকদের গাড়িতেই কালো গ্লাস, মাঝে একবার করেছিল কিন্তু বইয়ের আইন মানে না আর মুখের আইন মানবে। তাই মুখে না করে আইন করে করা উচিত ছিল।
(৫) এরপর বলতে পারি, আজকাল যেন তেন লোককে লাইসেন্স দিয়ে দেয়। আবার গাড়ির চালক হেলপার কে দিয়ে গাড়ি চালায়, ঘুমের ঘরে গাড়ি চালায়, নেশা করে গাড়ি চালায় ইত্যাদি কারনেও দূর্ঘটনা বাড়ছেই। এসব বিষয়ে আইন আছে কিন্তু বেশীর ভাগ বাস্তবায়ন নেই। এদিক দিয়ে কঠোর হতে হবে। মজার বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু দয়ার সাগর। এতো টাই দয়ার সাগর যে কুকুর মারে বলে হাইকোর্টে রিট করে অথচ প্রতি নিয়ত দূর্ঘটনা ঘটছে, কত মানুষ মরছে। তার জন্য মনে লাগে না এতটুকু হিট।কি হচ্ছে এসব বুঝিনা। কি বা করছে এদেশের মানুষ, দূর্ঘটনার জন্য কিন্তু কোন ধর্মীয় বা রাজনীতি বিদ রা কখনো কোন আন্দোলন করে না। যাই হোক, কুকুর রিট কারি ব্যাক্তি তিনি বুঝিয়ে দিলেন যে মানুষের চেয়ে কুকুরের দাম অনেক। তা না হলে কুকুরের জন্য রিট করে আর মানুষের জন্য মামলাও করে না, মুখও খোলে না।যে ভাবে মানুষ মরছে তাতে মাঝে মাঝে মনে হয় যেন -দেশে মানুষ মারার প্রতিযোগীতা শুরু করেছে বা চলছে।
পরিশেষে বলতে চাই যে, সড়ক দূর্ঘটনা থেকে মানুষ কে বাচাতে হলে মনে করি, প্রথমে গ্রাম উন্নয়ন করা উচিত, তাহলে শহরে মানুষের চাপ কমবে, রাস্তাঘাটে দোকানপাটের চাপ কমবে, এমন কি জ্যাম সেটাও কমবে। ভারী যানবাহন বহনকারি গাড়ি বিশেষ করে ট্রাক বা মাল বহন করে থাকে এমন গাড়ি যেগুলো আছে সেগুলো রাত আটটার পর থেকে ভোর সাতটা পর্যন্ত চালালে ভালো হয়। ফিটনেস বিহীন গাড়ি বা পুরাতন বা লাইসেন্স বিহীন গাড়ি কে অনুমোদন না দেওয়া এবং শাস্তিদানে কঠোর হতে হবে।