জীবনে যেকোন শখ বা আহ্লাদ পূরণের সুনির্দিষ্ট একটা সময় আছে। সঠিক সময়টা একবার পেরিয়ে গেলে শখ হয়তো পূরণ হয় ঠিকই, তবে তৃপ্তিটা ঠিক পাওয়া যায় না।
১৭ বছর বয়সে যেই বার্গারটা, বিরিয়ানিটা খেতে অমৃতের মত লাগে, ২৭ বছর বয়সে এসে সেটা ভালো নাও লাগতে পারে।
১৮ বছর বয়সে এসে সমবয়সী কারো সাথে শাড়ি পাঞ্জাবী পরে রিকশায় ঘুরতে ভালো লাগতে পারে, ২৮ এ যে একই কাজ করতে ভালো লাগবে, তার কোন গ্যারান্টি নাই।
১৯ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড ইয়ারে বন্ধুবান্ধব নিয়ে বান্দরবান ট্যুর দিলে যেই আনন্দ পাওয়া যাবে, ২৯ বছর বয়সে সেই আনন্দ নাও পাওয়া যেতে পারে।
একদিন নিজের ছাদে বাগান করবো, এই আশায় বসে থেকে যেই মানুষটা নিজের বারান্দায় টবে কোন গোলাপ এর চারা লাগালো না, ছাদ হওয়ার পর দেখা গেলো সেই মানুষটার আর বাগান করার সময়ই নাই।
একদিন চাকরি করে বাবা মাকে দামী দামী শাড়ি পাঞ্জাবী কিনে দেয়ার স্বপ্ন দেখা মানুষটা চাকরি করে টাকা কামাবে ঠিকই, কিন্তু ততদিনে বাবা মা হয়ে যেতে পারে আল্লাহর মেহমান।
জীবনের ছোটখাট সাধ আহ্লাদ খুব দামী জিনিস। এইসব জিনিসই একটা মানুষের হৃদয়কে জীবিত রাখে, সতেজ রাখে, প্রাণবন্ত রাখে। মানুষের হৃদয় একটু একটু করে মরে যায়, কাঠখোট্টা হয়ে যায় শখ পূরণের অভাবের হাহাকারে। এজন্য সময় থাকতেই এসব শখ পূরণ করে ফেলতে হয়।
অনেক টাকা জমলে একদিন খাবো, এই চিন্তা না করে অল্প কিছু টাকা জমিয়ে এখনি খেয়ে আসুন চিলক্সের বার্গারটা, কিংবা কাচ্চি ভাই এর কাচ্চিটা। ট্রাস্ট মি, জীবনের সেরা তৃপ্তিটা পাবেন।
দেরি না করে পছন্দের মানুষটাকে আজকেই রিক্সা ডেটের অফারটা দিয়ে দেখুন। রাজী হলে শাড়ি পাঞ্জাবি পরে হুডখোলা রিক্সায় বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ঢাকা শহর ঘুরে বেড়ান। পকেটে কিছু টাকা হলেই বন্ধুর ঘাড়ে হাত রেখে বলে বসুন, “চল ব্যাটা, বান্দরবান যাবো। আজকেই যাবো, এক্ষণি যাবো। ব্যাগ গুছা, চিটাগাং এর ট্রেইন ধরতে হবে।”
নিজের ছাদে বাগান হবে, এই আশায় বসে না থেকে ভাড়া বাসার বারান্দার টবেই লাগিয়ে ফেলুন পছন্দের গোলাপের চারাটা। টিউশানির টাকায় কম দামেই কিনে ফেলুন বাবা মায়ের জন্য শাড়ি পাঞ্জাবিটা, হোক না সুতি, শখ পূরণটাই বড় কথা!!
মনে রাখবেন, একদিন সব হবে, এই আশায় যে নিজেকে বঞ্চিত করে, তার জীবনে কিছুই হয় না। তার জীবন কাটে বিষন্নতা আর অতৃপ্তিতে, শেষ হয় আফসোস আর হাহাকারে।
আর যা- ই করেন, এই ভুলটা করবেন না।
মোছাঃ সাথী খাতুন