1. admin@ichchashakti.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৩ অপরাহ্ন

জাহান্নামের বিবিধ আযাব ও বাঁচার জন্য জাহান্নামিদের আর্তচিৎকার

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১০ বার পঠিত

জাহান্নামের বিবিধ আযাব ও বাঁচার জন্য জাহান্নামিদের আর্তচিৎকার, পর্ব – ১

এস এম জাকারিয়া, মীরসরাই, চট্টগ্রাম। 

 

ক) জাহান্নামের কতিপয় বিচিত্র ও কঠিনতর শাস্তি –

 

☞☞ শারীরিক শাস্তি –

১| আল্লাহ তায়া’লা যাকাত যারা দেয়না তাদের শাস্তি সম্পর্কে সূরা তাওবার ৩৫ নং আয়াতে বলেছেন –

” يَوْمَ يُحْمَىٰ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَىٰ بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ ۖ هَٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنتُمْ تَكْنِزُونَ “.

অর্থাৎ : ” যেদিন জাহান্নামের আগুনে ঐগুলোকে উত্তপ্ত করা হবে। অতঃপর তা দিয়ে তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশ দাগা হবে, (আর বলা হবে,) এ হচ্ছে তাই যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চয় করে রেখেছিলে। সুতরাং এখন নিজেদের সঞ্চিত জিনিসের স্বাদ গ্রহণ কর।” (১)

এতদ সংক্রান্ত বিষয়ে হাদীসে এসেছে –

” عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَنْ آتَاهُ اللهُ مَالًا فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ شُجَاعًا أَقْرَعَ لَهُ زَبِيبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ يَعَني بِشِدْقَيْهِ يَقُولُ أَنَا مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ “.

অর্থাৎ : আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সঃ বলেন, ” যে ব্যক্তিকে আল্লাহ ধন-মাল দান করেছেন; কিন্তু সে ব্যক্তি তার সেই ধন-মালের যাকাত আদায় করে না, কিয়ামতের দিন (আযাবের) জন্য তার সমস্ত ধন-মালকে একটি মাথায় টাক পড়া (অতি বিষাক্ত) সাপের আকৃতি দান করা হবে; যার চোখের উপর দু’টি কালো দাগ থাকবে। সেই সাপকে বেড়ির মত তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। অতঃপর সে তার উভয় কশে ধারণ (দংশন) করে বলবে, আমি তোমার মাল, আমি তোমার সেই সঞ্চিত ধনভাণ্ডার “। (সহীহ বুখারী ও সুনানে নাসাঈ)

২| ঐ একই বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ তায়া’লা সূরা আলে ইমরান এর ১৮০ নং আয়াতে বলেছেন –

” وَ لَا یَحۡسَبَنَّ الَّذِیۡنَ یَبۡخَلُوۡنَ بِمَاۤ اٰتٰهُمُ اللّٰهُ مِنۡ فَضۡلِهٖ هُوَ خَیۡرًا لَّهُمۡ ؕ بَلۡ هُوَ شَرٌّ لَّهُمۡ ؕ سَیُطَوَّقُوۡنَ مَا بَخِلُوۡا بِهٖ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ وَ لِلّٰهِ مِیۡرَاثُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ “.

অর্থাৎ : ” এবং তারা যেন কিছুতেই মনে না করে যে, আল্লাহ তাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন, তাতে কৃপণতা করলে, তাতে তাদের মঙ্গল আছে। বরং এ (কৃপণতা) তাদের জন্য অমঙ্গল। তারা যে ধনে কৃপণতা করে, কিয়ামতের দিন ঐটিই তাদের গলার বেড়ি হবে। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর চরম স্বত্বাধিকার কেবল আল্লাহরই। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্বন্ধে বিশেষভাবে অবহিত “।

৩| নবী (ﷺ) বলেন, ” আমি মিরাজের রাতে এমন একদল লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছি যারা আগুনের কাঁচি দ্বারা নিজেদের ঠোট কাটছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে জিবরাঈল! ওরা কারা? তিনি বললেন, ‘ওরা আপনার উম্মতের ঐ বক্তাদল; যারা নিজেরা যা করত না তা (অপরকে করতে) বলে (ওয়াজ) বেড়াত।” (আহমদ , ইবনে হিব্বান, সহীহ তারগীব)

অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূল সঃ এরশাদ করেছেন –  ” কিছু সংখ্যক জান্নাতবাসী অপর কিছুসংখ্যক জাহান্নামবাসীদেরকে অগ্নিদগ্ধ হতে দেখে জিজ্ঞেস করবেন যে, তোমরা কিভাবে জাহান্নামে প্রবেশ করলে, অথচ আল্লাহর কসম, আমরা তো সেসব সৎকাজের দৌলতেই জান্নাত লাভ করেছি, যা তোমাদেরই কাছে শিখেছিলাম? জাহান্নামবাসীরা বলবে, আমরা মুখে অবশ্য বলতাম কিন্তু নিজে তা কাজে পরিণত করতাম না “। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)

৪| রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, ” মিরাজের রাত্রে যখন আমাকে আকাশ ভ্রমণে নিয়ে যাওয়া হল, তখন এমন একদল লোকের পাশ বেয়ে আমি অতিক্রম করলাম যাদের ছিল তামার নখ; যার দ্বারা তারা তাদের মুখমণ্ডল ও বক্ষস্থল চিরে ফেলছিল। আমি বললাম, ‘ওরা কারা হে জিবরাঈল!’ জিবরাঈল (আঃ) বললেন, ‘ওরা হল সেই লোক; যারা লোকেদের মাংস খায় (গীবত করে) এবং তাদের ইজ্জত লুটে বেড়ায় “।(সুদানে আহমদ ও আবু দাউদ)

 

➤➤ ব্যাখ্যা :

১) আয়াতে জমাকৃত স্বর্ণ ও রৌপ্যকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশ দগ্ধ করার যে কঠোর সাজার উল্লেখ রয়েছে, তা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তার এ সাজা তারই অর্জন করা। অর্থাৎ যে অর্থ সম্পদ অবৈধ পন্থায় জমা করা হয়, কিংবা বৈধ পন্থায় জমা করলেও তার যাকাত আদায় করা না হয়, সে সম্পদই তার জন্য আযাবের কারণ হয়।

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সঃ বলেছেন – ” যারা সম্পদ পুঞ্জীভূত করে রাখে তাদেরকে সেই জাহান্নামের উত্তপ্ত পাথরের ছেকার সুসংবাদ দিন, যা জাহান্নামের আগুনের দ্বারা দেয়া হবে। যা তাদের কারও স্তনের বোটার মধ্যে রাখা হবে, আর তা বের হবে দু কাঁধের উপরিভাগে। আর দু কাঁধের উপরিভাগে রাখা হবে যা স্তনের বেঁটার মধ্য দিয়ে বের হবে “। ( সহীহ মুসলিম)

অন্য হাদীসে এসেছে, ” যে কোন সোনার মালিক বা রুপার মালিক যাকাত প্রদান করবে না, কিয়ামতের দিন সেগুলো তার জন্য আগুনের পাত হিসেবে বানিয়ে নেয়া হবে, তারপর সেগুলোকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, তারপর তা দিয়ে তার কপাল, পাঁজর ও পিঠে ছেকা দেয়া হবে। যখনই সেগুলো ঠাণ্ডা হবে, আবার তা উত্তপ্ত করা হবে, এমন দিনে যার পরিমান হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। যতক্ষণ না বান্দাদের মধ্যে বিচার ফয়সালা করা শেষ হবে। তারপর তার স্থান জান্নাত কিংবা জাহান্নামে সেটা দেখানো হবে “। ( সহীহ মুসলিম)

কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ এ আয়াতে যে ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশ দগ্ধ করার কথা এজন্যে বলা হয়েছে যে, ” যে কৃপন ব্যক্তি আল্লাহর রাহে খরচ করতে চায় না, তার কাছে যখন কোন ভিক্ষুক কিছু চায়; কিংবা যাকাত তলব করে, তখন সে প্রথমে ভ্রুকুঞ্চন করে, তারপর পাশ কাটিয়ে তাকে এড়িয়ে যেতে চায়। এতেও সে ক্ষান্ত না হলে তাকে পৃষ্ঠ দেখিয়ে চলে যায়। এজন্যে বিশেষ করে এ তিন অঙ্গে আযাব দানের উল্লেখ করা হয়েছে “। ( তাফসিরে কুরতুবী)

 

☞☞ খাবার ও পানীয়ের শাস্তি –

➤➤ জাহান্নামের খাদ্য –

জাহান্নামীদেরকে খেতে না দিয়েও আল্লাহ তায়া’লা শাস্তি দিতে পারতেন। তবুও তাদের শাস্তির প্রকোপ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তাদের খাদ্য দিবেন কয়েক প্রকারে। যেমন :

 

যন্ত্রণাদায়ক যাক্কুম বৃক্ষঃ এ বৃক্ষ ও তার পরিচিতি সম্বন্ধে মহান আল্লাহ বলেন –

” أَذَٰلِكَ خَيْرٌ نُّزُلًا أَمْ شَجَرَةُ الزَّقُّومِ. إِنَّا جَعَلْنَاهَا فِتْنَةً لِّلظَّالِمِينَ. إِنَّهَا شَجَرَةٌ تَخْرُجُ فِي أَصْلِ الْجَحِيمِ. طَلْعُهَا كَأَنَّهُ رُءُوسُ الشَّيَاطِينِ. فَإِنَّهُمْ لَآكِلُونَ مِنْهَا فَمَالِئُونَ مِنْهَا الْبُطُونَ.  ثُمَّ إِنَّ لَهُمْ عَلَيْهَا لَشَوْبًا مِّنْ حَمِيمٍ. ثُمَّ إِنَّ مَرْجِعَهُمْ لَإِلَى الْجَحِيمِ “.

 

অর্থাৎ : ” আপ্যায়নের জন্য কি এটিই উত্তম, না যাক্কুম বৃক্ষ? সীমালংঘনকারীদের জন্য আমি এ সৃষ্টি করেছি পরীক্ষাস্বরূপ; এ বৃক্ষ জাহান্নামের তলদেশ হতে উদগত হয়, এর মোচা শয়তানের মাথার মত। সীমালংঘনকারীরা তা ভক্ষণ করবে এবং তা দিয়ে উদর পূর্ণ করবে। তার উপর অবশ্যই ওদের জন্য ফুটন্ত পানির মিশ্রণ থাকবে, অতঃপর অবশ্যই ওদের প্রত্যাবর্তন হবে জাহান্নামের দিকে “। (সূরা আস্ সাফ্ফাতে : ৬২-৬৮)

 

” إِنَّ شَجَرَتَ الزَّقُّومِ. طَعَامُ الْأَثِيمِ. كَالْمُهْلِ يَغْلِي فِي الْبُطُونِ. كَغَلْيِ الْحَمِيمِ. خُذُوهُ فَاعْتِلُوهُ إِلَىٰ سَوَاءِ الْجَحِيمِ. ثُمَّ صُبُّوا فَوْقَ رَأْسِهِ مِنْ عَذَابِ الْحَمِيمِ. ذُقْ إِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْكَرِيمُ. إِنَّ هَٰذَا مَا كُنتُم بِهِ تَمْتَرُونَ “.

 

অর্থাৎ : ” নিশ্চয়ই যাক্কুম গাছ হবে পাপিষ্ঠের খাদ্য, গলিত তামার মত তা পেটের ভিতর ফুটতে থাকবে, গরম পানি ফুটার মত। (আমি বলব,) ওকে ধর এবং টেনে নিয়ে যাও জাহান্নামের মধ্যস্থলে। অতঃপর ওর মাথায় ফুটন্ত পানি ঢেলে দিয়ে শাস্তি দাও (এবং বল,) আস্বাদ গ্রহণ কর, তুমি তো ছিলে সম্মানিত, সম্ভ্রান্ত। এটা তো সেই (শাস্তি) যার সম্পর্কে তোমরা সন্দেহ করতে “। (দুখান : ৪৩-৫০)

 

” ثُمَّ إِنَّكُمْ أَيُّهَا الضَّالُّونَ الْمُكَذِّبُونَ. لَآكِلُونَ مِن شَجَرٍ مِّن زَقُّومٍ.  فَمَالِئُونَ مِنْهَا الْبُطُونَ. فَشَارِبُونَ عَلَيْهِ مِنَ الْحَمِيمِ. فَشَارِبُونَ شُرْبَ الْهِيمِ. هَٰذَا نُزُلُهُمْ يَوْمَ الدِّينِ “.

 

অর্থাৎ : ” অতঃপর হে বিভ্রান্ত মিথ্যাজ্ঞানকারীরা! তোমরা অবশ্যই আহার করবে যাকুম বৃক্ষ হতে এবং ওটা দ্বারা তোমরা উদর পূর্ণ করবে। তারপর তোমরা পান করবে ফুটন্ত পানি পান করবে পিপাসার্ত উটের ন্যায়। কিয়ামতের দিন এটাই হবে তাদের আতিথ্য “। (ওয়াক্বিআ’হ : ৫১-৫৬)

 

” وَمَا جَعَلْنَا الرُّؤْيَا الَّتِي أَرَيْنَاكَ إِلَّا فِتْنَةً لِّلنَّاسِ وَالشَّجَرَةَ الْمَلْعُونَةَ فِي الْقُرْآنِ ۚ وَنُخَوِّفُهُمْ فَمَا يَزِيدُهُمْ إِلَّا طُغْيَانًا كَبِيرًا “.

 

অর্থাৎ : ” আমি যে দৃশ্য তোমাকে দেখিয়েছি তা এবং কুরআনে উল্লিখিত অভিশপ্ত বৃক্ষ শুধু মানুষের পরীক্ষার জন্যই। আমি তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করি, কিন্তু এটা তাদের তীব্র অবাধ্যতাই বৃদ্ধি করে “। (বনী-ইসরাঈল : ৬০)

 

সাহাবা ও তাবেঈনগণ এই দৃশ্যের ব্যাখ্যা করেছেন, চাক্ষুষ দর্শন। এ থেকে মিরাজের ঘটনাকে বুঝানো হয়েছে। এ ঘটনা অনেক দুর্বল ঈমানের লোকদের জন্য ফিতনার কারণ হয়েছে এবং তারা মুর্তাদ্দ হয়ে গেছে। আর ‘বৃক্ষ’ বলতে যাক্কুম গাছ, যা মিরাজের রাতে রসূল (ﷺ) জাহান্নামে দেখেছেন। (مَلْعُونَةَ) (অভিশপ্ত) বলতে, ভক্ষণকারী। অর্থাৎ, সেই গাছ যা অভিশপ্ত জাহান্নামীরা ভক্ষণ করবে।

যাক্কুম শব্দটি আরবী تزقم থেকে উৎপত্তি যার অর্থ ও দুর্গন্ধময় ও ঘৃণিত বস্তু গিলে খাওয়া। যাক্কুম’ বৃক্ষের ফল খাওয়াও জাহান্নামীদের জন্য বড় কঠিন হবে। কারণ তা বড় দুর্গন্ধময়, তেতো এবং অতি ঘৃণ্য হবে। অনেকে বলেন যে, এটা পৃথিবীর একটি গাছ এবং তা আরবে পরিচিত। কুত্বরব বলেন, এটি এক প্রকার তেঁতো গাছ, যা তিহামা নামক এলাকায় পাওয়া যায়। আর অনেকে বলেন যে, এটা পৃথিবীর কোন গাছ নয়, পৃথিবীর মানুষের নিকট তা অপরিচিত। (ফাতহুল কাদীর) আরবী-উর্দু অভিধানে ‘যাক্কুম’-এর অর্থ গুহার (কাটাদার বিষাক্ত গাছ) করা হয়েছে। (আহসানুল বায়ান)

মহানবী (ﷺ) বলেন, “ঐ যাক্কুমের সামান্য পরিমাণ যদি জাহান্নাম হতে পৃথিবীতে আসে তবে পৃথিবীর খাদ্য ও পানীয় তার বিষাক্ততায় বিনষ্ট হয়ে যাবে।” (তিরমিযীঃ ২৫৮৫)

 

যারীঃ

এক প্রকার কন্টকময় বিষাক্ত গুল্ম। যা জাহান্নামীরা ভক্ষণ করবে। মহান আল্লাহ বলেন,

 

” لَّيْسَ لَهُمْ طَعَامٌ إِلَّا مِن ضَرِيعٍ. لَّا يُسْمِنُ وَلَا يُغْنِي مِن جُوعٍ “.

 

অর্থাৎ : ” তাদের জন্য বিষাক্ত কন্টক ব্যতীত খাদ্য নেই। যা পুষ্ট করে না এবং ক্ষুধা নিবারণ করে না “। (গাশিয়াহ : ৬-৭)

 

গলায় আটকে যায় এমন খাদ্যঃ

মহান আল্লাহ বলেন,

 

” إِنَّ لَدَيْنَا أَنكَالًا وَجَحِيمًا. وَطَعَامًا ذَا غُصَّةٍ وَعَذَابًا أَلِيمًا “.

 

অর্থাৎ : ” নিশ্চয় আমার নিকট আছে শৃংখল, প্রজ্বলিত অগ্নি। আর আছে এমন খাদ্য, যা গলায় আটকে যায় এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি “। (মুযযাম্মিল : ১২-১৩)

 

গিসলীনঃ

জাহান্নামীদের ক্ষতনিঃসৃত স্রাব। মহান আল্লাহ বলেন-

 

” فَلَيْسَ لَهُ الْيَوْمَ هَاهُنَا حَمِيمٌ. وَلَا طَعَامٌ إِلَّا مِنْ غِسْلِينٍ. لَّا يَأْكُلُهُ إِلَّا الْخَاطِئُونَ “.

 

অর্থাৎ : ” অতএব এই দিন সেখানে তার কোন সুহৃদ থাকবে না এবং কোন খাদ্য থাকবে না ক্ষতনিঃসৃত পুঁজ ব্যতীত; যা অপরাধীরা ব্যতীত কেউ খাবে “। (হা-ক্বাহ্ : ৩৫-৩৭)

 

আগুনের অঙ্গারঃ

যারা আল্লাহর কালাম বেচে খায়, তারা জাহান্নামের আঙ্গার খাবে। মহান আল্লাহ বলেন

 

” إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلَ اللَّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۙ أُولَٰئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ “.

 

অর্থাৎ : ” আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যারা তা গোপন করে ও তার বিনিময়ে স্বল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা কেবল আগুন দিয়ে আপন পেট পূর্ণ করে। শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে (পাপ-পঙ্কিলতা থেকে) পবিত্রও করবেন না; আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি “। (বাক্বারাহ : ১৭৪)

 

যারা এতীমের মাল খায়, তারা জাহান্নামের আঙ্গার খাবে। মহান আল্লাহ বলেন,

 

” إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَىٰ ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا ۖ وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا “.

অর্থাৎ : ”  নিশ্চয় যারা পিতৃহীনদের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে, তারা আসলে নিজেদের উদরে অগ্নি ভক্ষণ করে। আর অচিরেই তারা জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে “। (নিসা : ১০)

আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন যে, ” যে ব্যক্তি অভাব না থাকা সত্ত্বেও যাচনা করে (খেল), সে ব্যক্তি যেন জাহান্নামের অঙ্গার খেলে “। (তাবারানীর কাবীর, ইবনে খুযাইমা, বাইহাকী)

রাসূল সাঃ আরো বলেন, ” যে ব্যক্তি চাঁদির পাত্রে পান করে, আসলে সে ব্যক্তি নিজ উদরে জাহান্নামের আগুন ঢক্‌ঢক্‌ করে পান করে “। (বুখারী ও মুসলিম)

নবী (ﷺ) বলেন, ” যে ব্যক্তি মাদকদ্রব্য সেবন করবে তার জন্য আল্লাহরপ্রতিশ্রুতি আছে যে, তাকে তিনি জাহান্নামীদের ঘাম অথবা পুঁজ পান করাবেন “।(মুসলিম ও নাসাঈ)

 

➤➤ জাহান্নামের পানীয় –

পিপাসায় পানি না দিয়ে জাহান্নামীদেরকে শাস্তি দেওয়া হবে। আর অধিক আযাব দেওয়ার জন্য তাদেরকে কয়েক প্রকার পানি পান করতে দেওয়া হবেঃ

 

হামীমঃ

অত্যুষ্ণ ফুটন্ত পানি। মহান আল্লাহ বলেন,

 

” فَشَارِبُونَ عَلَيْهِ مِنَ الْحَمِيمِ. فَشَارِبُونَ شُرْبَ الْهِيمِ “.

 

অর্থাৎ : ” তারপর তোমরা পান করবে ফুটন্ত পানি। পান করবে পিপাসার্ত উটের ন্যায় “। (ওয়াক্বিআহ্ : ৫৪-৫৫)

 

যা পান করলে জাহান্নামীদের নাড়িভুড়ি ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,

 

” وَسُقُوا مَاءً حَمِيمًا فَقَطَّعَ أَمْعَاءَهُمْ “.

 

অর্থাৎ : ” (পরহেযগাররা কি তাদের মতো,) যাদেরকে পান করতে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি; যা তাদের নাড়ীভুড়ি ছিন্ন-ভিন্ন করে দেবে “? (মুহম্মদ : ১৫)

 

গাস্‌সাকঃ

অতিশয় দুর্গন্ধময় তিক্ত অথবা নিরতিশয় শীতল পানীয়। মহান আল্লাহ বলেন –

” هَٰذَا ۚ وَإِنَّ لِلطَّاغِينَ لَشَرَّ مَآبٍ (55) جَهَنَّمَ يَصْلَوْنَهَا فَبِئْسَ الْمِهَادُ. هَٰذَا فَلْيَذُوقُوهُ حَمِيمٌ وَغَسَّاقٌ “.

 

অর্থাৎ : ” এ হল (সাবধানীদের জন্য) আর সীমালংঘনকারীদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট পরিণাম; জাহান্নাম, সেখানে ওরা প্রবেশ করবে, সুতরাং কত নিকৃষ্ট সে শয়নাগার। এ হল ফুটন্ত পানি ও (গাস্‌সাক) পুঁজ। সুতরাং ওরা তা আস্বাদন করুক “। (স্বাদ : ৫৫-৫৭)

 

” إِنَّ جَهَنَّمَ كَانَتْ مِرْصَادًا. لِّلطَّاغِينَ مَآبًا. لَّابِثِينَ فِيهَا أَحْقَابًا. لَّا يَذُوقُونَ فِيهَا بَرْدًا وَلَا شَرَابًا. إِلَّا حَمِيمًا وَغَسَّاقًا. جَزَاءً وِفَاقًا “.

অর্থাৎ : ” নিশ্চয়ই জাহান্নাম ওঁৎ পেতে রয়েছে—সীমালংঘনকারীদের প্রত্যাবর্তনস্থল রূপে। সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে। সেখানে তারা কোন ঠান্ডা (বস্তুর) স্বাদ গ্রহণ করতে পাবে না, আর কোন পানীয়ও (পাবে না); ফুটন্ত পানি ও (প্রবাহিত) পুঁজ ব্যতীত। এটাই (তাদের) উপযুক্ত প্রতিফল “। (নাবা : ২১-২৬)

 

স্বাদীদঃ

জাহান্নামীদের পচনশীল ক্ষত-নির্গত পুঁজ-রক্ত বা ঘাম; যা তাদেরকে পান করতে দেওয়া হবে। তা গলধঃকরণ করা প্রায় অসম্ভব হলেও তারা চরম কষ্ট স্বীকার করে তা গলধঃকরণ করবে। এমনকি সব দিক থেকে তাদের নিকট মৃত্যুযন্ত্রণা আসবে, কিন্তু তাদের মৃত্যু হবে না।এভাবে তারা কঠোর শাস্তি ভোগ করতেই থাকবে। মহান আল্লাহ বলেন –

” وَاسْتَفْتَحُوا وَخَابَ كُلُّ جَبَّارٍ عَنِيدٍ. مِّن وَرَائِهِ جَهَنَّمُ وَيُسْقَىٰ مِن مَّاءٍ صَدِيدٍ. يَتَجَرَّعُهُ وَلَا يَكَادُ يُسِيغُهُ وَيَأْتِيهِ الْمَوْتُ مِن كُلِّ مَكَانٍ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍ ۖ وَمِن وَرَائِهِ عَذَابٌ غَلِيظٌ “.

অর্থাৎ : ” প্রত্যেক উদ্ধত হঠকারী ব্যর্থকাম হল। তাদের প্রত্যেকের সম্মুখে রয়েছে জাহান্নাম এবং প্রত্যেককে পান করানো হবে পূজমিশ্রিত পানি। যা সে অতি কষ্টে এক ঢোক এক ঢোক করে গিলতে থাকবে এবং তা গিলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে; সর্বদিক হতে তার নিকট আসবে মৃত্যু-যন্ত্রণা, কিন্তু তার মৃত্যু ঘটবে না এবং তার পরে থাকবে কঠোর শাস্তি “। (ইব্রাহীম : ১৫-১৭)

 

গলিত ধাতু অথবা তৈলকিট্টের ন্যায় কৃষ্ণবর্ণ, গাঢ় ও দুর্গন্ধময় পানীয়ঃ

 

মহান আল্লাহ বলেন-

” إِنَّا أَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا ۚ وَإِن يَسْتَغِيثُوا يُغَاثُوا بِمَاءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِي الْوُجُوهَ ۚ بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَاءَتْ مُرْتَفَقًا “.

অর্থাৎ : ” আমি সীমালংঘনকারীদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি অগ্নি, যার বেষ্টনী তাদেরকে পরিবেষ্টন করে থাকবে। তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে দেওয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানীয়; যা তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে; কত নিকৃষ্ট সেই পানীয় এবং কত নিকৃষ্ট সেই (অগ্নির) আশ্রয়স্থল “। (কাহাফ : ২৯)

 

খাবাল নদীর পানিঃ

আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেন, ” যে ব্যক্তি মদ পান করবে সে ব্যক্তির ৪০ দিনের নামায কবুল হবে না। কিন্তু এরপর যদি সে তওবা করে, তবে আল্লাহ তার তওবা গ্রহণ করে নেবেন। অন্যথা যদি সে পুনরায় পান করে, তাহলে অনুরূপ তার ৪০ দিনের নামায কবুল হবে না। যদি এর পরেও সে তওবা করে, তবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করে নেবেন। অন্যথা যদি সে তৃতীয়বার পান করে, তাহলে অনুরূপ তার ৪০ দিনের নামায কবুল হবে না। কিন্তু এর পরেও যদি সে তওবা করে, তবে আল্লাহ তার তওবা গ্রহণ করে নেবেন। অন্যথা যদি সে। চতুর্থবার তা পান করে, তাহলে অনুরূপ তার ৪০ দিনের নামায কবুল হবে । কিন্তু এরপরে সে যদি তওবা করে, তবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন না, তিনি তার প্রতি ক্রোধান্বিত হন এবং (পরকালে) তাকে খাবাল নদী থেকে পানীয় পান করাবেন “।

ইবনে উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল, হে আবু আব্দুর রহমান! খাবাল নদী’ কি? উত্তরে তিনি বললেন, ‘তা হল জাহান্নামবাসীদের পুঁজ দ্বারা প্রবাহিত (জাহান্নামের) এক নদী।” (তিরমিযী, হাকেম, নাসাঈ)

 

➤➤ জাহান্নামের পোষাক –

জাহান্নামীদের পোষাক হবে আল-কাতরার অথবা গলিত পিতলের এবং আগুনের। মহান আল্লাহ বলেন,

 

” وَتَرَى الْمُجْرِمِينَ يَوْمَئِذٍ مُّقَرَّنِينَ فِي الْأَصْفَادِ. سَرَابِيلُهُم مِّن قَطِرَانٍ وَتَغْشَىٰ وُجُوهَهُمُ النَّارُ “.

অর্থাৎ : ” সেদিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শিকল দ্বারা বাঁধা অবস্থায়। তাদের জামা হবে আলকাতরার (বা গলিত পিতলের) এবং অগ্নি আচ্ছন্ন করবে তাদের মুখমণ্ডল “। (ইব্রাহীম : ৪৯-৫০)

 

এবিষয়ে বল্লাহ্ তায়া’লা আরো বলেন,

” فَالَّذِينَ كَفَرُوا قُطِّعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِّن نَّارٍ يُصَبُّ مِن فَوْقِ رُءُوسِهِمُ الْحَمِيمُ. يُصْهَرُ بِهِ مَا فِي بُطُونِهِمْ وَالْجُلُودُ. وَلَهُم مَّقَامِعُ مِنْ حَدِيدٍ. كُلَّمَا أَرَادُوا أَن يَخْرُجُوا مِنْهَا مِنْ غَمٍّ أُعِيدُوا فِيهَا وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ “.

অর্থাৎ : ”  সুতরাং যারা অবিশ্বাস করে তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আগুনের পোশাক; তাদের মাথার উপর ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি। যার ফলে তাদের উদরে যা আছে তা এবং তাদের চর্ম বিগলিত করা হবে। আর তাদের জন্যে থাকবে লৌহনির্মিত হাতুড়িসমূহ। যখনই তারা যন্ত্রণাকাতর হয়ে জাহান্নাম হতে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে; আর (তাদেরকে বলা হবে,) আস্বাদ কর দহন-যন্ত্রণা “। (হজ্জ :১৯-২২)

 

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park