একদিন রাতে এক চোর তার বউকে বলতেছে। আজকেই আমার শেষ চুরি। বেঁচে থাকতে আর কোন দিন চুরি করবো না। তার বউ জবাবে বলে, এমন কথা তো আরো ছয় সাত বার বলছেন। কই একদিনও তো কথা ঠিক রইলো না।
কি করমু বউ, তুই ক। রাত অন্ধকার হয়ে আসলেই শরীর চুটমুট করতে থাকে।ঘুম ধরে না হাত শুধু হুহু করতে থাকে।আজকেই শেষ আর চুরি করবো না।
চোরটা চুরি করার জন্য একটা গেরস্তের বাড়িতে ডুকে পড়ে। বাড়িতে ডুকেই দেখে ছোট একটা গোয়াল ঘর। গোয়াল ঘরের পিছনে, সিঁধ কেটে ভিতরে ডুকে । গেরস্তের তিনটে গরু ছিল। গেরস্তের একটা অভ্যাস ছিল মাঝে মাঝে গোয়াল ঘরে ডুকে গরু গুলো দেখে আসা। ঠিকঠাক আছে কিনা। চোরটা গোয়াল ঘরে ডুকতেই ঘুমে বিভোর হয়ে যায়। অল্প সময়ের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর মালিক তার গরু দেখার জন্য উঠে গোয়ালে ডুকে। ডুকেই দেখে চোর বাবাজি আরামে ঘুমাচ্ছে।গেরস্ত চুপচাপ বাতিটা নিভিয়ে কাছে গিয়ে মৃদু সুরে ডেকে জাগিয়ে তোলে।চোর বাবাজি উঠেই তো রেগে আগুন।
চোর- এই আপনের তো দেখি হোদ হাঙ্গালি নাই। দেখছেন যে একটা চোর ডুকছে। আপনি কোন আক্কেলে এনে ডুকলেন। সমিতির নিয়ম মানেন না নাকি?
গেরস্ত- মানি ভাই, কিন্তু কি করমু বলেন, সামনে ঈদ।
চোর- আচ্ছা, ডুকেই যেহেতু পড়ছেন কি আর করা। আপনি আমার জাতি ভাই। তাইলে ষাঁড় গরুটা আমি নিমু। আর বলদটা আপনি নিয়েন।
গেরস্ত-আচ্ছা ভাই, নিতাছি।
বলেই তো চুলের মুঠি ধরে মারতে শুরু করে। চিৎকার চেঁচামিচির আওয়াজ পেয়ে বউ উঠে এসে, সেও পিটাতে থাকে। দরজা আটকানো না থাকায় চোরটা মানুষ জড়ো হওয়ার আগেই কোন রকমে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
চোরের মার খেয়ে পিঠ ব্যথা আর দৌড়াতে দৌড়াতে পা ব্যথা । একটু আরাম আয়েসের জন্য। হাঁপাতে হাঁপাতে একটা গাছের নিচে গিয়ে বসে। একটু পরেই দেখতে পায় কিছু দূরে লাইটের লাল আলো দেখা যাচ্ছে। চোরের তো ভয়ে কামসারা। ভয় পেয়ে চোরটি গাছের মগডালে উঠে বসে থাকে। আলো আসতে আসতে কাছে চলে আসে।
মুখ ডাকা দুটো লোক। হাতে বড় বড় দা। সাথে কালো রঙ্গের একটা ব্যাগও আছে। গাছের নিচেই দুজন বসে পড়ে। পিছন থেকে ব্যাগটা বের করে খুলতেই চোরের চোখ কপালে উঠে গেল। ব্যাগ ভর্তি টাকা আর টাকা।
চোরটা মনে মনে ভাবতে থাকে। এমনিতেও জীবন শেষ ওমনিতেও জীবন শেষ। হয়তো মরবো না হয় বাঁচবো। ব্যাগটা আমাকে নিতেই হবে।
উপর থেকে চোরটা তোরে খামু বলেই জোরে চিৎকার করে উঠে। চিৎকার শুনেই তো ডাকাত দুটোর অবস্থা কাহিল। ব্যাগ ট্যাগ রেখেই দৌড়। চোরটা আস্তে আস্তে নিচে নেমে ব্যাগটা নিয়ে বাড়িতে চলে যায়।
বাড়িতে গিয়ে বউয়ের হাতে ব্যাগটা ধরিয়ে খুলে দেখতে বলে। বউ ব্যাগটা খুলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। মুখে পানি ছুঁড়ে হুশ ফেরায়। চোখ খুলেই বলতে লাগল। এত টাকা কোথায় পেলে। চোরটা তখন সমস্ত ঘটনা খুলে বলে।
টাকা পয়সা দিয়ে অনেক দিন কেটে গেল। বেশ সুখেই দিন কাটাচ্ছিল চোর আর তার বউ। কোন অভাব রইলো না তাদের। রাজার হালে দিন কাটাতে লাগল।
এক রাতে ঘন অন্ধকার নেমে আসলো। চোরটা এদিক সেদিক করতে লাগল। কিছুতেই ঘুম আসতেছে না তার। নাহ্ বিছানা ছেড়ে উঠেই পড়লো। বউ হাবভাব দেখে বলল- এরকম করতেছেন কেন। কোন সমস্যা হইছে আপনার।
চোর-না এমনি, কিছু ভালো লাগতেছে না।
বউ- শুয়ে পড়েন মাথা টিপে দিতেছি ভালো লাগবে।
চোর- না লাগবো না, তুই ঘুমা।
বউ উঠে কাছে আসে। গায়ে হাত দিয়ে দেখে। না জ্বরও তো আসেনি।
বউ-কি হইছে খুইল্যা কন তো দেখি।
চোর-কি হইছে তোরে কইলে কি আর তুই বুঝবি। দেখস না। আজকে অনেক অন্ধকার পড়ছে। শরীরটা চুটমুট করতাছে। হাত কচরমচর করতাছে চুরি করার জন্যে।
কথা শুনেই তো বউ চোখ বড় বড় করে ফেলে। তুমি না ভাল হয়ে গেছো। অনেক দিন হয়ে গেছে চুরি কর না।
চোর- আরে রাখ তোর ভালো টালো। ভালো লাগতেছে না আমার। আজকেই শেষ চুরি আর করমু না। যা তেল নিয়া আয়।
বউ-আমি পারবো না। তুমি নিয়ে নেও। বার বার বলতেছি যাইও না। বিপদ হতে পারে। অনেকদিন যাবত চুরি করো না।।
চোর রেগে গিয়ে সবকিছু নিজেই করে বেরিয়ে পড়ে চুরির উদ্দেশ্যে।
অনেক জায়গায় ঘুরাঘুরির পর কিছুই চুরি করতে না পেরে। আগের মতো সেই গাছটার নিচে গিয়ে বিশ্রাম নিতে থাকে। হঠাৎ করেই কিছু দূরে দুইটা আলো দেখা যায়। চোরটার আগের ডাকাতদের কথা মনে পড়ে যায়। সেই দিনের মতো গাছে চড়ে বসে থাকে।আস্তে আস্তে আলো দুইটা গাছের নিচে এসে যায়। রাত এতটাই অন্ধকার ছিল যে, নিচে আলো দুটো ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না। চোরটা ভাবলো ডাকাতগুলো হয়তো আজকেও কালো বোরকা পড়ে আছে। সেজন্য মনে হয় দেখা যাচ্ছে না। আলো দুটো গাছের নিচে স্থির হতেই উপর থেকে শব্দ করে উঠল। শব্দ শুনেই আলো দুটো উপরে উঠে গেল।
মাথা নেই,বুকে চোখ। চোখ দুটো আগুনের মতো ঝলঝল করতেছে।দেখতে এতোটাই বিশ্রী যে বলার মতো না। ভূতটাকে দেখেই চোরটা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
পরের দিন সকালে চোরটাকে হাত পা ভাঙা অবস্থায় পুসকুনির পাড়ে পাওয়া যায়। তিন দিন হাসপাতালে থাকার পর জ্ঞান ফিরে আসে।
এক বছর পার হয়ে গেছে। এখন কোন মতে হাত পা নড়াচড়া করতে পারে।
চোর
আল-আমিন সাজ্জাদ