সংবাদপত্র কিংবা সমধর্মী কোন গণমাধ্যমে যারা কাজ করেন তারা কি প্রত্যেকেই সাংবাদিক ?
বাস্তবে সাংবাদিকতা পেশার সকল পেশাজীবীই হয়ে উঠতে পারেন না প্রকৃত সাংবাদিক। তাই ভুক্তভোগী ক্ষতিগ্রস্তরা কোন কোন সাংবাদিককে ক্ষাণিকটা অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখে থাকেন। সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। সংবাদপত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চতুর্থ স্তম্ভ। রাষ্ট্রের কোন স্তম্ভই পরস্পরের প্রতিপক্ষ নয়, বরং পরিপূরক। সাংবাদিকতা অবশ্যই একটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। তবে এটি অনেক ক্ষেত্রে নিজের জন্য নয়, ব্যক্তিবিশেষ কিংবা কোন শ্রেণী বা প্রতিষ্ঠানের জন্য ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে। সে কারণেই এখন বহুল উচ্চারিত দুটি টার্ম হচ্ছে- হলুদ সাংবাদিকতা ও অপসাংবাদিকতা। এ দুটো আসলে একই। সাংবাদিক যদি ‘ভাড়াটে’ লোকের মতো তার পেশাকে ব্যবহার করেন তাহলে তা সমাজ তথা দেশের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। বলা সমীচীন সংবাদপত্রকে প্রতিটি সূর্যোদয়েই পাঠক তথা দেশের নাগরিকদের সমীপে উপস্থিত হতে হয়; প্রতিদিনই তাকে সত্যবাদিতা ও ন্যায়নিষ্ঠার পরীক্ষা দিতে হয়।
সংবাদপত্র সতত তাই জবাবদিহিতার মুখোমুখি। তার সম্পাদকীয় নীতি স্বচ্ছ, ইতিবাচক, গণমুখী ও দায়িত্বশীল হবে- এটাই প্রত্যাশিত। একই সঙ্গে সংবাদপত্র মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে দৃঢ়তার সঙ্গে ধারণ এবং লালন করবে। গণমানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন এবং তথ্যসেবার মাধ্যমে সংবাদপত্র সত্যিকারার্থেই জনতার কণ্ঠ হয়ে উঠবে- সেটাই মানুষের চাওয়া। সংবাদ চেপে যাওয়া বা প্রকাশ না করা, কিংবা সংবাদে রং চড়ানো বা বর্ণ হরণের কোনটাই কাম্য নয়। মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকরা সত্যের যে বিবরণ তুলে আনেন, সংবাদপত্রের কার্যালয়ে দায়িত্বরত সম্পাদক তা যথাযথভাবে সম্পাদনার মাধ্যমে পরিবেশন করেন- উভয়ের কাজে অঙ্গীকারবোধ ও সুসমন্বয় অনুপস্থিত থাকলে সেটি পাঠক তথা দেশের মানুষের কাছে সঠিক বার্তাটি পৌঁছাতে পারে না। সংবাদ বিশ্লেষণ ও সংবাদ বিষয়ে মত প্রকাশ সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সংবাদ সংগ্রহ ও সম্পাদনা- দুটোই গভীর মনোযোগ এবং সংবেদনশীলতা দাবি করে। সম্প্রতি সাতক্ষীরায় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে দেয়া উষ্ণ সংবর্ধনার প্রতিক্রিয়ায় দেশের বরেণ্য সাংবাদিক তোয়াব খান দিকনির্দেশনামূলক দীর্ঘ এই বক্তব্য প্রদান করেন। তার বক্তব্যে সাংবাদিকের দায়িত্ব, কর্তব্য, মর্যাদাবোধ, কাজের পরিধি, সীমানা এমনকি এই গুরুত্বপূর্ণ পেশার ঝুঁকি, সামাজিক বাস্তবতা প্রভৃতি দিক উঠে আসে।
সাংবাদিকদের কাজের মাধ্যম এখন শুধু সংবাদপত্রেই সীমাবদ্ধ নেই, বর্তমানে তা টেলিভিশন ও অনলাইনে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ সজাগ ও সচেতন এই প্রবীণ সাংবাদিকের আন্তরিক কথনে আরও একবার স্পষ্ট হয়ে উঠল যে- সত্য, সেবা ও সাংবাদিকতা- এই তিন একসূত্রে গাঁথা। সাংবাদিকের দায়িত্ব হচ্ছে সত্য উদ্ঘাটন ও সত্যের বিকাশ ঘটানো। একজন সাংবাদিককে আত্মসচেতনতার মাধ্যমে পেশার দায়িত্ব ও নির্দেশনা মেনে চলা আবশ্যক। তবেই দেশ ও দেশের মানুষের সেবা নিশ্চিত হবে। বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে সময়ের সাহসী সন্তান সাংবাদিকরা তাদের ওপর অর্পিত গুরুদায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশ ও মানুষের সেবা অব্যাহত রাখবেন। বাতিঘরতুল্য বরেণ্য এই সাংবাদিকের বক্তব্য দেশের সাংবাদিক সমাজকে অনুপ্রাণিত ও কর্তব্যনিষ্ঠ করে তুলবে- এটাই প্রত্যাশা।
সাংবাদিক হিসেবে কাজের জন্য আপনাকে কিছু দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে:
১। ভাষা দক্ষতা:আপনি যে ভাষায় সাংবাদিকতা করতে চান, সেই ভাষায় আপনাকে ভালো দক্ষতা অর্জন করতে হবে। লিখিত এবং মৌখিক উভয় ক্ষেত্রেই আপনার দক্ষতা থাকতে হবে।
২। তথ্য সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াকরণ দক্ষতা:আপনাকে তথ্য সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াকরণে দক্ষ হতে হবে। আপনাকে ঘটনাস্থল থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং তা একটি আকর্ষণীয় এবং তথ্যপূর্ণ উপায়ে উপস্থাপন করতে হবে।
৩। সাংবাদিকতা নীতি ও নৈতিকতা সম্পর্কে জ্ঞান:একজন সাংবাদিককে অবশ্যই সাংবাদিকতা নীতি ও নৈতিকতা সম্পর্কে জানতে হবে। আপনাকে অবশ্যই সত্যতা, নিরপেক্ষতা এবং পক্ষপাতহীনতার মতো নীতিগুলি মেনে চলতে হবে।
—মোছাঃ সাথী খাতুন