1. admin@ichchashakti.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৫ অপরাহ্ন

সেদিন মন ভেজানো সন্ধ্যারাতে — হারুন অর রশিদ 

  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৪৭ বার পঠিত

সেদিন মন ভেজানো সন্ধ্যারাতে

হারুন অর রশিদ 

 

নীলিমায় নীল আর রক্তাভ আভার মিতালী। নারী যেমন অভিসারে নিজেকে হারায় তেমনি মায়াভরা বিকেল হারিয়ে যাচ্ছে সন্ধ্যার গহ্বরে। সন্ধ্যাপাটে এখন আলোর লুকোচুরি। পাখিরা যে যার মত বাড়ি ফিরছে। কর্মক্লান্ত মানুষগুলো গতি বাড়িয়ে হাঁটছে আপনালয়ের পথে। পাখিদের হৈ-হল্লা ভেদ করে আসছে রাতের আমন্ত্রণ। এ যেনো এক মায়াবি মুহূর্ত। রাতের আকাশে তখনো তারাদের হাট বসেনি। তারা’রা কেউ কেউ নিজেদের ঝাপি খুলে এই বসছে বসছে ভাব।

 

মুহূর্তগুলোর সাক্ষী হয়ে বুকে-পিঠে মিশে এগিয়ে চলছে অরুণাদয় আর অরু। ওরা নিভৃত পল্লীর বুক চিরে বেরিয়ে যাওয়া একটা হাইওয়ে রোড ধরে গন্তব্যের পথে এগিয়ে চলছে। পাখিরা যেমন দিনশেষে নীড়ে ফিরে ক্লান্ত ডানায়। তেমনি ওরাও ফিরছে। তবে, ওদের মন জুড়ে অবারিত আকাশ। ক্লান্তিকে ঝেড়ে ফেলে উদ্দাম উড়ছে যেনো এই মায়াবী সন্ধ্যায়। কিন্তু; হঠাৎ-ই ছন্দ পতন হলো। অরু কিছু বুঝে উঠার আগেই নির্জন রাস্তার একটি ব্রিজের রেলিং এর গা ঘেসে থেমে গেলো ওদের বাইকটি। অরু’র জিজ্ঞাসু চোখ চকচক করে উঠার আগেই অরুণাদয় অরু’কে বললো– প্লিজ, তুমি একটু রেলিং এর দিকে ঘুরে দাঁড়াও। আমি একটু সেরে নিই…

 

অরু খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। সেই হাসি দিগন্ত ছুঁয়ে স্পর্শ করলো আকাশের করিডোর, তারাদের ঘর আর প্রকৃতির মোহাচ্ছন্ন মন। অরুণাদয়ের কথামত অরু রেলিং এ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। সামনে বিস্তৃত ফসলের মাঠ। সন্ধ্যা রাতের এই ক্ষণেও শোভা ছড়াচ্ছে অপরূপ সৌন্দর্য্যের রোশনাই। অরু হারিয়ে যাচ্ছে এক মোহাচ্ছন্ন বিভোরতায়। হাইওয়ে রোডে মাঝে মাঝে দু’একটি মোটরযান অরু’র মুখে ঐশ্বরিক আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। আর তাতে যেনো অপরূপা অরু আরো অপরূপা হয়ে উঠছে।

 

অরুণাদয় পিছনে দাঁড়িয়ে দেখছিলো অরুকে। দেখছিলো অরু’র চুল, থুতনি এবং অরু’র অপরূপ সৌন্দর্যের বেলাভূমি। এমন রূপ ছুঁয়ে না দেখে থাকা যায় না কিছুতেই। অরুণাদয়ও পারলো না। অরুণাদয় নিজেকে সামলাতে না পেরে হঠাৎ পিছন থেকে অরুকে জড়িয়ে ধরলো। আহ! এ যেনো স্বর্গীয় আবেশ। চারিদিক তখন অরুময় নিস্তব্ধতা। জাগতিকতা যেনো বোধ শূন্য প্রেমানন্দুকতার বশে। অরু নিজেকে ছাড়ানোর কোন চেষ্টা করলো না। এ যেনো হাজার হাজার বছরের সুখানুভূতি। যে সুখের সীমা নেই, শেষ নেই। হঠাৎ-ই এক টুকরো আলো এসে পড়লো ওদের মুখে-চোখে। ওরা চোখ মেলতেই ওদের অতিক্রম করে চলে গেলো একটি বেরসিক মোটরযান।

 

আজ প্রকৃতি যেনো ওদের সুযোগ করে দিয়েছে আপন থেকে আপন হওয়ার। এমন মায়াময় নির্জন পরিবেশে ওদের দেহ-মন যেনো জোয়ারের পানির মত উছলাচ্ছে। তা বেশ বুঝা যাচ্ছে। মন নাচছে না বলা কথার সুরে সুরে।

অরু এখন রেলিং এ হেলান দিয়ে সেলফোনে মনোযোগী। কিন্তু অরুণাদয়ের মাথায় খেলা করছে দুষ্ট বুদ্ধি। হয়তো অরুণাদয় মনে মনে বলছিলো— আমাকে রেখে ফোনে মনোযোগী! দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। অরুকে কোন সুযোগ না দিয়ে দারুণ ক্ষীপ্রতায় অরুকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর ঠোঁটে ঠোঁট, বুকে বুক, শরীরে শরীর মিলে-মিশে একাকার। মনে হলো হাজার যুগের তৃষ্ণিত বুক শীতল হচ্ছে এক অমৃত শুধা পান করে। এমন আলিঙ্গন পৃথিবী আগে দেখেনি কখনো। এ যেনো যুগযুগান্তরের অমরতা, ইচ্ছের পালে হাওয়া বুনো উদ্দাম। কিছুতেই ছাড়তে চায় না অরুণাদয়। অরুও লক্ষী মেয়ে।

 

সব ভুলে বসেছে ওরা। ভুলে বসেছে একটি হাইওয়ে রোডের উপর ওরা দাঁড়িয়ে আছে। আরো একটি মোটরযান দুর থেকে আলো ছড়িয়ে এগিয়ে আসছে ওদের দিকে। বাধ্য হয়ে ওরা সংযত হলো। আলোটি চলে যেতেই ওরা আবারও একে অপরের মাঝে ডুব দিলো।  এমন সময় বারবার ফিরে আসে না। ওরা বুঝি সেটা অনুধাবন করতে পেরেছিলো। এমন পরিবেশ ধরায় সৃষ্টি হয় না বারবার। রেলিং এ জড়ানো অরু পিঠ, কোমর, নিতম্ব। অরুণাদয় যেনো অরু’র বুকে শুয়ে আছে উপর হয়ে।

 

সন্ধ্যারাতের সেই আশ্চর্যতম মুহূর্ত ভুলার নয় ওদের। সব কিছুরই একটা পরিসমাপ্তি ঘটে। ওরাও জানে সময়কে বেধে রাখা যাবে না। ফিরতে হবে আলাদা আলাদা গন্তব্যে। শুধু এক গভীরতম আবেশ ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাবে মনের ঘর। তারপর সুখানুভবের তীব্র আকর্ষণ কুঁড়েকুঁড়ে খাবে তৃষ্ণিত মন। না পাওয়ার বেদনায় পৃথিবীর আঁচলে ঝরবে শিউলি-বকুল।

 

সময় কারো জন্য থেমে থাকে না। ওদের জন্যেও নয়। রাস্তায় গাড়ি চলাচলের ভীড় বাড়ছে মোটরযানগুলো ওদের ফেলে চলে যাচ্ছে। ওরাও ফেলে যাবে এই পথ, এই পথের সন্ধ্যারাত। শুধু স্মৃতিপটে আঁকা থাকবে এই ছবি। মনের ফ্রেমে দোল খাবে অনন্তকাল। কখনো হয়তো স্মৃতি হাতরে একাকী এসে কেউ দাঁড়াবে এই নির্জনতায়। চোখের কোণ গড়িয়ে ঝরে পরবে ক’ফোটা অশ্রুকণা। হয়তো কোন তরুণ প্রেমিক আবার এসে দাঁড়াবে এই মায়াবী সন্ধ্যায়। দুরে হয়তো বাজবে___ “দিনগুলি মোর সোনার খাচায় রইলো না, রইলো না… সে যে আমার সোনা রঙের দিনগুলি..”

 

দু’একটি মোটরবাইক, অটোরিকশা ওদের অতিক্রম করার সময় যাত্রীরা ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে। দু’জন পাশাপাশি দাঁড়ানো। যাত্রীদের কৌতুহলী মন। অরুণাদয় বললো, এবার যেতে হবে। অরু’র মাথায় যেনো বজ্রপাত হলো। কথাটা শুনেই ঢেউ এর মত এসে আঁচড়ে পড়লো অরুণাদয়ের বুকে। আলিঙ্গন আবিষ্টতায় ডুবে রইলো ক্ষণ জন্মের ক্ষুদ্রতম মুহূর্তের এক অনুসময়ে।

 

দু’জনের ছলছল চোখ। মনেতে ভাঙ্গছে পাড় ছলাৎ ছলাৎ। অরুণাদয় নিজেকে সামলে অরুকে বললো, এই পাগলি, কি হয়েছে? ভাবিস কেনো? আমরা তো জনম জনমের সঙ্গী। এ জন্মে না হোক পরজন্মে আবার দাঁড়াবো এখানে এসে। এখন ছাড়, মুখতুল। নাহলে যে পৃথিবী স্থবির হয়ে যাবে। যে পথ ওরা ফেলে এসেছিলো, সে পথতে আবার চলতে শুরু করলো ওরা। নিবিড় আবেশে অরু জড়িয়ে আছে অরুণাদয়কে। ছুটে চলছে বাইক…

 

অরু, চলে এসেছি। তারপর, চারিদিকে এক অজানা স্থবিরতা ভেদ করে রাতের আঁধারে মিশে গেলো অরু।

অরুণাদয় তখনও দাঁড়িয়ে অরু’র পথে…।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park